জুলাই নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে না: ছাত্রশিবির সভাপতি
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সতর্ক করেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। তার মতে, জুলাই আন্দোলন হঠাৎ করে হয়নি; এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ওপর শোষণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কাজ করেছে।
সোমবার রংপুরের কারমাইকেল কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নবীন বরণ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ‘লগি-বৈঠা’ কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সেই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়। ২৮শে অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপণ হয়েছিল।”
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের নানা অপশাসনের পরও জুলাইয়ে তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠায় শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদ ধরে রাখতে পারেননি। জীবন থাকতে কাউকে জুলাই নিয়ে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এটি হঠাৎ করে হয়নি, দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থান মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল এবং সাধারণ মানুষের চোখে এটি ছিল একটি অরাজনৈতিক গণঅভ্যুত্থান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের সামনে আসার ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রশিবিরের সদস্য সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ সারজিস আলম জানান, “জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজপথে ছিল, পরামর্শ দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছে।”
জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ একাত্তরকে তাদের নিজস্ব সম্পদ ও ব্যবসা ক্ষেত্রে রূপান্তরিত করেছিল। তিনি বলেন, “২৪ এর পরে কেউ এই ধারা পুনরায় চালানোর চেষ্টা করলে তার দায় দলকেই নিতে হবে। একাত্তরের মর্যাদা সমুন্নত রেখে ২০২৪-এর প্রেরণা ও শহীদদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতেও জোর দিয়েছেন। “এখন পর্যন্ত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমরা চাই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত হবে।”
শহীদ পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আবু সাঈদ ও প্রত্যেক শহীদ পরিবারের স্বপ্ন আমরা জীবন দিয়ে হলেও বাস্তবায়ন করব। শহীদ পরিবারের কান্না এখনও থামেনি। তাদের সন্তানদের জন্য আমরা জুলুম বা নতুন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হতে দেব না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে কোনো হল দখলের রাজনীতি, ক্যান্টিনে বিনামূল্যের খাবারের নামে অন্যের ওপর চাপানো, বা কাউকে মিছিলে নিয়ে যাওয়া–এই ধরনের রাজনীতি আর চলবে না।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামাত ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, মহানগর সভাপতি এটিএম আদম খান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক আরমান পাটোয়ারী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মোহাম্মদ সুমন সরকার, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, মহানগর সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, সাবেক রংপুর শহর সভাপতি গোলাম কিবরিয়া এবং সাবেক কারমাইকেল কলেজ সভাপতি মোহাম্মদ শাফিউল ইসলাম শাফি।












