WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

রহস্যঘেরা চার্লি চ্যাপলিন রহস্যঘেরা চার্লি চ্যাপলিন

রহস্যঘেরা চার্লি চ্যাপলিন

প্রকাশঃ অক্টোবর ৯, ২০১৫ সময়ঃ ৩:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

charliমঞ্চনাটক দেখতে গিয়ে একবার এক কিশোরের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হলেন আর্থার কোনান ডয়েল। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, ‘চালিয়ে যাও। তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে। অনেক নাম হবে তোমার।’ শুনে ছেলেটি প্রস্তাব করল, ‘আপনি আর আমি কি একসঙ্গে কাজ করতে পারি? দুজনের আয় না হয় সমান ভাগে ভাগ করে নেব।’ এমন ধৃষ্টতা দেখে কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলেন ডয়েল। বাচ্চা ছেলের আবদার ভেবে তিনি খুব একটা পাত্তা দেননি। বড় হয়ে সেই কিশোর সত্যিই দুনিয়া মাতিয়েছিল। আর তিনি হলেন চার্লি চ্যাপলিন। আজ পাঠকদের চার্লি চ্যাপলিনের জীবনের খুঁটিনাটি বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
জন্ম ও পরিবার

১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন চার্লি স্পেন্সার চ্যাপলিন৷ তবে তার জন্মস্থান কোথায় তা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য কারও জানা নেই। চ্যাপলিনের জন্মের দুই বছরের মাথায় তাঁর বাবা-মা’র মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ চার্লি চ্যাপলিনের পিতার নাম চালর্স চ্যাপলিন। তিনি মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। তার মায়ের নাম ছিল হানা। ১৮৯১ সালের আদমসুমারী থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্নাহ চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সাথে ওয়ালওয়ার্থ, দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটন জেলার অন্তর্গত।

রহস্যঘেরা চার্লি চ্যাপলিন

চার্লি চ্যাপলিনের জীবনটা বড়ই রহস্যময়। চ্যাপলিনের জন্ম থেকে শুরু করে নাম, পিতা, মাতা সবকিছুই যেনো এক রহস্য। যুক্তরাজ্যের জাতীয় আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, চার্লি চ্যাপলিনের আসল নাম হলো ইসরায়েল থর্নস্টেইন। চ্যাপলিন তাঁর ছদ্মনাম ।(তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা চ্যাপলিনের ছদ্মনাম নিয়ে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি)। চার্লি চ্যাপলিনের কোনো বৈধ জন্ম প্রমানপত্র পাওয়া যায়নি, তাই তার জন্ম নিয়ে সর্বদাই কুয়াশা রয়েছে । সংবাদ মাধ্যম নানা সময়ে নানারকম তথ্য দিয়েছে তার জন্মস্থান সম্পর্কে । এমনকি তার চলচ্চিত্র জীবনের প্রথমদিকে চ্যাপলিন নিজেও একবার বলেছেন যে তিনি ফ্রান্সের ফঁতেউব্ল শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, এমআইফাইভের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এমন হতে পারে যে চ্যাপলিনের জন্ম রাশিয়ায়। তিনি একবার রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। আবার এমনোও হতে পারে যে চ্যাপলিন ইহুদি বংশোদ্ভূত । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি বই লিখলেন, সিনেমা করলেন, বক্তৃতাও দিলেন। সেই সময় তার সখ্যতা বাড়লো কমিউনিষ্টদের সাথে। তখন তিনি করেছিলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘মানুষকে ভালোবাসার জন্য যদি আমাকে কমিউনিষ্ট বলা হয়, তো আমি কমিউনিষ্ট’।

