WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

গদ্য কার্টুন : একুশ শতকের বাঁশতলা গদ্য কার্টুন : একুশ শতকের বাঁশতলা

গদ্য কার্টুন : একুশ শতকের বাঁশতলা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৫ সময়ঃ ২:১৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

রাকিব হাসান:

bamboo-1শৈশবে কিছু পাগলের সন্ধান পেয়েছিলাম যাদের আচরণ ছিল একবারেই উদ্ভট, খামখেয়ালীপূর্ণ এবং হাস্যরসাতক। তবে একটি বিষয়ে তাদের দারুণ মিল ছিল তারা প্রত্যেকে প্রচন্ড একরোখা, কোন একটি বিষয়ে মেধাবী, সৎ এবং প্রতিবাদী। লোকে বলত অতিরিক্ত প্রতিভা-ই তাদের পাগলামির কারণ।

একজন পাগলের পাগলামি ছিল মনে রাখার মত। সব ঋতুতেই পায়ে ছেঁড়া একজোড়া প্যাগাসেস কেড্স, কটকটে কমলা রঙের পাঞ্জাবী, আর সাথে গাঢ় নীল প্যান্ট পরে হাজির হত এই পাগল। দূরের যে গ্রাম থেকে সে আসত ঐ গ্রামের নামটিও অদ্ভুত-‘গাংরাইয়া’। গ্রামের নামেই তার নাম হয়ে যায় গাংরাইয়া পাগলা।

অনেকে তাকে ডিম পাগলা বলেও ডাকত। তার খাবারে ভাতের সাথে ডিম ভাজা থাকতেই হবে। সে যেসব শ্লোক এবং পুঁথি সুরে সুরে পাঠ করে ভিক্ষা চাইত সেসবের বিষয়ও ছিল ডিম। বাচ্চাদের অনুরোধে ডিম নিয়ে তার নিজস্ব কথা ও সুরে গান করত এবং সাথে চলত পাগলা নৃত্য। বাচ্চারা ওর নাচের নাম দিয়েছিল ব্যাঙ নাচ। এই নাচ থেমে থেমে চলত ঘন্টা দুয়েক। নাচ দেখার জন্য ছেলেবুড়ো সবাই জড়ো হতো।

তবে নাচ শেষ হবার সাথে সাথে ডিম ভাজা এবং ভাত এনে দিতে হবে। দেরি হলে তার হাতের লাঠি দিয়ে ঐ বাড়ির টিনের চাল পিটিয়ে সমান করে দিয়ে চলে যেত।

এতক্ষণ যে পাগলের পাগলামি তুলে ধরলাম সেতো আমার শৈশবে দেখা পাগল। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে পড়লাম, ঢাকা শহরেই নাকি পাগলের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও পড়েছেন পাগলের পাল্লায়। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কক্ষে ঢুকে এক ব্যক্তি নিজেকে ‘দেশের মালিক’ পরিচয় দিয়ে ‘টাকার মেশিন’ দাবি করেন খোদ মন্ত্রীর কাছে। এ ধরণের ঘটনায় হতবম্ব হয়ে ঐ ব্যক্তিকে মানসিক চিকিৎসার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

চিকিৎসক জানান, ‘ঐ ব্যক্তির মেজর সাইকোসিস। এসব রোগী বাস্তবতা থেকে সবসময় দূরে অবস্থান করেন, বেশি কথা বলেন এবং নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন’। ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের।

সাধারণের প্রশ্ন হল, পাগল সচিবালয়ের মতো এরকম নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা একটি জায়গায় ঢুকলো কী করে? চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, সে যদি বাস্তবতা থেকে দূরেই থাকে তবে অর্থমন্ত্রীর কাছেই যে টাকার মেশিন চাইতে হবে এই বোধ তার মধ্যে আসলো কী করে?

সামাজিক গণমাধ্যমে, চায়ের দোকানের আড্ডায় এ নিয়ে অনেকে রসালো মন্তব্য শোনা যায় -“ ভাই এতে অবাক হবার কী আছে, পাগল অনেক দিন পর তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে,’’… ‘‘আরে ভাই, অর্থমন্ত্রীর ওলটপালট বক্তব্যে শেয়ার বাজারে ধস নামায় ঐ ব্যাটার সর্বস্ব গেছে, তাই দফারফা করতে গেছে’’। না ভাই সম্ভবত “ পাবনার সেই মধুর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে গেছে, মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম।”

যে যাই বলুক পাগলটি সচিবালয়ের কঠোর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে তার দাবিটি একজন মন্ত্রীকে জানিয়ে আসতে পেরেছে এটাই তার স্বার্থকতা। মহাজোট সরকারের গত আমলে যেখানে অনেক মন্ত্রী এমপির সাক্ষাৎ তার নির্বাচনী এলাকার মানুষই পায়নি সেখানে একজন পাগলতো পেয়েছে এটাও কি কম সান্তনা !!!

