WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
‘শোয়ের সময় সন্ধে ৬টা। অথচ বিকেল সাড়ে তিনটেতেই নন্দনে ঢোকার লাইন ছাড়িয়ে গিয়েছে শিশির মঞ্চের গেট। দুপুর ১টার শোয়ের ক্ষেত্রেও একই রকম ভিড়, উন্মাদনা। বিগত কয়েক দিন ধরেই নেটদুনিয়ায় কথা ঘুরছিল— ‘হাওয়া বইবে কলকাতায়’। বাংলাদেশ চলচিত্রের নতুন দিগন্ত সূচনা করা ‘হাওয়া’ সিনেমা কলকাতা মাতিয়ে রেখেছে, এভাবেই আজ কলকাতার সেরা অনলাইন আনন্দবাজারে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
পত্রিকাটির লেখায় এদেশের বাংলা ছবির প্রাণ ফুঁটে উঠেছে। আনন্দবাজারের প্রকাশ-অনেক মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, জানতে চেয়েছেন কী ভাবে দেখা যেতে পারে এই ছবি। উদ্গ্রীব দর্শকের ঢল সামলাতে গিয়ে হিমসিম পুলিশ, সিকিউরিটি গার্ড, ছবি শুরু হতে হতে সাড়ে ছ’টা। অনেক ক্ষণের অপেক্ষার পর যখন আলো নিভল হলে, নন্দন ফেটে পড়ছে সমস্বর উল্লাসে। এই উল্লাসের বহর অবশ্য চলল গোটা ছবি জুড়েই, একাধিক সংলাপে হাসির কলরোল, সিটি, হাততালি কিছুই বাকি থাকেনি। কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দনে এমন অভিজ্ঞতা অচেনা বললেও অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু এই পরিমাণ উল্লাসের কতটুকু প্রাপ্য ‘হাওয়া’ ছবির?
মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম ছবি ‘হাওয়া’। পোস্টার, ট্রেলার, প্রচার— সব কিছুই ইঙ্গিত দিয়েছিল একটি টানটান থ্রিলারের। অভিনয়ে তারকাখচিত সব নাম। ক্যামেরা ও সিনেমাটোগ্রাফি যে নজরকাড়া হতে চলেছে, তার ঝলক মিলেছিল ট্রেলারেই। এ ছাড়া ছবির গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’র জনপ্রিয়তাও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গত কয়েক মাস যাবৎ আপামর বাঙালির মুখে মুখে। তবে দু’ঘণ্টা দশ মিনিট জুড়ে পর্দায় মুগ্ধ হওয়ার মতো দৃশ্য ও ফ্রেম যেমন মিলল, তেমন দুর্বলতাও চোখে পড়ল বিস্তর। একাধিক বুদ্ধিদীপ্ত সিনেম্যাটিক সম্ভাবনা তৈরি করে নিজেই ভেঙে দিল ‘হাওয়া’।
দর্শকের ছবি দেখার অভ্যস্ত চোখকে সামান্য ধাক্কা দিয়েই শুরু হয় সুমনের ছবি। ‘হাওয়া’ শুরু হয় অসম্ভব ঝাঁকুনি দিয়ে। প্রথমেই পর পর কয়েকটি শটে ক্যামেরা দ্রুত গতিতে প্যান করতে থাকে। একাধিক মানুষের অস্বাভাবিক ক্লোজ-আপের ছেঁড়া ছেঁড়া ইমেজ, মাছ কেনাবেচার ঝটিতি কিছু ফ্রেম, কখনও আবার ক্যামেরায় নীল সাগর, বিশাল আকাশে পাখি উড়ে যাওয়ার দৃশ্য, এবং এ সবের সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত জনতার কোলাহল: প্রথম দুই-তিন মিনিটে দর্শক যখন ভেবে কূল পাবেন না কী হচ্ছে, তত ক্ষণে নৌকা ছেড়ে দিয়েছে মাঝদরিয়ার উদ্দেশে। নন্দনের বিরাট পর্দা জুড়ে তখন ড্রোন শটে অনন্ত সমুদ্র ও তার মাঝে একটি নৌকা। পর্দায় ভেসে উঠছে ছবির নাম।