জীবনের ট্রাজেডি

চার্লি চ্যাপলিনকে ছোটবেলায় সীমাহীন দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু একসময় কিন্তু তাদের পরিবারের অবস্থা মোটামোটি ভালো ছিল। চার্লি চ্যাপলিনের বাবা সিনিয়র চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন জনপ্রিয় একজন সংগীত শিল্পী। কিন্তু মদের নেশায় পড়ে গান-বাজনা ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ শুধু মদ নিয়েই পড়ে থাকতেন। জনপ্রিয়তায় পাশাপাশি আর্থিকভাবেও দেওলিয়া হয়ে যান সিনিয়র চ্যাপলিন। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন সিনিয়র চ্যাপলিন এবং এই অসুখেই তিনি মারা যান। এরপর পিতৃহারা চ্যাপলিন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়েছেন। শৈশব সম্পর্কে চার্লি চ্যাপলিন বলেন, যদি ভাগ্য সহায় না হতো, তাহলে আমি লন্ডনের পথে পথে চুরি করে বেড়াতাম। আর, বেওয়ারিশ লাশ হয়ে কবরে যেতে হতো। মা ও ভাইয়ের সাথে দক্ষিণ লন্ডনের একটি শহরে বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকতেন চ্যাপলিন। ভাড়া দিতে না পারায় প্রায়ই তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হতো। এইভাবে তাড়া খাওয়ার চাইতে চ্যাপলিন পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমাতেই বেশি পছন্দ করতেন। চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে লোকের বাড়ির বাসন মাজার কাজে লেগে পড়েন চার্লি। এক কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠচেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাল্যকাল কেটেছে তার অত্যন্ত দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে। ফুটপাথে রাত কাটানো এমনকি পচা খাবার কুড়িয়েও খেতে হয়েছে চার্লিকে। চার্লির জন্মের পর বাবা-মার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চার্লি মার সঙ্গেই থেকে যান এবং বলা যায় তাঁর হাতেই চার্লির হাতেখড়ি হয় অভিনয়ের। কিন্তু এক সময় চার্লি চ্যাপলিনের মা হ্যানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চ্যাপলিন সে সময় বিভিন্ন বারের সামনে নেচে টাকা উপার্জন করতেন। একসময় অপুষ্টির অভাবে চ্যাপলিনের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তারপর চ্যাপলিন তার মাকে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই তার মা দীর্ঘ ১৭টি বছর থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মাকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে আসার পর অভিভাবকহীন চ্যাপলিনকে একটি এতিম খানার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এতিমখানার নিয়ম না মানার কারণে সেখানে তাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করা হতো। এতিমখানার জীবনের ওই অভিজ্ঞতা চ্যাপলিনের সিনেমাম জগতে ভালো প্রভাব ফেলেছিল।
জীবনের প্রথম কৌতুকাভিনয়charli 5

চার্লি চ্যাপলিনের মা থিয়েটারে কাজ করতেন। ঘটনাটি চ্যাপলিনের পাঁচ বছর বয়সের। একদিন তার মা মঞ্চে গান গাইছিলেন। আর ছোট্ট চ্যাপলিন বসে বসে মায়ের অভিনীত গীতনাট্য দেখছিলেন। সে সময় লন্ডনের খেটে খাওয়া শ্রমিক, ভবঘুরে কিংবা নেশাতুর লোকেরই বিনোদনের জন্য থিয়েটারে ভিড় জমাতো। মঞ্চে গায়িকা বা নর্তকীর হেরফের হলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে থিয়েটার মাথায় তুলে নিতো। মঞ্চে গান গাইছিলেন চ্যাপলিনের মা হানা চ্যাপলিন। চ্যাপলিনের মায়ের গলায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। গান গাওয়ার এক পর্যায়ে চ্যাপলিনের মায়ের গলার স্বর ভেঙ্গে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। কিন্তু মঞ্চ ভর্তি দর্শককে বুঝ দেওয়ার জন্য মায়ের জায়গায় চ্যাপলিনকে মঞ্চে ওঠানো হয়। চার্লি তার মায়ের পরিবর্তে স্টেজে গান গাইতে শুরু করেন, ‘Jack Jones well and known to every body’ । তার গানে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে স্টেজে কয়েন ছুঁড়তে থাকে । চাপলিন হঠাৎ অঙ্গভঙ্গিসহ বলে ওঠেন, ‘আমি এখন গান গাইব না; আগে পয়সাগুলো কুড়িয়ে নিই, তারপর আবার গাইবো।’ এটি ছিল দর্শকের হাসির জন্য চার্লির প্রথম কৌতুকাভিনয়।
অভিনয় জীবনের শুরু

