কালো বিড়ালের ইতিকথা

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ৯, ২০১৫ সময়ঃ ৪:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৩৭ অপরাহ্ণ

জাহিদ বিন মনির


black-catকয়েক হাজার বছর আগের কথা। তখন মিশরে সব রঙের বিড়ালই সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করত। সেই সময় বিড়াল হত্যা করলে মৃত্যু দন্ডাদেশের মত ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হত। তখনও বিড়লের রং নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার চালু হয়নি।

এর কয়েক সহস্রাব্দ পরের ঘটনা। যখন মানুষের মনে ধারণা জন্মালো যে, পৃথিবীতে আসার জন্য প্রত্যেক দেব দেবীই প্রতীকি রূপ ধারণ করেন। যেমন, দেবী ডায়নার প্রতীক ছিলো বিড়াল।  তারপর, ১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে, পোপ গ্রেগরী (নবম) একটি কালো বিড়ালকে কফিনে পুরে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এবং ঘোষণা দেন, শয়তানের একটি অবতার হল এই কালো বিড়াল।

এই ঘোষণার পরই, পোপের প্রতি নিষ্ঠা প্রমাণ করতে উৎসুক খ্রিষ্টানরা সব কালো বিড়ালকে ধরপাকড় শুরু করে দেয় এবং গ্রাম্য অনুষ্ঠানে কালো বিড়ালকে জীবিত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারে। তখন অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে, ১৪ শতকের দিকে ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে কালো বিড়াল প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গিয়েছিলো।

পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে এই ধারণার শাখা গজায়। ধারণা করা হয়,  কালো বিড়াল শয়তানের নেতৃত্ব দেয়। তাছাড়া ডাইনীরা পৃথিবীতে কালো বিড়ালের ছদ্মবেশ নিয়ে আসে। একটি কালো বিড়াল সাত বছর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে এবং তারপর-ই তার ডাইনী রূপ দেখায়। এমনকি এই ধারণার কারণে, তৎকালীন সময়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার জন্য একটি কালো বিড়ালের পালক হওয়াই যথেষ্ট ছিলো!

২০১৩ সালে কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ বিড়ালের চেয়ে কালো বিড়ালের ৪-৬ দিন বেশি সময় লাগে তার মালিক খুঁজে পেতে। শুনতে খারাপ লাগলেও ৭০ শতাংশ কালো বিড়ালের জন্য কোন আশ্রয়দাতা মিলে না।
এক্ষেত্রে গবেষকরাও নিশ্চিত বলতে পারেন না ঠিক কী কারণে, আশ্রয়প্রাপ্ত মালিকদের কাছে কালো বিড়াল কম আকর্ষণীয়। হতে পারে, পূর্ববর্তী সেই কুসংস্কারের দায় আজো তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

শুধু ইউরোপেই নয় এশিয়াতেও কালো বিড়াল অশুভ বলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে বাঙালীদের কাছেও কালোবিড়াল নিয়ে কম রহস্য নেই । তবে বর্তমান সময়ে কোনো কোনো স্থানে কিছু ব্যতিক্রম ধারণাও দেখা যায়।

ব্রিটেনে ব্ল্যাক ক্যাট মানে হলো সৌভাগ্যের প্রতীক। স্কটিশদের বিশ্বাস হলো যে, ঘরে অদ্ভুত কালো বিড়াল আগমন উন্নতির প্রতীক। আরো বিশ্বাস করা হয় যে, যদি কোন মহিলার কালো বিড়াল থাকে, তবে তার অনেক শুভাকাঙ্খী থাকবে।কালো বিড়াল

তবে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এখনো কালো বিড়ালকে দেখা হয় খারাপ লক্ষণ হিসেবে। কালো বিড়াল পোষা মানে ডাইনী বা শয়তানের পরিচিত ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া। অন্যান্য সংস্কৃতিতেও একে খারাপ ভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়।

বিশেষ করে জুয়াড়িদের দুনিয়ার সবাই কালো বিড়ালকে ভীষণ ভয় পায়। তারা মনে করে যদি বাড়ি থেকে বেরুবার সময় ক্যাসিনোতে বা আড্ডায় যাওয়ার রাস্তায় কালো বিড়াল দেখা যায় তবে বাড়ি ফিরে যাওয়াই উত্তম। বেশির ভাগ জুয়াড়িই মনে করে কালো বিড়াল মানে মন্দ ভাগ্য।

রূপকথার গল্প কাহিনীতে কালো বিড়াল মানুষের রূপ ধারণ করে ডাইনী, শয়তান বা দানবের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে। এজন্য মধ্যযুগেও কালো বিড়াল হত্যা করা হত বিপুল পরিমাণে। তবে কালো বিড়লের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক ঘটনা হলো-

*টিডলস রয়েল নেভির একটি বিখ্যাত জাহাজ আছে যেখানে কালো বিড়ালের অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতাকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। তাই জাহাজে ‘জাহাজ বিড়াল’ রাখা হয়। জেলের বউরা তাদের বাসায় কালো বিড়াল পোষে তাদের স্বামীর যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য।

*জ্যানেট জ্যাকসনের ব্ল্যাক ক্যাট নামের গান যা কিনা বিলবোর্ডের ১ম স্থানে উঠে আসে।
*এছাড়াও ব্ল্যাক ক্যাট একটি জনপ্রিয় রাশিয়ান গান। গানটি গেয়েছিলেন ইউরি সোলস্কি ও মিখাইল তানিচ।

তবে যে যাই বলুক, কালো বিড়াল আমাদের দুর্ভাগ্যের প্রতীক নয় বরং তাদের কালো রং তাদের নিজেদেরই দুর্ভাগ্যের বার্তা বহন করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G