WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

বিজয় ১৯৭১ : বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বিজয় ১৯৭১ : বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বিজয় ১৯৭১ : বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বিজয় ১৯৭১ : বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সেই মাহেন্দ্রক্ষণে

বিজয় ১৯৭১ : বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সেই মাহেন্দ্রক্ষণে

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৪, ২০২২ সময়ঃ ১২:৩৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩০ অপরাহ্ণ

সংগ্রহ

বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ, মহান বিজয় দিবস। এইদিনে রমনা রেসকোর্স ময়দানেসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতি বিজড়িত দিনের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি দেশের এক-একটা এলাকায় ভিন্ন-ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছিলো। দেশবাসীর মধ্যে বিজয়ের উচ্ছ্বাস-আনন্দ, প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রতীক্ষা, ধ্বংসস্তুপ, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর স্বজন হরানোর শোকের ভেতরও এক পুলকিত স্বস্থির আবহ বিরাজ করেছিলো সেই দিনটিতে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) জেলা সংবাদদাতাগণ তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন, তাদের জেলায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি কিভাবে ধরা দিয়েছিলো, কেমন ছিলো সেই দিনটি, তারা মুখোমুখি হয়েছেন সেদিনের রণাঙ্গণ ফেরৎ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আর প্রতক্ষ্যদর্শীদের কাছে। ময়মনসিংহ : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ পাকহানাদার বাহিনীর কবল মুক্ত হয়। তার আগে ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদারমুক্ত হয়। এদিন থেকেই এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের মহামিলন ঘটতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে প্রিয়জন হারানোর ব্যাথা ভুলে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে মুক্ত ময়মনসিংহে হাজার-হাজার নারী-পুরুষ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে শহর। রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানায় মানুষ। নানাভাবে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। স্থানীয় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার উপস্থিতিতে উঠানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা।

সেদিনের বিজয় মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে দখলদার পাকবাহিনী ময়মনসিংহ ছেড়ে টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকায় পালিয়ে গেছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ১০ ডিসেম্বর ভোরের সূর্য উঠার সাথে-সাথে আকাশ বিদারী জয়বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয় পূরাতন ব্রহ্মপুত্র বিধৌত মহুয়া মলুয়ার জনপদ ময়মনসিংহ। অবরুদ্ধতার অবগুন্ঠন তুলে মুক্ত আকাশে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলেন মুক্তিকামী জনতা। আকাশছোঁয়া গরিমা নিয়ে মুক্ত আকাশে পতপত করে উড়তে থাকে রক্তে কেনা স্বাধীন দেশের লাল-সবুজের পতাকা। একাত্তরের ২৩ এপ্রিল জামালপুর হয়ে ময়মনসিংহে প্রবেশ করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী। স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধী দালালচক্রের সহযোগিতায় শিল্প-সংস্কৃতির চারণভূমি ময়মনসিংহ দখল করে নেয় শত্রুসেনার দল। চালায় হত্যা-লুন্ঠন- ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন নিপীড়ন।

ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বাসসকে জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সাথে-সাথে সারাদেশের মত ময়মনসিংহবাসী জীবনপণ মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভ্ঞুাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে এখানকার যোদ্ধারা ঝাপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। মুক্তিযু্দ্েধ ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিল ময়মনসিংহ অঞ্চল। বৃহৎ এ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলে কর্নেল আবু তাহের। আবার বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলকে মিত্রবাহিনীর এফজে সেক্টর বলা হত। এফজে সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সান্তসিং (বাবাজী)।

জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দখলদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ৩ নভেম্বর হালুয়াঘাটের তেলীখালীতে বৃহৎ যুদ্ধ হয়। ৫ ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে ১২৪ জন পাকসেনা ও ৮৫ জন রাজাকার মারা পড়ে। একজন পাকসেনা ও দুইজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এতে ৮জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ২১জন মিত্রবাহিনীর সদস্য শাহাদাত বরণ করেন। ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় হালুয়াঘাট উপজেলা। এর ধারাবাহিকতা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী শক্ত মনোবল নিয়ে শত্রুর ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি করতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর ফুলপুরের সরচাপুরে যৌথবাহিনীর সাথে দখলদার পাকবাহিনীর সাথে বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এটিই ছিল মূলত জেলায় সর্বশে সম্মুখযুদ্ধ। পরবর্তীতে একে একে জেলার একেকটি অঞ্চল দ্রুত মুক্ত হতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর পালিয়ে যায় পাকবাহিনী। ১০ ডিসেম্বর মুক্ত ময়মনসিংহ শহরে বিনা বাঁধায় প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা। সার্কিট হাউজের মাঠে সম্মিলিত হয়ে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জেলাকে মুক্ত ঘোষণা করেন।

মরণপণ যুদ্ধ করে স্বদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনা মুক্তিসেনাদের একজন রেফাজ কোম্পানির টু আইসি সুবেদার ইব্রাহিম হোসেন জানান, ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে চূড়ান্ত মুক্তি সনদ স্বাক্ষর হবার দিন সকলের মাঝেই এক নতুন আনন্দের শিহরণ বইতে থাকে। যুদ্ধকালীন সময়ে দীর্ঘকালের প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছেদে থাকা ও স্বজন হারানোর সব কষ্ট ভুলে আমরা স্বাধীন দেশ পাবার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠি।