১৮৯৮ সালে নয় বছর বয়সে চ্যাপলিন একটি নাচের দলে যোগ দেন। ওই দলটি নাচ দেখিয়ে কিছু অর্থ-কড়ি রোজগার করত। সেই রোজগার দিয়েই চ্যাপলিন দিন কাটাতেন। ঐ নাচের দলে চ্যাপলিন কমেডিয়ানের ভূমিকা পালন করতেন। ওই নাচের দলেই চ্যাপলিন নিজের মেধার প্রমাণ রাখতে শুরু করেন। তখন চ্যাপলিনের উপর তার সহকর্মীরা ঈর্ষান্বিত বোধ করতে থাকেন। কিন্তু অদম্য চ্যাপলিন শেষ পর্যন্ত নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ‘ফ্রেড কার্নো’ থিয়েটার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ড থেকে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে৷ সেখানেই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে রাজ্য বিস্তার শুরু৷ ১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। মুভিটির নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। ছবির পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এই ছবিটির প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট। এই ছবিতে চার্লি অভিনয় করেন খামখেয়ালি উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির যুবকের। তবে মু্ভিটি মুক্তি পাওয়ার পর ব্যবসায়িকভাবে তেমন সফলতা লাভ করতে পারেনি। তবে অভিনেতা চ্যাপলিন ঠিকই তার অভিনয় দিয়ে প্রশংসা কুড়াতে পেরেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি চার্লি চ্যাপলিন মুভি পরিচালনায়ও হাত দেন। ১৯১৪ সালে চ্যাপলিন পরিচালিত ১ম মুভি ‘কট ইন এ ক্যাবার’ মুক্তি পায়। মুভিটি সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।‘ড্রামাটিক মিরব’ পত্রিকায় লেখা হয়; চার্লির কোনও তুলনা হয় না। তিনি অদ্বিতীয়। একই বছর নিজের লেখা কাহিনী দিয়ে চ্যাপলিন নির্মাণ করেন ‘কট ইন দি রেন’ মুভিটি। এ ছবিটিও প্রচুর দর্শক প্রিয়তা লাভ করে। ১৯১৫ সালে চ্যাপলিন অভিনয় করেন ‘দ্য ট্র‌্যাম্প’ বা ‘ভবঘুরে’ মুভিতে। এই মুভিটি মুক্তির পর চার্লির জনপ্রিয়তা স্রোতের বেগে বেড়ে যায়। এই মুভিতে চ্যাপলিন শুধুমাত্র দর্শকদের মজাই দেন নি, শেষ দৃশ্যে চার্লি তার অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয়কে মোচড় দিয়ে দেন। চার্লির চাপা কষ্টে দর্শকদের মন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এরপর ১৯১৭ সালে ‘দ্য ইমেগ্রান্ট’ নামে একটি মুভি নির্মাণ করে চ্যাপলিন। ১৯১৮ সালে নির্মাণ করেন ‘এ ডগস লাইফ’ মুভিটি। এই মুভিটিতে চ্যাপলিন দরিদ্র মানুষের জীবন ও একটি কুকুরের জীবনের মধ্যে পার্থক্য ফুটিয়ে তোলেন। একই বছর তিনি নির্মাণ করে ‘শোল্ডার আর্মস’ নামে আরেকটি বিখ্যাত মুভি। ১ম বিশ্বযুদ্ধকে বিদ্রুপ করে এই মুভিটি নির্মাণ করা হয়। ১৯২১ সালে নির্মাণ করেন ‘দ্য কিড’ মুভিটি। চার্লি চ্যাপলিনের জনপ্রিয়তার পেছনে যেই মুভিটির অবদান অন্যতম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর আমেরিকার বাস্তবচিত্রের এক প্রতিছবি বলা যেতে পারে ছবিটিকে। বিশেষ করে হাজার হাজার অনাথ শিশুদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল এবং দারিদ্র্যের কারণে কিভাবে মায়েরা তাদের শিশু সন্তানকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছিল তার একটি প্রামাণ্য দলিল বলা যেতে পারে এই ছবিটিকে। এই ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন এবং শিশু জ্যাকি কুগানের অভিনয় দর্শকদের বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিল। ১৯২৪ সালে এসে চ্যাপলিন নির্মাণ করেন তার আরেক জনপ্রিয় মুভি ‘দ্য গোল্ড রাশ’। এই মুভিটির কাহিনী ছিল ভয়াবহ। ১৮৯৮ সালের স্বর্ণ-অভিযানের একটি সত্যিকারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চ্যাপলিন এ ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন। বরফের মরুভূমিতে সোনা পাওয়া যাচ্ছে এমন এক গুজবের উপর ভিত্তি করে ১৫০ জন অভিযাত্রী বরফের মরুভূমিতে পাড়ি জমান। দুর্ভাগ্যক্রমে মাত্র ১৮ জন জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন। যারা জীবিত ছিলেন তারা মৃতদের মাংস, কুকুরের মাংস এমনকি জুতোও সিদ্ধ করে খেয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে চ্যাপলিন নির্মাণ করেন ‘দ্য সার্কাস’ মুভিটি। এই মুভিটিতে চ্যাপলিন তুলে ধরেনপ্রমোদ শিল্পের অধিপতিদের টাকা রোজগার করার নোংরা নেশাকে। শিল্পী বা শিল্পের প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ১৯২৮ সালেই আমেরিকাতে অস্কার পুরস্কার নিয়ম চালু করা হয়। সে বছরই অলরাউন্ডার চার্লি চ্যাপলিন ‘দ্য সার্কাস’ মুভিটির জন্য লেখক, প্রযোজক, অভিনেতা এবং পরিচালক হিসেবে অস্কার পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৩১ সালে চ্যাপলিন যে মুভিটি নির্মাণ করেন সেই মুভিটি দেখার জন্য ‘লস এঞ্জেলস’ এর থিয়েটার হলে সে সময়ের বিখ্যাত সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ভিড় করেছিলেন। দর্শকের ভিড়ে চলাচলের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মুভিটির নাম ছিল ‘সিটি লাইটস’। এরপর তিনি নির্মাণ করেন ‘মডার্ণ টাইমস’ মুভিটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চার্লি চ্যাপলিন নির্মাণ করেন ‘মঁসিয়ে ভের্দু’ মুভিটি। এই মুভিটি মুক্তি পাওয়ার বুর্জোয়া সমালোচকরা চ্যাপলিনের পেছনে উঠেপড়ে লাগেন। কেননা চ্যাপলিন এই মুভিটিতে ফুটিয়ে তোলে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অনাচারকে। এই মুভিটির কারণে চ্যাপলিনকে আমেরিকায় বসবাসেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আমেরিকা ছাড়ার আগে চার্লি চ্যাপলিন ‘লাইম লাইট’ নামে আরেকটি মুভি নির্মাণ করেন। লাইমলাইট ছবিটির শেষ দৃশ্যটি শতবর্ষের সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম একটি অসাধারণ দৃশ্য। বিখ্যাত ফরাসী নাট্যকার ও অভিনেতা মলিয়েরও ঠিক এভাবেই অভিনয় করতে করতেই মঞ্চের ওপরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সোফিয়া লরেন ও মার্লন ব্র্যান্ডোর সঙ্গে ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’ ছবিতে জীবনে শেষবারের মতো অভিনয় করেছিলেন চ্যাপলিন৷ তবে ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হতে পারেনি৷
চ্যাপলিন কেনো এতো জনপ্রিয়?

