মাছ চাষে সফল আব্দুল মজিদ

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৩৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৯ অপরাহ্ণ

কৃষি প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

fiমাত্র চার বিঘা আবাদি জমি। সেই জমির আয় দিয়েই সাত সদস্যের সংসার। তার অভাব যেন নিত্যসঙ্গী এ পরিবারের। এই অভাবের সাথে যুদ্ধ করে দুবেলা দু মুঠো ভাতের যোগাড় করতে বাবা হিমশিম খেতেন। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে আমাকেও রোজগারে নামতে হয়। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।

চাকরি নিলাম ইটভাটার ম্যানেজার হিসেবে। দীর্ঘদিন সেখানে চাকরি করি। যে বেতন পেতাম তা দিয়ে কোনো রকমে চলত। মনে মনে সব সময় কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতাম নিজের ভেতরে। তাই চাকরির পাশাপাশি ২০০৫ সালে মাছ চাষে নেমে পড়ি।

৩৮ হাজার টাকা দিয়ে ইটভাটার পাশেই একটি ৫/৬ বিঘার পুকুর লিজ নিয়ে প্রথমে মাছ চাষ শুরু করি। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে মোটামুটি লাভের মুখ দেখি। সেই উৎসাহে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করি মাছ চাষ। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমাকে। সময়ের ব্যবধানে আজ আমি নিজেকে সফল মাছ চাষি হিসেবে মনে করি”। এভাবেই নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পরিচিত মুখ আব্দুল মজিদ।

বর্তমানে তার কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার ফলে প্রায় বিশ বিঘা জমি ক্রয় করে মাছ চাষের পাশাপাশি করছেন কৃষি কাজ। স্থানীয় মাছ চাষিদের মধ্যে নিজেকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

২০০৯ সালের দিকে আব্দুল মজিদ আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পরিকল্পনা করেন। প্রয়োজন হয়ে পড়ে একাধিক পুকুরের। পরিকল্পনানুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ প্রায় ছোট বড় ১৬টি পুকুরও লিজ নিয়ে নেন। এসব পুকুরে নানা প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেন। আয়ও বাড়তে থাকে। তার এই মাছ চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকবলের প্রয়োজন দেখা দেয়। বর্তমানে তার ১৬ জন কর্মচারি বাৎসরিকভাবে পুকুরের কাজে নিয়োজিত। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই দুচারজন অতিরিক্ত লোক মাছ আনা-নেয়া এবং মাছ ধরাসহ বিক্রির কাজে নিয়োজিত।

fishবর্তমানে তিনি এককভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৩টি ও সরকারি ৩টি পুকুরে রকমারি প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। এর মধ্যে বেশীরভাগ পুকুরে রুই, মৃগেল, কাতলা, পাঙাস, সরপুটি সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছেরমাছ চাষ করেন।

এছাড়াও তিনি ২টি পুকুরে রেনু পোনা উৎপাদন করছেন। মাছ চাষ বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার কাছে আসেন, তিনি তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আব্দুল মজিদ যখন কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়েন তখন দ্রুত উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার মাছের খামার থেকে সংসারের খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে আয় আসছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

আব্দুল মজিদ জানান, আগের দিনে মাছ চাষ করে যে কেউ অনেক বেশি লাভবান হতেন। অথচ এখন আর কিছুতেই সেটা সম্ভব নয়। আগের তুলনায় লাভ নেমে এসেছে অর্ধেকে। সবকিছু দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছ কয়েকগুন।

মাছের খাবারের দাম বেশি অথচ সে হারে বাজারে মাছের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগও মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সবকিছু মিলেই মাছ চাষিরা আগের মত ভাল অবস্থায় নেই।

তিনি আরো জানান, আমাদের কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলোকে এককভাবে সমাধান করতে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া মাছ চাষে অনেক পুঁজির প্রয়োজন হওয়ায় অনেক সময় পুঁজি স্বল্পতা দেখা দিলেও ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ না দেয়ায় চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়
মহাজনদের কাছ থেকে। তাই আমাদের দাবি ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে আমাদেরকে মাছ চাষের উপর ঋণ প্রদান করে। আর এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ তিনি আশা করেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G