যেখানেই রেডিও আছে সেখানেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক ভিড় বাড়তে থাকে। ছোট-বড় মিছিল নিয়ে মুক্তিকামী জনতা শহরমুখী হতে থাকেন। একজন আরেকজনকে দেখেই কোলাকোলি করতে থাকেন। জয়বাংলার বজ্রতুল্য উচ্চারণ সবার কন্ঠে। স্মরণকালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিজয় মিছিল। অগ্নিদীপ্ত উল্লাসে বিজয় আনন্দে মেতে উঠার প্রয়াস দেখায় ময়মনসিংহবাসী। কেউ কেউ আনন্দে কাঁদতে থাকেন। এর আগে ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ অঞ্চল মুক্ত হওয়ায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন ভারত বা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া রাজনৈতিক নেতাদেরও অনেকেই এলাকায় ফিরে আসেন। এতে উৎসবের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। অনেকেই পতাকা হাতে নিয়ে তা উড়িয়ে দৌঁড়াতে থাকেন। তবে সেদিনের সেসব বিষয় আজকের প্রেক্ষাপটে মুখে বলে পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, যুদ্ধের মাঠে থেকে যুদ্ধের গতিবিধি দেখেই নভেম্বর মাসের শেষে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারছিলাম যে আমরা নিশ্চিত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে আসছি। ডিসেম্বর আসতেই আমাদের মনোবল বহুগুণে বাড়তে থাকে। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর শত্রু হটিয়ে ময়মনসিংহ জেলাকে মুক্ত ঘোষণা করতে সক্ষম হই। সেদিন থেকেই আমাদের মাঝে অপ্রার্থিব আনন্দের রেশ বইতে শুরু করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে মহান স্বাধীনতার চূড়ান্ত সনদ প্রাপ্তি সেইদিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের দৃশ্যপট ছিল এমনই।

বরিশাল: ‘মুক্তি-মুক্তি’ শব্দ উচ্চারণ করে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। মুলত হানাদার বাহিনীর মানসিক পরাজয় ঘটে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মুক্তি বাহিনী আতঙ্কে।
জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, অক্টোবর মাসের শেষের দিকে নদী পথে হানাদার বাহিনীর রসদ অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদার বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই সাতাঁর জানতো না। ফলে নদ-নদী, খাল-বিল বেষ্টিত খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ফরিদপুরে অবস্থানরত হানাদার সৈন্যরা পানিতে ডুবে মরার ভয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও শঙ্কিত থাকতো।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৯নং সেক্টরের সংগঠক ও তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মনজুরসহ প্রায় ৬ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বরিশালে বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।
১৬ ডিসেম্বর নগরীর ওয়াপদা কলোনীতে অবস্থানরত কয়েকশ’ রাজাকার-আলবদর বিপুল সংখ্যক অস্ত্রসহ নুরুল ইসলাম মনজুর, সাব সেক্টর কমান্ডার লে. মাহফুজ আলম বেগ, বেইজ কমান্ডর নিজাম উদ্দিন, প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুল, শেখ কুতুব উদ্দিনসহ নেতৃত্বস্থানীয় বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কছে আত্মসমর্পণ করেন।
১৭ ডিসেম্বর জেলার দোয়ারিকা সেনা ক্যাম্পে প্রায় ২ শতাধিক পাকিস্তানী সেনা সদস্য বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মনজুর, সেক্টর কমান্ডার এমএ জলিল, সাব সেক্টর কমান্ডার লে. মাহফুজ আলম বেগ, বেইজ কমান্ডর নিজাম উদ্দিনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

৯নং সেক্টরের অকুতোভয়, সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা অমিত বিক্রম যুদ্ধ করে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করেন দেশ। দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়াই বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ও স্বাধীন করেন। ৫ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার অভ্যন্তরে অবস্থানরত পাক-হানাদার বাহিনী বরিশাল শহরে সমবেত হয়ে স্টিমারযোগে নদীপথে ঢাকায় যাত্রা করলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজ থেকে বোমা নিক্ষেপ করে কীর্তনখোলা নদীতে স্টিমারটি ডুবিয়ে দেয়। যার ফলে আরোহী সকল হানাদার সৈন্য মৃত্যুবরণ করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন শহর ছাত্রলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী, বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডার ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুল ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এম.জি. কবির ভুলু বাসস’কে জানান, যুদ্ধ শেষে হাসনাবাদ ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ৯ নং সেক্টরের শিবির সমূহ গুটিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি লঞ্চের সাথে ১০টি বিশাল নৌকা সংযুক্ত করে বরিশাল ও পটুয়াখালীর শতাধিক মুক্তিযোদ্ধারা যাত্রা শুরু করেন। পথিমধ্যে বলেশ্বর নদী অতিক্রম করলে বড় ২টি নৌকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে পটুয়াখালীর নদীপথে বিদায় জানিয়ে লঞ্চ থেকে নৌকা ২টি বাধঁন খুলে দেয়া হয়। লঞ্চ ও নৌকার বহর সুন্দরবন অতিক্রম করার পূর্বে শরণখোলায় ৯নং সেক্টর কর্তৃক স্থাপিত শিবিরের মুক্তিযোদ্ধরা আমাদের সম্ভাষন জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর আমাদের লঞ্চ ও নৌকার বহরটি বরিশাল শহরের স্টিমারঘাটে অগ্রসর না হয়ে কড়াপুর ফেরিঘাটে নোঙ্গর করা হয়। কারণ আমাদের কাছে সংবাদ ছিল প্রায় ২ শতাধিক হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্যরা হানাদার বাহিনীর হেড কোয়ার্টার বরিশাল শহরের ওয়াপদা কলোনীতে এলএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করছে। তাদের আক্রমণের আশঙ্কায় আমরা স্টিমারঘাট নৌকা নোঙ্গর না করে কড়াপুর ফেরিঘাটে নোঙ্গর করি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী ও প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুল বাসস’কে আরো জানান, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, সকাল ১০ টায় তৎকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য) কড়াপুর ফেরিঘাটে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের বহরটিকে স্বাগত জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শাহাজান ওমর। ঔইদিন হাসানাত ভাই, মনজুর ভাইসহ বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে নির্মিত ‘শহীদ মিনারে’ ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. মাহফুজ আলম বেগ বাসস’কে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশের বিজয় ঘোষিত হলে বরিশাল শহরমুখী সড়ক পথগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় নৌযানে করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ তাদের দালাল ও রাজাকাররা বরিশাল ত্যাগ করতে থাকে। পাক বাহিনীর শহর ত্যাগের খবরে দীর্ঘ আট মাস অবরুদ্ধ থাকা মুক্তিকামী মানুষ বিজয়ের আনন্দে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে দলে-দলে রাস্তায় নেমে আসে।
বেগ আরো বলেন, নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড ওয়াপদা কলোনীতে পাকিস্তানি সৈন্যদের স্থায়ী ক্যাম্পে লুকিয়ে থাকা পাক সেনা ও তাদের দোসররা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মনজুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুলতান মাস্টার ও আমিসহ বেশ কয়েজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে আত্মসমর্পণ করে।