কী এমন আছে চ্যাপলিনের ছবিগুলোর মধ্যে! কেন ছবিগুলো মানুষকে এতো মোহগ্রস্ত করে তুলে? সে সময়কার দুঃখী মানুষগুলো যেনো আশ্রয় খুঁজা শুরু করলো চ্যাপলিনের কাছে । চ্যাপলিন নির্বাক ছবি করতেন । যার ছবিতে কিছু শোনা যায় না । থাকে শুধু কিছু তামাশা । সেই তামাশার অতল গভীরে লুকিয়ে থাকে মানুষের জীবনের হাহাকার, রূঢ় বাস্তবতার বিরুদ্ধে মানুষের অবিরাম যুদ্ধ ।
স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত

চার্লি চ্যাপলিন, একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও সংগীতকার। কিন্তু এসব কোনো কিছুরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নি চার্লি চ্যাপলিন। একাডেমিক শিক্ষা বলতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ গ্রহণ করেছেন চ্যাপলিন। এমনকি চেলো, বেহালা ও পিয়ানো বাজানেতোও ছিলেন সিদ্ধহস্ত৷ এসবও শিখেছিলেন কোনো গুরুর সহায়তা ছাড়াই৷ প্রতিটি ছবির সংগীত রচনা করেছেন নিজে৷

চার্লি চ্যাপলিনের জীবনের মজার একটি ঘটনা

চার্লি চ্যাপলিন তখন পৃথিবী-বিখ্যাত। তার অনুকরনে অভিনয়ের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গোপনে চার্লি চ্যাপলিন নাম দেন সেই প্রতিযোগিতায়। মজার বিষয় হলো প্রতিযোগিতা শেষে দেখা গেলো ১ম ও ২য় স্থান অর্জন অন্য দুজন প্রতিযোগী। চার্লি চ্যাপলিন হন তৃতীয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