এর পর ছবি ধীরে ধীরে পরিচয় করায় জেলেদের সঙ্গে। অনেক আশা নিয়ে তারা সমুদ্রে বেরিয়েছে মাছ ধরতে। এরাই ছবির মূল চরিত্র, গল্পের চালক। চান হল নৌকার ক্যাপ্টেন। বাকি সকলে— উর্কেস, পার্কেস, নাগু, মোরা, ফনি, এজা— সবাই চানের কথামতো চলে। কেবল থেকে থেকে বেঁকে বসে টাকার সমান ভাগ চাওয়া ইঞ্জিনঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইবা। তবে চান ক্ষুরধার। বাকি সকলকে বুঝিয়ে ইবাকে সে দাবিয়ে রাখতে পারে সহজেই। গল্পের মোড় ঘোরে এক রাতে জালে এক যুবতী ধরা পড়ার পর। সেই মেয়ে কথাও বলে না, উত্তরও দেয় না। বোটে মেয়েদের থাকার নিয়ম নেই। নৌকাবোঝাই পুরুষ মাঝিমাল্লাদের মধ্যে হঠাৎ এক জলজ্যান্ত নারীর উপস্থিতি এক নতুন উপদ্রব। তবে নাম-পরিচয়হীন এই যুবতীর আকস্মিক আগমন তার চেয়েও বেশি রহস্যের। বস্তুত, এখান থেকেই দানা বাঁধে ছবির মূল রহস্য, যা ছবি এগোনোর সমান্তরালে খানিক অলৌকিকতার দিকে যাত্রা করে। সঙ্গে আসে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের অতীত এক জগৎ।
প্রাথমিক পর্ব জুড়ে মূল যে ভাষ্য বার বার উঠে আসে সেখানে রহস্য কম, যৌন উৎকণ্ঠা বেশি। সামগ্রিক ভাবে একটি পুরুষ পরিসরে হঠাৎ এই যুবতীর আবির্ভাব পরবর্তী চাপান-উতোরের উৎস। কারণ, প্রায় সকলেই চায় তার শরীর। তার নিছক অস্তিত্বটুকুও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, পুরুষের দৃষ্টিতে সে কেবল সম্ভোগের বস্তুমাত্র। যে কোনও পুরুষ-শাসিত পরিসরেই একটি মহিলার এই যে উদ্বেগ ও অস্বস্তি তা বিভিন্ন দৃশ্যে ‘হাওয়া’ ধরে রাখে সযত্নে। যুবতীর মুখে কোনও সংলাপ না থাকায় তার ভাবপ্রকাশের ভাষা অনেকটাই শারীরিক— সে হাত-পা নেড়ে, মুখ-চোখের অঙ্গভঙ্গি করে জানায় মনের ভাব, নিজের জন্য সে সৃষ্টি করে নেয় এক স্বকীয় ভাষা, যা পুরুষের বোধগম্যতার বাইরে। অসহায় চান কবুল করে যে, সে কিছুই বুঝতে পারছে না তার কথার মানে। এ পর্যন্ত ‘হাওয়া’ পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক চমৎকার রাজনৈতিক সমালোচনার ভাষ্য তৈরি করে, যা চিরাচরিত ধারার বাইরে। কেবল বিবিধ ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল দিয়ে পুরুষের বাসনা-লালিত উগ্র দৃষ্টির প্রতি দর্শককে সচেতন করেই ‘হাওয়া’ থেমে থাকে না, এই ছবি নিয়ে আসে ভাষা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমাজ-স্বীকৃত যে ভাষায় আমরা কথা বলি, বিনিময় করি মনের ভাব, তা পুরুষ-নির্মিত, পুরুষের জন্যই ব্যবহৃত। নারীর নিজস্ব অভিজ্ঞতার প্রকাশ এই ভাষায় কতটা সম্ভব বহু বছর ধরে মানবীচেতনাবাদীরা এই প্রশ্ন তুলে আসছেন শিল্পে ও সাহিত্যে। ‘হাওয়া’ তার সেই প্রশ্নকে নিয়ে আসে পর্দায়। তৈরি হয় এক নতুন সম্ভাবনা। অথচ, সেই সম্ভাবনাকে এই ছবি নিজেই ধ্বংস করে।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই যুবতীর মুখে সংলাপ আসে, জানা যায় তার নাম গুলতি, পরিচয় বেদেনি। জলের মধ্যে গলা অবধি ডুবে রাতের আঁধারে সে ইবাকে জানায়, নৌকা ডুবোতে তার আবির্ভাব। দেবীর নির্দেশ। এর পর একে একে নৌকায় অনিষ্ট— জালে মাছ না পাওয়া, ইঞ্জিন খারাপ, তেলের ট্যাঙ্ক ফুটো— এমন অনেক আশ্চর্য ঘটনা পর পর ঘটে যেতে থাকে। রহস্যও মূলত দ্বিতীয় পর্বে ঘনীভূত হয় ক্রমাগত অস্বাভাবিক কিছু ঘটনার ধারাবাহিকতায়। গতি বাড়ে দ্বিতীয়ার্ধেই। ছবি দেখতে দেখতে দর্শকের কখনও মনে পড়বে স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের বিখ্যাত ‘রাইম অব দি এনশিয়েন্ট মেরিনার’-এর কথা, বিশেষ করে নৌকার শালিক পাখিটিকে যখন শেষের দিকে উন্মাদপ্রায় চান মেরে ফেলে, তখন অ্যালবাট্রসের কথা মনে আসে। ছবির শেষ আবার মিলিয়ে দেয় বেহুলা-লখিন্দরের গল্পের সঙ্গে, ‘চান’ নামটির সঙ্গেও অদ্ভুত মিল মনসামঙ্গলের চাঁদের।
সূত্র : আনন্দ বাজার (কলকাতা)