ফেনী : চুড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের ১০দিন আগেই দীর্ঘ ৮ মাসের গুমোট ফেনীর আকাশে উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ফেনী হানাদারমুক্ত হয়। তাই বিজয়ের বর্ণিল আবহ এখানে একটু আগেই এসেছিল। তবুও চুড়ান্ত স্বাধীনতার প্রহর গুনছিলেন ফেনীর আপামর জনতাও। সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব এভাবেই তুলে ধরলেন বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীরবিক্রম। ১৬ ডিসেম্বর বিবরণ দিতে গিয়ে জাফর ইমাম বীরবিক্রম নিজের লেখা ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ বইতে লিখেন এ জনপদের অনেককথা। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত করে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হই। ৯ ডিসেম্বর নোয়াখালী হানাদার মুক্ত হলে চট্টগ্রামে যাই সদল বলে। ১৫ ডিসেম্বর রাতেও তারা পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধরত ছিলেন। সে রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ছাড়িয়ে নতুনপাড়া (চট্টগ্রাম সেনানিবাস) শত্রুমুক্ত করতে লড়ছিলেন। নিয়াজির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জাতির জীবনে গর্বে ও গৌরবোউদ্দীপ্ত হবার মত একটা সফল মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত।

৭১এ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফেনীর নবাবপুরে পাকিস্তানিদের প্রতিহতের অন্যতম গেরিলা যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হবার পর ফেনীতে যেন নতুন দিন এল। মানুষের চোখে মুখে আনন্দ আর বেঁচে থাকার সন্তুষ্টি স্পষ্ট হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করেছিল শিশু হতে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
রেসকোর্সে পাকবাহিনীর আত্মসমপণের খবর পেয়ে আরও একবার বিজয়ের রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল ফেনীর যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদে। সাধারণ মানুষ সেদিন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠেছিলো। আয়োজন করে আনন্দ মিছিল না হলেও উচ্ছ্বাস ছিলো সবার মাঝেই, বললেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হবার পর আমরা বিএলএফ (মুজিব) বাহিনীর লোকজন দেশ গঠনের কাজে লেগে যাই। উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনাও তেমন ছিল। আমরা যে যার জনপদে কাজে লেগে গিয়েছিলাম।
তবে আমাদের অপেক্ষা ছিলো ঢাকা হানাদার মুক্ত হবার। কুমিল্লা, দাউদকান্দি মুক্ত হবার পর হানাদারদের পতন ঘন্টা বেজে আসছিলো। এর মাঝে বুদ্ধিজীবী অপহরণ ঘটনায় আমরা আরও একবার শংঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়েছিলাম।
সে সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের নিয়ে শংঙ্কিত ছিলেন আবদুল মোতালেবের মত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা বিরাজ করছিলো সব রাজাকারদের আমরা ধরতে পারিনি। অনেক রাজাকারের কাছে ভারি অস্ত্রও ছিলো। তারা অতর্কিত আক্রমণ করে কিনা এ নিয়ে কিছুটা শংকা কাজ করছিল। তবে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শেষ হলেও শুরু হল আরেক যুদ্ধের। সালেহ আহম্মদ নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ফেনী মুক্ত হবার পর যতটা না আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছি, তার চেয়ে স্বজনহারানোর শোকে ম্রিয়মাণ হয়েছি আমরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদে এখানে ওখানে তখনও লেগে আছে ধ্বংসের ছাপ, এক বধ্যভূমি হতে আরেক বধ্যভূমিতে মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের স্বজনদের।

সেদিনে ফেনীর অবস্থার বর্ণনা দিতে আবদুল হাই নামে অপর এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, একদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দ, যা পাওয়া যায় তা দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো, অন্যদিকে বধ্যভূমি হতে প্রিয়জনের মরদেহের সন্ধান, মরদেহ পেলে স্বজনের কুলখানি-চেহলামের প্রস্তুতি। এরকমই ছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ফেনীর পরিস্থিতি।
মেহেরপুর : মেহেরপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ পাতান বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ প্রসঙ্গে তার অনুভূতিতে বলেন- যেহেতু সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত ছিলাম। এজন্য অনেক আনন্দের ও গৌরবের। এই আনন্দ হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যাবে। বলে বোঝাতে পারবো না।