চার্লি জীবনে অনেক ছবি করেছেন এবং দেশ-বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন । জীবনে কৃতিত্বের জন্য রানী এলিজাবেথ কতৃক তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন । ১৯৬৪ সালে চার্লির আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় ( My Autobiography ) । বইটি সর্বকালের বেস্ট সেলার হিসেবে বিক্রি হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার তৈরি ‘মূর্তি’ রয়েছে । কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক ডিগ্রিসহ ফরাসি সরকারে দেওয়া অর্ডার অব দ্য লিজিওন। তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন গ্লোব ও একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার জিতেন। এছাড়া তার ছয়টি চলচ্চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস বিশেষভাবে সংগ্রহ করেছে।
প্রেম-ভালোবাসাcharli 2

অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনও প্রেমে পড়েছিলেন। একবার নয়, একাধিকবার। চার্লি চ্যাপলিন সর্বপ্রথম প্রেমে পড়েছিলেন হেটি নামের এক অপূর্ব সুন্দরীর। মেয়েটির বাড়ি ছিল লন্ডনেই। ১৯০৮ সালে, ১৯ বছর বয়সী চার্লি দক্ষিণ লন্ডনের এক থিয়েটারে অভিনয় করছিলেন। একই হলে অভিনয় করতে আসত হেটি। প্রথম দর্শনেই যেকোনো যুবকের মন কেড়ে নেওয়ার মতো রূপ তার। মন কাড়ল চার্লি চ্যাপলিনের। প্রথম দিনের ঘটনা। একসময় মেয়েটির নাচ শেষ হয়ে যায় । মঞ্চের পর্দা নেমে আসে। কিন্তু চার্লির কোনো পরিবর্তন নেই। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। অবাক চোখে তখনো তিনি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চলভাবে। হঠাৎ একজনের ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। অত্যন্ত ব্যাকুল অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবেন। আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। বুকটা দুরু দুরু করছে। কি করবেন ? প্রথম কি কথা বলবেন, তিনি মেয়েটাকে। সাত-পাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটিকে বললেন, খুব সুন্দর নেচেছো তুমি। কি নাম তোমার? সে উত্তর দিল : হেটি। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল চার্লি চ্যাপলিনের। অনেক কথা হলো উভয়ের মধ্যে। কথা থেকে প্রণয়। প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই দু’জন প্রেমে পড়ে গেলেন। হেটি আর চ্যাপলিন। দেখতে দেখতেই তাদের অন্তরঙ্গতা এত ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল যে, কেউ কাউকে একদিন না দেখে থাকতে পারেন না। এক মুহূর্ত দূরে থাকতে ভীষণ কষ্ট হয়। অভিনয়ের কাজে চ্যাপলিনকে দূরে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে তার একটুও ভালো লাগে না। অভিনয়ের ফাঁকে সামান্য অবসর পেলেই তিনি ছুটে যেতেন প্রিয়তমা হেটির কাছে। এমনিভাবে দুটি বছর কাটার পর হঠাৎ একদিন চার্লি চ্যাপলিনকে চলে যেতে হয় আমেরিকায় অভিনয়ের কারণে। প্রিয়তম চার্লিকে বিদায় জানাতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসাল হেটি। নিজেও কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল চার্লি চ্যাপলিন। ওখানে গিয়ে নিয়মিত খবর রাখতেন তিনি হেটির। অবশেষে একদিন দেশে ফিরে এলেন চার্লি। কিন্তু তার সে আশা আর পূর্ণ হলো না। শুনলেন হেটির বিয়ে হয়ে গেছে। তাও আবার হেটির নিজের ইচ্ছাতে ।

বিয়ে

বিয়ে নিয়ে চার্লি চ্যাপলিনের জীবনে রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। ১৯১৮ সালে মিলড্রেড হ্যারিসকে ১ম বিয়ে করেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯২০ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর ১৯২৪ সালে পুনরায় বিয়ে করেন ১৬ বছর বয়সী উঠতি অভিনেত্রী লিটা গ্রে’কে। বিয়ের পরপরই তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটতে থাকে। দাম্পত্য জীবনে বাড়তে থাকে তিক্ততা। বিয়ের প্রায় তিন বছর পরে দশ লাখ ডলারের সমঝোতায় চার্লি চ্যাপলিন ও লিটা গ্রে’র মধ্যেকার বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। এরপর ১৯৩৬ সালে বিয়ে করেন পোলেট গোদা কে। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত টেকে তাদের বিয়ে। ১৯৪৩ সালে উনা ও-নিল এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চ্যাপলিন। জীবনের বাকিটা সময় উনা ও-নিল এর সাথেই কাটিয়েছেন চ্যাপলিন।