এছাড়া মন্ত্রীদের সদা নিরাপত্তায় বিনিদ্র রজনী কাটাতে কাটাতে সচিবালয়ের অতন্দ্র প্রহরীরাও যে কতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, এটা মন্ত্রীর সাথে ‘সাকির’ নামের এ পাগলের সাক্ষাতের আগে কয়জন মানুষ জানত!!!

তবে ঘটনাটি যদি এখানেই শেষ হতো তাহলে বলার কিছুই ছিলনা। একই দিন বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমনই আরেকজন ঘন্টার পর ঘন্টা রাজনীতি নিয়ে বক্তৃতা দিলেন। তার বক্তব্যের বিষয় -‘বর্তমান সরকার, বিরোধী দলের নেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং জাতির বিবেক’। শিক্ষিত এ পাগল একটানা বক্তব্য দেন কয়েক ঘন্টা।

এ দীর্ঘ সময় সাধারণ মানুষ, পথচারী, এমনকি আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মনোযোগ দিযে তার বক্তব্য শোনেন । মূল বক্তৃতার কিছু অংশ ছিল এরকম-“আমরা কোন গণতন্ত্রের মধ্যে বসবাস করছি। মানুষ হত্যার এ গণতন্ত্রকে আমি লাথি মারি, আমি এই পকেট সংবিধানকে লাথি মারি। যারা পাতানো নির্বাচনে ভোট দেয় তাদেরও ঘৃণা করি। আমি খালেদা জিয়াকে ঘৃণা করি, আমি হাসিনাকেও ঘৃণা করি। আমি এরশাদকে ঘৃণা করি। কারণ ওরা রাজনীতির নামে আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

এদেশের শিক্ষিত সমাজ ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর আর কেউ লেখাপড়া করে না। তখন আওয়ামীলীগ-বিএনপি করে। এ দেশের ডাক্তাররা চিকিৎসা করে না ; তারা রাজনীতি করে। এদেশের পুলিশ, আর্মি, বিডিআরের পেছনে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ তারা দেশের কোনো দায়িত্ব পালন করছে না, তারা হাসিনা-খালেদার দায়িত্ব পালন করে!! তারা আমাদের মানুষ মনে করে না। ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। আমরা আর কারও হাতের পুতুল হবনা।’’ তার এই বক্তব্যটি কি শুধুই পাগলের প্রলাপ ????? তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এরকম পাগল আরও আছে!!!!

কিছুদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এ ধরণের পাগলের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। পোষাক-পরিচ্ছদে স্বাভাবিক এসব লোক রাস্তার মানুষের সঙ্গে রহস্যজনক আচরন করছে।

কেউ রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, কেউ চায়ের দোকানের পাশে বসে গিয়ে চুপচাপ বক্তব্য শুনছে আর আফসোস করছে-‘‘ এইভাবে মানুষ গুম কইর‌্যা ফালায়, এজন্যই দেশটারে স্বাধীন করি নাই।’’ মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, সচিবালয়ের সামনে, যাত্রাবাড়ী, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মৌচাকসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় এসব শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত পাগলের বক্তব্য শোনা যায়।

এরা আসলে কারা ?? এরা কি গাড়ীতে অগ্নিসংযোগে নিহত মানুষের স্বজন, নাকি অবরোধে পুলিশের গুলিতে নিহতদের ছেলে-মেয়ে?? নাকি গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের স্বজন ? আসলেই তারা কি চায়??

রাজনীতিবিদদের কাছে দেশের মানুষের জিম্মি হয়ে যাওয়া, দেশের সচেতন মানুষ আর বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতা, নিয়তির যাঁতাকলে পিষ্ট জীবন-জীবিকার নিরন্তর সংগ্রামে থমকে থাকা , ক্রমাগত অগ্নিদগ্ধ হতে হতে- তীব্র আর প্রবল প্রতিবাদের অদম্য স্পৃহা কি এই পাগলদের জন্ম দিয়েছে?

যখন যে দল ক্ষমতায় যাচ্ছে দেশের টাকা নিজের পকেটে পুরছে। দেশের জিডিপি যেমন বাড়ছে এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের পাহাড় ! পাগলদের এ বক্তৃতায় সে পাহাড় থেকে বিন্দুমাত্র খসে এসে তাদের কপালে জুটবে না এসব তারা ভাল করেই জানে, তাইতো টাকার পরিবর্তে চিৎকার করে, টাকা বানানোর মেশিন দেবার জন্য।

তাদের জোড়ালো এ চিৎকার মন্ত্রীদের সম্পদের পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হয়ে যদি আরও কিছু মানুষ জেগে উঠে, রাস্তায় নেমে বক্তব্য দিতে শুরু করে দেশটা হয়তো পাগলাগারদ হয়ে যাবে (অর্থমন্ত্রীর ভাষায় অল আর রাবিশ), তবে তথাকথিত ভালোমানুষদের হাত থেকে হয়তো রক্ষা পাবে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এ ভূখন্ডটি।