স্মৃতিচারণ করে মজিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ যা এখনও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। সেই ভাষণের পর থেকে অপেক্ষায় সময় কাটত যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য কখন ডাক আসে । তিনি জানান, ১৯৬৬ সালে আনসার বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেয়া ছিল। ৭ মার্চের ভাষণের পর নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছিলেন। কুষ্টিয়ায় যুদ্ধে আহত আব্দুল মজিদ পাতান জানান- নয় মাস ব্যাপি যুদ্ধ শেষে অবশেষে এসে যায় বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৬ ডিসেম্বর সকালে খবর পেলাম পাকিস্তানি সেনারা আতœসমর্পন করছে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। ওই দিনই বাড়ির পথে রওনা দিই। কাঁধে ভারি থ্রি নট থ্রি রাইফেল। আমরা ১৩জন মেহেরপুরের পথে রওনা দিই। ভৈরব নদ পার হতে নৌকায় উঠি। আমরা দেশ স্বাধীনের আানন্দে নৌকায় বসেই ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছিলাম। নৌকার মাঝিও আনন্দ প্রকাশ করছিল। (মাঝির নাম মনে নাই) নৌকা যখন মাঝ নদীতে তখন মাঝি নৌকার হাল ছেড়ে আমাদের রাইফেল ছুয়ে দেখতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নৌকা ডুবি ঘটে। আমাদের সবার হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ, পায়ে ছিল বুট। শরীর এমনিতেই ভারী ছিল। মজিদ জানান- তার ও জিল্লুু রহমান নামের এক মুক্তিযোদ্ধার রাইফেল নদে ডুবে যায়। নদ পাড়ের মানুষ সেই রাইফেল উদ্ধার করে দেয়। পওে বাড়ি ফিরেই তিনি বাবা-মাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। খবর পেয়ে ছুটে আসে পাড়ার স্বজনরা। এসময় জানতে পারি পাশের বাড়ির মামা আফাজ উদ্দিনকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করার খবর। যুদ্ধ জয় শেষে ঘরে ফিরে এলে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু পাশের বাড়ির বন্ধু মজিদ, মইনুদ্দিনও যুদ্ধে মারা গেছে এই খবর শুনে আবদুল মজিদ পাতানের সে রাত মোটেই ভালো কাটেনি। পরের দিন সকালে অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও ফিরে আসে। একে-একে জনা পনেরো মুক্তিযুদ্ধো একত্রিত হই। ফায়ার করে আনন্দ প্রকাশ করি। খবর পাই সহযোদ্ধা, হামিদ, রমজান, সামিউলসহ অনেকেই দেশকে ভালোবেসে শহীদ হয়েছেন। বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে যুদ্ধে শহীদ সহযোদ্ধাদের কথা মনে করে তাদের কথা বলতে গিয়ে বুক খালি হয়ে আসে, কণ্ঠ ভারি হয় তার।
মেহেরপুরের প্রবীণ সাংবাদিক “মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” এর লেখক তোজাম্মেল আযম বিজয়ের সেই আনন্দ ও স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলেন- ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করে। এই খবর দেশ বিদেশের সংবাদপত্র প্রচার করে। ১৭ ডিসেম্বর ভারত থেকে অগণিত নারী পুরুষ সীমান্ত অতিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের মেহেরপুর দেখতে আসেন। বিজয়ের আনন্দ সেদিন শুধু এদেশের মানুষ হিসেবে আমরা অনুভব করেনি। মেহেরপুর দেখতে আসা ভারতের নারী পুরুষের চোখে মুখেও দেখেছিলাম আনন্দের ঝিলিক। সেই সময় ভারতীয় রুপিতেও মেহেরপুরে কেনা বেচা হয়েছে। যুদ্ধাস্ত মেহেরপুর দেখতে আসা ভারতীয় নারী পুরুষদের আতিথিয়তা করতে সে সময় অনেকের বাড়ি থেকে তাদের খাবার দেয়া হয়েছে।

মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বশির উদ্দিন। তিনি জানান- ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত হলেও দেশ স্বাধীনের পর ২০ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসি। এসেই দেখি ঘরের আসবাবপত্র, বাড়ির মূল্যবান গাছ, ঘরের টিনের চালটাও খুলে নিয়ে গেছে। যে ধান ছিল, গাছে-গাছে ডাব ছিল তাও নেই। এতেও কষ্ট পায়নি। দেশটা স্বাধীন করতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আনন্দ আর কী হতে পারে। সেই আনন্দে সেদিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছি। বিভিন্ন স্থানে পাক সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন অপসারণ করি। যার নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের আরেক সাবেক কমান্ডার কাউয়ুম উদ্দীন। বিজয়ের সেই আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর দু’চোখ বেয়ে আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ে।
বরগুনা : ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে বরগুনা (তৎকালীন মহাকুমা) পাকহানাদার মুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১এর ১৬ ডিসেম্বরের সকাল থেকেই বরগুনার সাধারণ জনতার মধ্যে ছিল টান-টান উত্তেজনা। তখন যুদ্ধের খবরা-খবর শোনার বস্তুনিষ্ঠ মাধ্যম ছিল বিবিসি’র খবর ও ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। বেতারের সংবাদের মাধ্যমে জনগণ জানতে পারে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ভারত বাংলাদেশের মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। মানুষেরর মনে পরাধীনতার বিভিষিকা কেটে গিয়ে স্বাধীনতার আশা বাড়তে শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বরের ভোর থেকেই বরগুনার সাধারণ নাগরিকগণ আসন্ন বিজয়ের অপেক্ষায় রাস্তায় নেমে আসেন।
সেই সময়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার্থী ছিলেন বরগুনা জেলা মহিলা সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম সেদিনের স্মৃতিচারণে জানান, আমরা ১৬ ডিসেম্বর সকালে সহপাঠিরা একত্রিত হই এবং ফুল নিয়ে বরগুনা কারাগারের পেছনে গণকবর যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ও সাধারণ বাঙালিদের হত্যা করে কবরস্থ করা হয়েছিলো সেই গণকবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। কারণ আনন্দের চেয়েও আমাদের মনে সে সময়ে বিষাদের পাহাড় বেশি ভর করে ছিলো। পরে শহরের নানা স্থানে ঘুরে-ঘুরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেই।

