WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
সখী, ভাবনা কাহারে বলে।
সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ভালবাসা ভালবাসা—
সখী, ভালবাসা কারে কয়!
বহু বছর আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা এই প্রশ্নের জবাব কিংবদন্তী এই জুটির অসাধারণ অভিনয়শৈলীর মাধ্যমেই হয়তো সারা বাংলার মানুষ জানতে পেরেছে। বুঝতে পেরেছে ভালবাসার প্রকৃত মর্ম কী, জানতে পেরেছে কীভাবে ভালবাসতে হয়। আর তাই হয়তো রোমান্টিক জুটি হিসেবে তারা দর্শকের হৃদয়ে পেয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তাইতো এই জুটির কোনো ছবির একটি রোমান্টিক দৃশ্য দেখলে আজও প্রেমিক হৃদয়ে তোলপাড় ওঠে। কিংবদন্তী বোধ হয় একেই বলে।
‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?’- মনে পড়ে এই গানটির কথা? উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সপ্তপদী’ চলচ্চিত্রের এই গান হয়েছিল সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। মূলত উত্তম-সুচিত্রা জুটির জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল দুজনের সুন্দর চেহারা, অভিনয়শৈলী এবং প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে মানুষ ঠিক যেমন চরিত্র চায়, তেমন চরিত্রে তাদের অভিনয়।
উত্তম কুমার অভিনয় করতেন সত্যপরায়ণ আদর্শ পুরুষের চরিত্রে। বেশিরভাগ রোমান্টিক ছবিতে নারীর সৌন্দর্য ও আকর্ষণের প্রতি নিস্পৃহতা এবং প্রেমের কোনও প্রস্তাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বিরূপভাব প্রদর্শন করতে দেখা যায় তাঁকে। উত্তমের এই নারী বিদ্বেষী আচরণ, অতি-ন্যায়বান, অতি-রক্ষণশীল চরিত্রের জন্যেই তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একজন অসাধারণ জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠেন। কারণ, আদর্শ বাঙালি ভদ্রলোকের চরিত্রগুণ হিসেবে এসব বৈশিষ্ট্যগুলোকেই ধরা হত। আর তাই বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরাও তাঁকে খুব সহজেই মনে স্থান দিয়েছে। মৃদু কণ্ঠস্বর, বাংলা কথা বলার ধরণ ও নিখুঁত উচ্চারণও ছিল তার জনপ্রিয়তার একটি কারণ।
অন্যদিকে, সুচিত্রা সেন অতি-আদর্শবাদী, সহ্যশীলা, দয়ালু, স্নেহময়ী নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সর্বদা নিজেকে উৎসর্গ করতে বা ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত নারীর চরিত্রে অভিনয় করে জায়গা করে নেন কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়ে।
উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৩ সালে। এই ছবিটিতে উত্তম কুমার বা সুচিত্রা সেন কেউই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। ছবিটি যখন মুক্তি পায়, তখন ছাপানো পোস্টারে উত্তম-সুচিত্রার কোনো পাত্তাই ছিল না। কিন্তু ছবিটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে যেন এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়। চলচ্চিত্র জগত পেয়ে যায় একটি চমৎকার রোমান্টিক জুটি।
এরপরে ১৯৫৪ সালে মুক্তি পায় দুজনের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘অগ্নি পরীক্ষা’। এই চলচ্চিত্র মুক্তি পাবার পর বাঙালি মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গ্রহণ করেন এই জুটি। এরপর একের পর এক মুক্তি পেয়েছে এই জুটির জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র- শাপমোচন (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হল দেরি (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সপ্তপদী (১৯৬১) প্রভৃতি।
চমৎকার এই জুটি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন ৩০টিরও অধিক ছবি। বাঙালি দর্শকের কাছে রোমান্টিক জুটির একমাত্র উদাহরণ তারা। রুপালী পর্দায় এই জুটির রোমান্টিকতা যেভাবে ফুটে উঠতো তা আর কারো সঙ্গেই হয়নি। পরিচালকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। উত্তম কুমারকে অভিনয় করিয়েছেন অন্য নায়িকার বিপরীতে। কিন্তু সুচিত্রা ছাড়া যেন উত্তমের সেই রোমান্টিক অভিনয় আসে না। একই ব্যাপার হলো সুচিত্রা সেনের ক্ষেত্রেও। উত্তম ছাড়া তার চোখের চাহনিতে যেন সেই ঝিলিক আসে না, ভুরুর নাচনে যেন আসে না সেই ছন্দ, হাসিতে যেন ঝরে না মুক্তা। উত্তম কুমার তাঁর জীবদ্দশায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। এ আমার বিশ্বাস। আজ আমি উত্তম কুমার হয়েছি, কেবল ওর জন্য।’
উত্তম-সুচিত্রা এক অবিচ্ছেদ্য জুটি। তাদের দুজনকে একসাথে দেখতেই দর্শকরা বেশি পছন্দ করতেন। বাঙালিকে হাসিয়েছে এই জুটি, কাঁদিয়েছে আবার রোমান্টিকতার উত্তেজনায় কাঁপিয়েছেও। বাংলা চলচ্চিত্রে এই জুটি অদ্বিতীয় এক জুটি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি