শীতে নিপাহ ভাইরাস থেকে সাবধান

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ৭, ২০১৫ সময়ঃ ৪:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

date

শীত এসে গেছে। তাই ভাপা পিঠা আর খেজুরের রস খাওয়ারও ধুম পড়ে যাবে পল্লীর ঘরেঘরে। এই আমাদের চিরায়ত বাংলার চিরচেনা রূপ। তবে সময় পাল্টেছে। তার সাথে পাল্টে গেছে অনেককিছু। বাজারে ভেজাল খাবারে ভরপুর। কিছু খাওয়ার আগে এখন ভাবতে হয় নানানকিছু। এই ধরুননা, খেজুরের রসের কথা। আমাদের বাবা-চাচাদের মুখে খেজুর গাছ থেকে চুরি করে খেজুর খাওয়ার কত গল্পই না শুনেছি। কিন্তু এখন কি আমরা সেভাবে খেতে পারছি? মোটেও না।

এখন শুনতে হচ্ছে নিপাহ ভাইরাসের কথা। খেজুর গাছ থেকে কলসি চুরি করে খেজুরের রস খাওয়ার দিন শেষ। চলুন জেনে নিই নিপাহ ভাইরাসের আদ্যপান্ত।

নিপাহ ভাইরাসের বাহক প্রধানত বাদুড়। শীতকালে বাদুড় যখন খেজুরের কাঁচা রস মুখ দিয়ে খায় তখনই ঐ রসের মধ্যে এই নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আর কোনো মানুষ যখন সেই রস খেতে যায়; তখন তার মধ্যেও এ ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়। একইভাবে বাদুড়ে খাওয়া ফলের অংশটি যদি কোনো মানুষ খেয়ে ফেলে তখনও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ইনস্টিটিউট ফর ইপিডেমিওলোজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ও আইসিডিডিআরবি এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, রাতেরবেলায় বাদুড় খেজুর গাছে বাঁধা-হাঁড়ি অথবা নল থেকে রস খাওয়ার সময় লালার সঙ্গে নিপাহ ভাইরাস মিশ্রিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে, সেই রস যারা খায় তারাই নিপাহ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয় এবং এক পর্যায়ে মারাও যায়। এই রোগকে মস্তিষ্ক প্রদাহ বা এনসেফাইটিস হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে দু:সংবাদ হল এই যে, এখনও এই রোগের কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি।

এই রোগের লক্ষণ:

– জ্বর হয়
– যেকোনো সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে
– খিঁচুনি হয়
– বমিসহ মাথাব্যথা হয়
– শ্বাস নিতে কষ্ট হয়

প্রথম যেখানে এর উৎপত্তি:

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম এই ভাইরাস দেখা দেয়। সেখানে নিপাহ নামক গ্রামে এর প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে বলে ভাইরাসটিকে ‘নিপাহ’ নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় অজ্ঞাত রোগ হিসেবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে। এখানে গত কয়েক বছরে শীতকালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেরই মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়:

১। যেহেতু নিপাহ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই, তাই আমাদের উচিত সচেতনতার মাধ্যমে ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা।
২। কাঁচা খেজুরের রস পান না করা এবং পরিত্যক্ত ফল না খাওয়া।
৩। যেহেতু রোগটি সংক্রামক; তাই এ রোগে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সৎকার বিশেষ সতর্কতার সাথে করতে হবে।
৪। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার না করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
৫। রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৬। রোগীর কফ ও থুতু যেখানে সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৭। রোগীর সঙ্গে একই পাত্রে খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না।
৮। রোগীর শুশ্রুষা করার সময় মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে নিতে হবে।
৯। যে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, সে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার পর আরো অন্তত ২১  দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে  যেতে হবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G