বরগুনা জেলা মুক্তযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মনোয়ার জানান, বরগুনাবাসীর জন্য রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত দু’টো দিন ছিলো ২৯ ও ৩০ মে। একাত্তরে এ দু’টি দিনে বরগুনা জেলখানায় আটককৃত নিরীহ বাঙ্গালীদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রথম দিন তারা ৫৫ জনকে হত্যা করেছিল। পরের দিন আবারও ১৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই নির্মমতার স্মৃতি বুকে নিয়ে বরগুনার মানুষের প্রথম বিজয় দিবস উদযাপন স্বাভাবিক কারনেই আনন্দের চেয়ে বেদনা বিধুর ছিলো, জানিয়েছেন- বরগুনার সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
সাবেক ছাত্রনেতা, সংসদ সদস্য ও বর্তমানে বরগুনার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন স্মৃতিচারণে জানান, ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাস্তায় নেমে আসা ছাত্র-জনতা বিজয়ের আনন্দে খন্ড-খন্ড মিছিল করতে থাকেন। স্বাধীন বাংলা বেতারে গান চলছিলো ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’। সেই গান বিজয়ের অন্যরকম আবহ তৈরী করেছিল।

মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিতাদের পরিবার জানায়, বরগুনায় একদিকে ছিলো বিজয়ের আনন্দ অন্যদিকে ছিল স্বজনহারাদের কান্না। বরগুনার সংখ্যালঘু নারীদের ওপর হয়েছিল পাশবিক অত্যাচার। সেইসব নারীরা ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের আনন্দে আনন্দিত হতে পারেননি, ইজ্জত হারিয়ে তারা নীরবে ঘরের কোনে চোখের জলে ভেসেছেন।

বিজয়ের দিনে বরগুনার সর্বত্রই আনন্দের পাশাপাশি জনমনে একটা চাপা আতঙ্কও ছিল। তৎকালীন মহাকুমা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিল প্রদক্ষিণ করেছে। হয়েছে সভা সমাবেশ। মসজিদ ও মন্দিরগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা ছিলো। সাধারণ মানুষের অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কবে তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসবেন।
বরগুনা সদর ছাড়াও আমতলী (তৎকালীন থানা) উপজেলা, বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রথম বিজয় দিবসের সূচনা করা হয়েছিলো বলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাসসকে জানিয়েছে।
একদিকে নিজেদের স্বাধীন ভূখন্ড অর্জনের খুশি অন্যদিকে স্বজন হারানোর বেদনার মিশেল যে বিমূর্ততা তৈরী করেছিলো তা ঠিক বলে বোঝানো যায়না,  আলাপকালে জানালেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।

ভোলা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ভোলাতেও আনন্দে মেতে উঠে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। পাকবাহিনীর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পনের খবর রেডিওতে প্রচারের ফলে মুহুর্তের মধ্যে উল্লাসে ফেটে পড়ে দ্বীপাঞ্চলের মানুষ। যে যার অবস্থান থেকে সেদিন রাজপথে নেমে আসে বিজয়ের সুখে। রাজপথে স্রোতের মত মানুষের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস বিজয়কে বরণ করে নেয়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, ইত্যাদী শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয় ১৬ ডিসেম্বর।
মুহুর্তের মধ্যে সকল সরকারি-বেসরকারি ও বড়-বড় ভবনের পাকিস্তানী পতাকা খুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। উত্তোলণ করা হয় লাল সবুজের স্বাধীন দেশের পতাকা। একইসাথে চলে রং ছিটানোর উৎসব ও মিষ্টি বিতরণ। যদিও ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পলায়নের মাধ্যমে ভোলা মুক্ত হওয়ার পর থেকেই এখানে আনন্দ চলতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর যেন তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দোস্ত মাহমুদ বাসস’কে জানান, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার খবরে আমাদের আনন্দের সীমা থাকেনা। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আকাশে ফাকা গুলি করে বিজয়কে স্বাগত জানাই। বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে সমবেত হতে থাকে । জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিতে দিতে আমরা রাজপথে নেমে যাই। সেদিন সাধারণ মুক্তিকামী মানুষও আমাদের সাথে পথে নেমে আসে। এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা হাই কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান, আলী আকবর (বড় ভাই), হাবিবুর রহমান, মো: ছাদেক, আব্দুল মমিন টুলু (বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান), নানু ভাই, শশী, মো. সাইফুল্লাহ, মো. ছালেহ আহমেদ, গাজী জয়নাল আবেদিন, তিনি মো. দোস্ত মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম, একে এম খাইরুল আলম ভুলু, আবুল হোসেন, সুবেদার সিদ্দিক, মাহবুবুর রহমান শিশু, ফিরোজ আহমেদ, মো. রাজ্জাক, মুজিবুর রহমান, সফিকুল ইসলামসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে শহরে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডর মো. সফিকুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, বিকেলে শহরের সদরোডস্থ বরিশাল দালানের সামনে জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা মিলে বিজয় সমাবেশ করি আমরা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আনন্দ, বেদনা, কষ্টের অনুভুতি প্রকাশ করি সেই সমাবেশে। সাধারণ মানুষ ব্যাপক করতালি ও উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানান।

তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানকার উল্লেখযোগ্য রাজাকারদের মধ্যে ইলিয়াস মাস্টার, খোরশেদ হাজি, আবুল কাশেম, মন্নান ডাক্তার, শাহ মতিউর রহমান, শাহে আলম চৌধুরী, জয়নাল মাতাব্বর, মোতাহার কমান্ডর, মো. টনি, চাঁন মিয়া, আনসার কমান্ডার, আব্দুল্লাহ, সৈয়দ দালাল, মোতাহার দালাল অন্যতম ছিলো। ১০ ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত হলে তাদের অধিকাংশই পালিয়ে যায়। তারপরেও মো. টনি, আব্দুল্লাহ, আনসার কমান্ডরসহ বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তেজিত জনতার হাতে প্রাণ হারায়।

এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এম. হাবিবুর রহমান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী জল্লাদ নামে খ্যাত আব্দুল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়। এই রাজাকার পাক বাহিনীর সহায়তায় ৩’শ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে। তাকে আটকের পর ভোলা সরকারি স্কুলের সাইন্স ল্যাবটারির ছাদে উঠিয়ে মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পড়ানো হয়। পরে তাকে সমস্ত শহর প্রদিক্ষণ করানো হয়। হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ এই কুখ্যাত রাজাকারকে দেখতে ভীড় জমায়। এসময় জনতা তাকে আরো কঠিন সাস্তির দাবি জানায়। পরে তাকে ভোলা জেলখানায় রাখা হয়।
হাবিবুর রহমান বলেন, আরেক রাজাকার মো. টনি বাংলাবাজার যুদ্ধে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। তাকে আটকের পর মানুষ উল্লাস করে। তার কঠিন শাস্তির দাবি জানায়। সেদিন মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তেজিত জনতা মিলে ভোলা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট এর ব্রিজের ওপর হত্যা করে এই কুখ্যাত রাজাকারকে।
তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর সকল রাজাকারদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় উত্তেজিত জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু এসব লুট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় এসব নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। যা পরে নিলামে বিক্রি করে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে বীরাঙ্গণাদের কল্যাণে ব্যায় করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা একে এম খাইরুল আলম ভুলু বাসস’কে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী জাতির জীবনে যেমন গৌরবের দিন, তেমনি প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার জীবনে স্মরণীয় দিন। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে যাই। তাই স্বাধীনতার চেয়ে আরাধ্য আর কিছু ছিলোনা আমাদের কাছে।

কুমিল্লা : ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় রোমন্থনে সেদিনের বীর নায়কদের স্মৃতিচারণ ও পত্রিকার পাতা থেকে উঠে এসেছে সেই রোমাঞ্চগাঁথা। সেদিন কুমিল্লায় দুপুরের পর বিজয়ের আনন্দে উল্লাসিত ছিল সবাই। সাধারণ মানুষ বিজয় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে ওই দিনটি। মুক্তিযোদ্ধাদের জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কুমিল্লার প্রাচীনতম দুটি পত্রিকা থেকে জানা যায়, মুক্তির অপেক্ষায় পৌষের কনকনে শীতে ১৫ ডিসেম্বর রাতেও চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল কী হবে ১৬ ডিসেম্বর। কখন আসবে চূড়ান্ত সোনালি বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি! নাকি অন্য কিছু ঘটবে! মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী হানাদার পাকিস্তানিদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য শুধু একটি নির্দেশের অপেক্ষায় চারিদিক দিয়ে ঢাকাকে ঘেরাও করে রেখেছে- হানাদার পাকিস্তানীদের পালাবার কোন পথ নেই- সারেন্ডার করো না হয় চূড়ান্ত আঘাত প্রতিহত করার জন্য তৈরি হও। তবে সারেন্ডারের চেয়ে মুক্তিবাহিনী চাচ্ছে শেষ যুদ্ধ করে হানাদার পাকিস্তানিদের একটা চরম আঘাত দিয়ে প্রতিশোধ নেয়া।

কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আহমেদ বাবুল বাসসকে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল আমাদের বিজয়ের মুহূর্ত। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন ছিল বিপুল আনন্দের। তবে এই আনন্দের পেছনে ছিল মানুষের আত্মত্যাগের অঢেল কাহিনি। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশের বিজয়ের সংবাদ যখন প্রকাশিত হচ্ছিল পত্রপত্রিকায়, সেই সময় বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই সব আত্মদানের গল্পগুলোও ফিরেছিল মানুষের মুখে মুখে।