গণমাধ্যম দেশপ্রেমিক এ পাগলদের বক্তৃতা নিতে পিছু ছুটে না, যতটা ছোটে বিমানবন্দরে- এরশাদ দেশছাড়া হলো কি হলো না এ সংবাদ সংগ্রহের জন্য।

এদেশে যে যখন ক্ষমতায় যায়; গণমানুষকে নিয়ে আন্দোলন করেই যে ক্ষমতায় গিয়েছে তা বেমালুম ভুলে যায়। আর যথারীতি একদিকে চলে সংবিধান সমুন্নত (যদিও ১৫ বার সংশোধন হয়েছে) রাখার অঙ্গীকার, অন্যদিকে চলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও।

এর কতটুকু দেশের স্বার্থে, কতটুকু জনগণের স্বার্থে, আর কতটুকু মসনদে যাবার বা মসনদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তা সবাই বুঝলেও এর বিকল্প যেন নেই!! আর তাইতো ‘সাকিরের’ মত উন্মাদরা, প্রেস ক্লাবের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতা দেয়া যুবকরা পাগল বলে সাব্যস্ত হয়, আর বাকীরা ফোটা বেলুনের মত চুপসে যাওয়াটাই নিয়তি বলে মেনে নেয় !

এ জাতির বড় দুর্ভাগ্য যে, পাগলরাই এখন কান্ডারির মত কথা বলছে, তথাকথিত সুস্থ স্বাভাবিক মানুষরা বলছেনা। সবচেয়ে দু:খজনক হলো, স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও এখনও স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কাড়াকাড়ি ! বাঙালি না বাংলাদেশী (যদিও পাসপোর্টে বাংলাদেশী লেখা হয়) এ বিতর্ক শেষ হয়নি!

বন্ধ হয়নি একে অপরকে স্বাধীনতার স্বপক্ষ-বিপক্ষ বলে গালাগালি করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার হীন প্রচেষ্টা। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে স্বাধীনতার মতো এমন নিরুঙ্কুশ বিষয় নিয়ে কেউ কি কখনও এমন নোংরা রাজনীতিতে মেতেছে ???

স্বাধীনতার এতবছর পরও- গণমাধ্যম কি পেয়েছে তার স্বাধীনতা ? সেন্সরশীপ নামের অজানা কোনো শঙ্কা গলা চেপে ধরার আগেই কি গণমাধ্যম নিজে থেকে কন্ঠ স্তব্ধ (সেলফ সেন্সরশীফ) করতে বাধ্য হচ্ছেনা?

তিস্তা নদীকে আগ্রাসনের কবল থেকে রক্ষার জন্য তরুণরা কি কোন মঞ্চ তৈরি করেছে ?? করেনি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল সুস্থরা (!) সব নিরবে মেনে নিলেও শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত তথাকথিত পাগলরা নেমে আসছে। টাকার মেশিনের কথা বলে যদি একদিন লাখ-লাখ পাগল রাস্তায় নেমে আসে তাহলে কি পরিণতি হবে আমাদের রাজনীতিবিদদের তা ভাবলেও গাঁ শিউরে ওঠে। এতসব পাগল রাখার জন্য পাগলাগারদ কি আছে?

এ দেশের মানুষের পূর্ব ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এরা সহজে জেগে উঠে না, এরা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। তবে সময়মতো জেগে উঠে- যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, পেটে লাথি পড়ে, তখন-জ্বলে উঠে ভয়ংকর দাবানলের মতো, আগ্নেয়গিরির মত।

কবি নজরুল আর সুকান্তের কবিতার মত তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে জেগে উঠে তারা। যেমন জেগেছিল এরা ৫২র ভাষা আন্দোলনে, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আর ৭১ এর মুক্তির সংগ্রামে। সব মুক্তিপাগলের যৌথ প্রযোজনায় পৃথিবীর বুকে নির্মিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ’ নামের যে দেশটির মানচিত্র, সে দেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

দেশ মাতার সেই পাগল সন্তানরাই তথাকথিত ভাল মানুষরূপী গণতন্ত্র রক্ষার দাবিদার রাজনীতিবিদদের নোংরা রাজনীতি থেকে দেশের সম্মান ও সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করবে এই আশাটি যে দুরাশা নয় সকল বাংলাদেশীই তা জানে এবং এটাও বোঝে এই সুনসান নিরবতা তো শুধুই নিরবতা নয়, সুনামীর ঠিক পূর্ব মহুর্ত।

রাকিব হাসান, লেখক ও সাংবাদিক
Rakibrony18dc@gmail.com

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G