পানির নিচে অদ্ভুত মিউজিয়াম!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পানির নিচে এ এক অদ্ভুত জগৎ। হাতে হাত ধরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক দল নারী-পুরুষ বা চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা টাইপ মেশিনে মনোযোগ দিয়ে টাইপ করে চলেছেন কেউ। কেউবা চালাচ্ছেন সাইকেল। আবার কোনো একজন বৃদ্ধ হয়তো মুখ কালো করে বসে আছেন। আছে সন্তানসম্ভবা নারীও। এক নারী শুয়ে আছেন কাত হয়ে।
মাছের জন্য তো বটেই, মানুষের কাছেও এ এক আজব জগৎ। সাগরতলের হাজার হাজার রঙিন মাছ বুঝতে পারে না এরা আদৌ সত্যিকারের মানুষ কিনা। এ যেন সত্যিই স্বপ্নলোকের গল্পের মতো।
পানির নিচে মাছ, গাছ, ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জীব, বালু ইত্যাদি অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন যে, একটা গোটা জাদুঘর পানির নিচে? অবাক হচ্ছেন? সত্যিই এমন অবাক করা কাজটি সম্পন্ন করে অবাস্তবকে বাস্তব করার কাজটি করেছে মেক্সিকোর একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। পানির নিচে তারা নির্মাণ করেছে আস্ত একটা জাদুঘর। যেখানে স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৫০০টি মূর্তি।
কানকুন আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত পানির নিচের এই জাদুঘরটি মেক্সিকোর ইসলা মুজেরেস, পুন্টা কানকুন আর পুন্টা নাইজাকের পশ্চিম উপকূলে ন্যাশনাল মেরিন পার্কে অবস্থিত।
২০০৮ সালে গনজালেজ ক্যানো আর জেসন ডিকেয়ারেস টেইলর সিদ্ধান্ত নেন মানবসৃষ্ট একটি জাদুঘর তৈরির এবং এটাও মাথায় রাখা হয় যাতে কোনভাবেই পানির জীবগুলোর জীবন ব্যাহত না হয়।
২০০৯ সালে শুরু হয়ে যায় স্থাপনা। এতে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান রবার্টো ডায়াজ। ধীরে ধীরে নিজের হাতের বুনোটে বুনা গল্পকে পানির নীচের জগতে ছড়িয়ে দেন স্থাপত্যশিল্পী জেসন ডিকেয়ারস টেইলর।
২০১৩ সাল পর্যন্ত নিজেদের কাজ চালিয়ে যান তারা। নানারকম স্থাপত্যকর্মের পাশাপাশি সাজিয়ে তোলেন জাদুঘরকে বিভিন্ন চিত্রকর্ম দিয়েও।
বর্তমানে প্রায় ৫০০টি স্থাপত্য এ জাদুঘরে থাকলেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে তাদের। আর এর কারণ হচ্ছে পানির নিচে বাস করা মাছ আর ঢেউ।
কখনো পানির ঢেউ নাড়িয়ে যাচ্ছে স্থাপত্যকে, কখনো মাছেরা এসে ক্ষয় করে দিচ্ছে এদের। তার সাথে পানির নিচে জন্মানো লতাগুল্মের কথাতো না বললেই নয়। খুব দ্রুত স্থাপত্যকর্মগুলোকে অন্যরকম এক পোশাকে ঢেকে দিচ্ছে তারা। প্রতিদিন নতুন নতুন রূপ দিচ্ছে জাদুঘরটিকে।
কানকুন জাদুঘরটির অবস্থান পানির নিচে হলেও আর দশটা জাদুঘরের চাইতে মোটেও পিছিয়ে নেই এটি। কী নেই এখানে? ভিন্ন ভিন্ন তিনটি গ্যালারী, অনেকগুলো স্থাপত্যকর্ম, চিত্রশিল্প এবং ১,২০০ টি স্থাপত্যের পথে এগিয়ে যাওয়া ক্রমবর্ধমান অংশ।
মোটকথায় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এর পরিধি। শুধু জাদুঘরটি দেখবার আনন্দই নয়, পর্যটকেরা এখানে এসে খুঁজে পাবেন পানির নিচের এক অসাধারণ জীবনকে। যেখানে রয়েছে নিঃস্তব্ধতা ও স্বর্গীয় শান্তি।
গ্লাস-বটম বোটের মাধ্যমে যে কোন পর্যটকই ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারবেন এই জাদুঘরে। পর্যটক গাইডের পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে প্রতি বছরে প্রায় ৩০০,০০০ জন মানুষ ঘুরে যায় সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ২৮ ফুট নীচে অবস্থিত এই কানকুন জাদুঘরে।