মুক্তিযুদ্ধের নানামাত্রিক খবর তৎকালীন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময় অবরুদ্ধ দেশের সংবাদপত্র এবং ভারত ও অন্যান্য দেশের খবরের কাগজ ভরে উঠত মুক্তিযুদ্ধের নানান খবরে।
কিন্তু কেমন ছিল বিজয়ের আনন্দ-সংবাদ? মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সংবাদে মানুষ কিভাবে উদ্বেলিত হয়েছিল, কেমন করে গ্রহণ করেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে? একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী পত্রপত্রিকাগুলোর সংবাদ-প্রতিবেদনে বিষয়টি শিল্পিতরূপে ধৃত হয়েছিল। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমোদ থেকে পাওয়া যায় ঢাকার বাইরে মফস্বলের শক্রমুক্তির খবর এবং মানুষের আনন্দের চিত্র। কুমিল্লা মুক্ত হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর। বাংলার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে কুমিল্লাও শত্রুমুক্ত ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়, ‘গত ৮ ডিসেম্বর বুধবার প্রত্যুষে শহরবাসী কুমিল্লা শহরকেও যেন হালকা, স্বচ্ছ ও পবিত্র বলিয়া দেখিতে পায়। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিতে পারে কুমিল্লা শহর শক্রমুক্ত এবং মুক্তি ও মিত্রবাহিনী কুমিল্লা শহরে পৌঁছিতেছে। এই আনন্দে জনগণ আনন্দ উল্লাসে একে অন্যের সহিত আলিঙ্গন ও জয় বাংলা ধ্বণি দিতে থাকে।’ ৭ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লা বিমানবন্দরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং পরাস্ত হয় পাকিস্তানীরা। অনেক মৃত সৈনিক পড়ে থাকে এখানে-সেখানে। ১৬ ডিসেম্বরে কুমিল্লার আমোদ পত্রিকায় ‘বিমানবন্দরে জয়োল্লাস’-এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘এই দৃশ্য (পাকিস্তানিরা মরে পড়ে আছে) দেখিবার জন্য হাজার হাজার বাঙ্গালী জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া বিজয় উল্লাসে মিত্রবাহিনীর সৈনিক দিগকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে, সেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত পাঞ্জাবী সৈনিকদের প্রতি ধিক্কার জানাইতে থাকে। বাঙ্গালী জনতার এই আনন্দ উল্লাস এবং মিত্রবাহিনীর প্রতি অভিনন্দনে তাহারা উপলব্ধি করে যে, খান সেনারা জনগণের প্রতি যে কতদূর অত্যাচার চালাইয়াছিল।’ কুমিল্লায় বিজয়ের আনন্দ ছিল আনন্দ ও বেদনার। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসা জমেছিল অনেক বিষয়ে। ১৯৭১-এর বিজয়ের মাসে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় এর পরিচয় মেলে।

কুড়িগ্রাম : আব্দুল হাই বীরপ্রতীক বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে রেডিওতে পাকসেনারাদের আত্মসমর্পণের ঘোষণা শোনার পর মুক্তিযোদ্ধা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। কেউ-কেউ গুলি ছুঁড়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এসডিও আব্দুল হালিম মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেন। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অস্ত্র সমর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফিরে যান। নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ীসহ ধরলা নদীর ওপারে থাকা মানুষরা গরুরগাড়ি আর ঘোড়ার গাড়িতে ফিরতে শুরু করে। অনেক মানুষের চাপে ধরলা ঘাটে নৌকা সংকট দেখা দেয়। শরণার্থীরাও দেশে ফিরতে শুরু করে। দুর্গাপুরে পাকসেনার পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হন। ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রায় সবাই দেশে ফিরে আসেন। যুদ্ধ আর গণহত্যায় বিপন্ন কুড়িগ্রামে আবারও প্রাণের সঞ্চার হয়, স্বাভাবিক হয় জনজীবন।
আব্দুল হাই জানান, ৬ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে মিত্রবাহিনীর দুটি ফাইটার বিমান পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর গুলিবর্ষণ করে। এতে পাকবাহিনী ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে এবং বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ট্রেনে ও পায়ে হেঁটে কুড়িগ্রাম ত্যাগ করে চলে যায়। ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তিনি কুড়িগ্রাম শহরের ওভারহেড পানির ট্যাংকের উপর বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। এভাবেই হানাদার মুক্ত হয় কুড়িগ্রাম।
আব্দুল হাইয়ের সহযোগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসলাম মন্ডল জানান, কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত হবার পর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, পিটিআইসহ ৬টি স্থানে পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাঞ্জাবি পাঠানরা কুড়িগ্রাম ছেড়ে চলে যাবার পর বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে থাকা মানুষ শহরে ফিরতে শুরু করে। পোঁটলা আর ব্যাগ নিয়ে অনেকেই নিজ বাড়িতে অবস্থান নেয়। তবে খাদ্যাভাবসহ নানা উৎকণ্ঠায় সবাই অসুস্থ হলেও তাদের মুখে ছিলো হাসি।

তিনি জানান, শহরে প্রবেশ করে উল্লসিত মানুষরা মুক্তিযোদ্ধারা মাল্যভূষিত করে। তবে তখনও নারীরা ফেরেনি। ব্যবসায়ীরা দোকানে এসে দেখলেন মালপত্র লুট হয়েছে। টাকা পয়সা নেই। খাবার নেই। এ অবস্থায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তারা। সবাই অপেক্ষা করে কবে দেশ স্বাধীন হবে।

পিরোজপুর : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল। অন্যান্য বিকেলের চেয়ে এ বিকেলটি ছিল একেবারেই অন্যরকম। হাজার-হাজার নারী পুরুষ শিশু জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেছে পিরোজপুর শহর। একটু আগেই খবর স্বাধীন বাংলা বেতার ও আকাশ বাণীর খবরে জানা গেছে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পন করেছে কুখ্যাত লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বাধীন দখলদার হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। ৮ ডিসেম্বর ৯ নং সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন এর নির্দেশে সামছুল হক খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী দল দক্ষিণ দিক থেকে পিরোজপুর শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। উত্তর দিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান শিকদারের নেতৃত্বাধীন বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত শহরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদ্মার এপাড়ের শক্তিশালী অবস্থান কেন্দ্র যশোর ক্যান্টমেন্ট এর পতন ঘটিয়ে মিত্র বাহিনীর মেজর জেনারেল দলবীর শিং ও মুক্তিবাহিনীর ৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর এর নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী খুলনার অভিমুখে রওনা হবার খবর পেয়ে পিরোজপুরে অবস্থানরত ৩২ পাঞ্জাব ও ২০ বালুচ রেজিমেন্টের দখলদার বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নৌ-বন্দর হুলারহাট হয়ে বরিশালের দিকে নৌপথে পালিয়ে যায়। প্রায় নয় মাসের অবরুদ্ধ পিরোজপুর মুক্ত হয় শত্রু বাহিনীর কবল থেকে।

পিরোজপুরের মানুষ সেদিন থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের খবর শোনার আনন্দঘন মুহুর্তটির জন্য। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে থেকে প্রায় সারা রাত প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে শহরের রাস্তায়-রাস্তায় শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় এবং থানা সদরসহ সর্বত্র আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি বাঙালী। পিরোজপুর শহরের সরকারি বিদ্যালয় ভবনে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে এসে ফাঁকা গুলি আকাশে ছুড়ে এ আনন্দ উচ্ছাসকে আরো বেগবান করে তোলে। হানাদারমুক্ত পিরোজপুরে প্রথম পদার্পণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. সামছুল হক খান সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্র বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ শিং অরোরা ও মুক্তিবাহিনীর উপ-অধিনায়ক এয়ার মার্শাল এ কে খন্দকারের নিকট বর্বর খুনি হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি’র আত্মসমর্পণের খবরে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে এলে মুক্তির আনন্দে বিভোর শহরবাসী আমাদের গায়ে পুষ্পবর্ষণ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সিকদার বলেন, ঢাকার পতনের খবর পেয়ে যারা স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের জল্লাদ বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, নারী ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সহযোগিতা করেছে, সেইসব রাজাকার আলবদর ব্যতিত এ জেলার সকল মানুষ পথে ঘাটে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে বন্দরে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। পিরোজপুরের সিনিয়র সাংবাদিক খালিদ আবু জানান, বেতারে খবর শুনে আমরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি ও সারারাত ধরে শহরের বিভিন্ন দর্জির দোকানে শত-শত পতাকা তৈরী করতে দেখি। পরদিন ভোরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে বেশ কয়েকটি আনন্দ মিছিল শহরের রাস্তায়-রাস্তায় নেচে-গেয়ে উল্লাস করে। পরদিন প্রভাতে বলেশ্বর খেয়াঘাটের বধ্যভূমিতে যেখানে মহাকুমা প্রশাসক আব্দুর রাজ্জাক, মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহাম্মেদ, ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল বারী মো. মিজানুর রহমান, ফজলুল হক খোকন, বিধান মন্টু, মো. সেলিম, গণপতি হালদার, জিয়াউজ্জামান, ভাগিরথীসহ প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা ও দশ সহস্র নারী পুরুষ শিশুকে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করা হয়, সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার আলবদরদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহাম্মেদ রায়েন্দার যুদ্ধে দুই শতাধিক রাজাকার আলবদর ও পাকিস্তানী পুলিশদের পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর রাতেই পিরোজপুরে এসে পৌঁছেন। তাকে পেয়ে মুক্তিকামী মানুষের আনন্দ উল্লাস আরো এক মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে সময়ের যারা আজও জীবিত রয়েছেন তাদের স্মৃতিতে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এখনও চিরভাস্বর হয়ে রয়েছে। অন্য দিকে স্বজন-প্রিয়জন হারানো নারী-পুরুষ একই সাথে আনন্দ উল্লাস ও বেদনা মিশ্রিত এক অবর্ণনীয় অনুভূতি নিয়ে এদিনটি অতিবাহিত করে।

রাজশাহী : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় লাভ করলেও ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় রাজশাহী। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রণাঙ্গণ ফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান জানান, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের দিন, অহংকারের দিন। কিন্তু রাজশাহীতে স্বাধীনতার সেই সূর্য কিরণের ছোঁয়া লাগে আরও দু’দিন পরে। ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী শহর শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদররা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও রাজশাহীতে স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা ওড়ে দুইদিন পর। দীর্ঘ নয় মাস বিভীষিকাময় সময়ের অবসান ঘটে।

বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর আত্মপরিচয়ের ঠিকানা করে নেয়ার অনুভূতিতে পুলকিত হয়ে ওঠে রাজশাহীর মানুষ। মুক্তিকামী জনতার ঢল নামে প্রতিটি সড়কে।
মহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা নিলেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহায় চরে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তান সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ী ও আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীরদর্পে প্রবেশ করে। তাদের চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়, মহানগরীর সোনাদিঘীর মোড়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল হকের বাড়িতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল, জেলখানা ও বিভিন্ন বন্দীশালা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে নির্যাতিত মানুষেরা। স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপ পানি ফুলের পাপড়ী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্রবাহিনীকে বরণ করে নেয় রাজশাহীর মানুষ।

মিত্রবাহিনীর বিমানকে স্বাগত জানাতে সবাই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময় পাক সেনাদের বিমান বোমা ফেলতে থাকলো রাজশাহীতে। লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও সেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রামাঞ্চল। আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম জানান, ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়ে যায় রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলেন লাল গোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। পরে পাকিস্তানী সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে চলে যায় নাটোরে। তাদের দোসররা এখানে সেখানে লুকিয়ে যায়।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G