নিজের সম্পদ থেকে বঞ্চিত

অভিয়ন করে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি অনেক অর্থ-সম্পদেরও মালিক হয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯২৭ সালের ১১ জানুয়ারি নিজের অর্জিত ১.৬ কোটি ডলারের সম্পত্তির উপর চার্লি চ্যাপলিনের অধিকার খর্ব করার ঘোষণা দেন আদালত। ভরণপোষণের নিশ্চয়তা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তারই দ্বিতীয় স্ত্রী লিটা গ্রে চ্যাপলিন। মূল কারণটা আর কিছু নয়, বিবাহবিচ্ছেদ।

চার্লি চ্যাপলিন কি কমিউনিস্টপন্থী ছিলেন?charli 3

চার্লি চ্যাপলিন বেশ কিছু বিতর্কিত রাজনৈতিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। এখানে চ্যাপলিন জার্মানির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের একটি ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রে অভিনয় করেন। আর এসবের সূত্র ধরেই তাঁকে কম্যুনিস্টপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা চ্যাপলিনের ছদ্মনাম নিয়ে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি। তবে এটা ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্রকে ভালো চোখে দেখতেন না চ্যাপলিন। ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ব্যাপারে তিনি অনিচ্ছা দেখিয়ে সুইজারল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন।
চার্লি চ্যাপলিন ও আইনস্টাইনের সাক্ষাৎcharli 4

অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের যখন প্রথম চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে দেখা হলো তখন আইনস্টাইন চ্যাপলিনকে বললেন- আপনাকে আমি যে কারণে খুব পছন্দ করি সেটা হলো আপনার বিশ্বজনীন ভাষা। আপনি যখন অভিনয় করেন, তখন আপনি হয়তো কোনো ডায়লগই বলছেন না, কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষ ঠিক বুঝতে পারে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন এবং তারা সেজন্য আপনাকে অসম্ভব ভালোও বাসে। উত্তরে চার্লি চ্যাপলিন বললেন- ড. আইনস্টাইন, আপনাকে আমি তার চেয়েও বড়কারণে পছন্দ করি। আপনার থিওরি অফ রিলেটিভিটিসহ অন্যান্য গবেষণার বিন্দুবিষর্গ কেউ বুঝে না, তবুও গোটা পৃথিবীর মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করে।
মৃত্যু ও তার পরের ঘটনা

১৯৭৭ সালের শুরু থেকেই চার্লি চ্যাপলিনের শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। ১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে চার্লি প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডের কার্সিয়ারে । ওই দেশের ডিঙ্গিতে চার্লির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু এর পর ঘটে একটা দুর্ঘটনা । পরের বছর চার্লির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায় । ১৬ দিন পরে তা উদ্ধার করে আবার সমাহিত করা হয় ।

এক নজড়ে চার্লি চ্যাপলিন:

পুরো নাম: স্যার চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন

জন্ম: ১৬ই এপ্রিল, ১৮৮৯, লন্ডন, ইংল্যান্ড

মৃত্যু: ২৫ শে ডিসেম্বর, ১৯৭৭, ভিভে, সুইজারল্যান্ড

পেশা: অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও সংগীতকার

বাবা: চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন সিনিয়র

মা: হান্নাহ হেরিয়েট চ্যাপলিন

স্ত্রী: মিলড্রেড হ্যারিস (১৯১৮ – ২০), লিটা গ্রে (১৯২৪ – ২৭), পোলেট গোদা (১৯৩৬ – ৪২), উনা ও-নিল (১৯৪৩ – ৭৭)

 


সবাই যা পড়েছে

‘উসেইন বোল্ট’ কচ্ছপ !

পৃথিবী কাঁপানো দশ জাহাজ

ইউরোপের সেরা সাতটি রেল স্টেশন

রহস্যময় তিব্বত নগরী

বসবাসের যোগ্য পাঁচ শহর


আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G