সাঁওতাল বিদ্রোহের মহানায়িকা ইলা মিত্র

প্রকাশঃ অক্টোবর ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

ila mitroইলা মিত্র জমিদারের পুত্রবধূ হয়েও জমিদার ও জোতদারদের শোষণ আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন এক দুর্বার আন্দোলন। তার এ সংগ্রামে এক হয়ে গিয়েছিল বাঙালি ও আদিবাসী সাঁওতাল।

১৮ অক্টোবর নাচোলের সাঁওতাল বিদ্রোহের মহানায়িকা ইলা মিত্রের ৯০তম জন্মদিন। ইলা মিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীন বাংলার অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। লেখাপড়া করেছেন কলকাতার বেথুন স্কুল ও বেথুন কলেজে।

কৈশোরে খেলাধুলায় তিনি ছিলেন অসম্ভব তুখোড়। ১৯৩৫ থেকে `৩৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য জুনিয়র অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নের তকমাটা ঝুলেছে তার গলায়। তিনিই প্রথম বাঙালি মেয়ে, যিনি ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিক বাতিল হয়ে গেলে তার আর এ ক্রীড়াযজ্ঞে অংশ নেওয়া হয়ে ওঠেনি। গত ১৩ অক্টোবর ছিল তার মৃত্যুদিবস (২০০২)।

চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে ফসলের `তেভাগা` প্রতিষ্ঠার দাবিতে ইলা মিত্র হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি! কৃষকরা গায়ে-গতরে খেটে ফসল ফলায়, সব খরচ জোগায়। তারাই ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ পাবে। এই দাবিতে গড়ে উঠেছিল তেভাগা আন্দোলন। রাজশাহী জেলার, বিশেষ করে নাচোলের কৃষকদের এই আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইলা মিত্রের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।

স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আদিবাসী-বাঙালি সবার মন জয় করে নেন। ক্রমশ হয়ে ওঠেন সাঁওতাল ও অন্যান্য কৃষকদের `রানীমা`। কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে দারোগাসহ চারজন পুলিশ নিহত হলে পাকিস্তানি শাসকরা আদিবাসীদের ওপর প্রচন্ড নিপীড়ন চালাতে শুরু করে। ভেঙে পড়ে নাচোলের প্রতিরোধ আন্দোলন। চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় ইলা মিত্রকে। তাকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করা হয়। বিচারে ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। ইলা মিত্র রাজশাহী ও ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন ১৯৫০-৫৪ সাল পর্যন্ত।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় গেলে চিকিৎসার প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতা চলে যান ইলা মিত্র। আর পূর্ববাংলায় ফিরে আসেননি। এরই ফাঁকে এমএ পাস করে কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬২-৭৮ সময়ের মধ্যে মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি পরপর চারবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে আবার দু`বার ছিলেন বিধানসভায় কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি লিডার। রাজনৈতিক কারণে পশ্চিম বাংলাতেও তাকে চারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৫ সালে ইলা সেনের বিয়ে হয় মালদহের জমিদারপুত্র ও কমিউনিস্ট নেতা রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে। সংগ্রামী এই নারীকে নিয়ে আমাদের দেশে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ‘নাচোলের রানী’। ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন মানুষের কাছে আজও অনুপ্রেরণার উৎস।

প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G