শুধু ক্রেতা নয়, কর্মীও ঠকাচ্ছে সুপারশপ আগোরা

প্রকাশঃ আগস্ট ১২, ২০১৬ সময়ঃ ১:২৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

agora_protikhon.com

শুধু ক্রেতাদের নয়, নিয়মিতভাবে নিজেদের কর্মীদেরও ঠকিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অন্যতম মেগা চেইন সুপারশপ আগোরা। এখানে বিক্রয়কর্মীরা টানা ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। অথচ কারও বেতনই ৮ হাজার টাকার বেশি নয়। আবার কারো কারো বেতন তারও নিচে। শুধু কি তাই, চাকরি শুরুর পর বাড়ে না বেতনও, বোনাস চাওয়া নাকি অপরাধের সামিল । চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে এখাণকার বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, লাভ করে যাচ্ছেন মালিকপক্ষ, কিন্তু আমরা এত পরিশ্রম করেও নিজেদের তেমন কোনো উন্নতি করতে পারছিনা। আর তারই প্রভাব পড়ছে ক্রেতাদের প্রতি আমাদের সেবার ক্ষেত্রেও।

রাজধানীতে আগোরার বেশ কয়েকটি ব্রাঞ্চ রয়েছে। আগোরার একটি ব্রাঞ্চের বিক্রয়কর্মী রাশেদা(ছদ্মনাম)জানান, ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি আগোরায় চাকরি করছেন। এখানে তাকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। চাকরির সময় ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন, এখনো বেতন পাচ্ছেন ৬ হাজার ৫০০ টাকা। গত দুই বছরে তার বেতন এক টাকাও বাড়েনি। বরং পরিশ্রম বেড়েছে বহুগুন।

রাশেদার স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার আয়ও যে খুব বেশি তা কিন্তু নয়। এই স্বল্প আয়ের মধ্যে দিয়েও আবার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকেও সাহায্য করতে হয়। দুই বছরের চাকরিতে আয়ের কোনো উন্নতি নেই।

রাশেদা আরও বলেন, আগোরায় নিয়োগের সময় বলা হয়েছিল প্রতিবছর বেতন বাড়বে। ভালো কাজের জন্য বোনাসও দেওয়ার কথা। কিন্তু তার কোনোটাই এখন পর্যন্ত হয়নি।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে জেনেটিক প্লাজা সংলগ্ন রয়েছে আগোরার একটি ব্রাঞ্চ। এখানকার একজন বিক্রয়কর্মী জানান, গত তিন বছর ধরেই তিনি সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন। অথচ কথায় কথায় দূর্ব্যবহার সহ্য করতে হয় তার এখানে। প্রতিদিন সকালে এসে পণ্য মোছা থেকে শুরু করে তার কাজ শুরু হয়। এরপর প্রতিটি পণ্যের হিসাব রাখা এবং ক্রেতাদের প্রতি নজর রাখা, ট্যাগ লাগানো থেকে শুরু করে সবই করতে হয়। দুপুরে খাবারের জন্য আধ ঘণ্টা সময়ও ঠিকমত দেওয়া হয় না। বিকেলেও নেই নাস্তা বা চা পানের সুযোগ। আর রাতে আবার সব হিসাব শেষে মাল গুনে হিসাব বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়।

এই বিক্রয়কর্মী আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। বলা হয়, কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন তাই খরচ কমাতে এই ছাঁটাই। এছাড়াও যারা আছি, তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতির কোনোটিই পূরণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

সীমান্ত স্কয়ার আগোরা ব্রাঞ্চের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, দিন দিন আগোরার মান কমে যাচ্ছে। মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালেই নিম্নমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ক্রেতার সংখ্যাও কমছে। অথচ কর্তৃপক্ষ বিক্রি বাড়াতে আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে।

ওই বিক্রয় কর্মী আরও বলেন, কাঁচাপণ্য খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু এখানে দেখা যায় প্রায়ই কিছু বাসি পণ্য নিয়ে অভিযোগ তোলেন ক্রেতারা। এর জন্যও আমাদের দোষী করা হয়!

এই ব্রাঞ্চের ক্যাশে চাকরিরত একজন কর্মী বলেন, এখানে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ১০ হাজার টাকা বেতনে কেউ নিয়োগ পেলে সেই বেতনেই থাকতে হয়। তার থেকে বেতন আর বাড়ে না। আবার হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও নেই কোনো সাধুবাদ। এভাবে আর যাই হোক ব্যবসা হয় না। কারণ কর্মীরা সন্তুষ্ট না থাকলে সেবার মান বাড়ে না।

তিনি আরও বলেন, এখানে মূল্য নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় দেখা যায় তা মানের তুলনায় খোলা বাজারের চেয়ে বেশি। তখন ক্রেতারা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন বা পণ্য ফিরিয়ে দিতে চান। আবার কর্তৃপক্ষের চাপ থাকে সেই পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে বিক্রি করতে। এটা আমাদের জন্য স্বভাবিক ভাবেই খুবই কঠিন কাজ। একে বলা যায় লোক ঠকানো।

প্রতিক্ষণ/এডি/এসটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G