চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: ফাঁকা উড়ালপথ, নিচে জ্যামের শহর

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৫ সময়ঃ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার পর চট্টগ্রামবাসী পেয়েছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শহর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজটমুক্ত সংযোগ তৈরির লক্ষ্যেই নির্মিত হয়েছিল ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালপথ। ২০২৫ সালে উদ্বোধনের সময় একে বলা হয়েছিল ‘চট্টগ্রামের ট্রাফিক মুক্তির মহাসড়ক’। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ২০২৫ সালে প্রতিদিন গড়ে ৬৬ হাজার ৩২৩টি গাড়ি চলাচল করবে। কিন্তু উদ্বোধনের ১০ মাস পরেও প্রতিদিন গড়ে গাড়ি চলছে মাত্র ৮ হাজার ১১৯টি। তাই চট্টগ্রাম শহরের জ্যাম রয়ে গেছে আগের মতোই, আর এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় ফাঁকা।

চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (সিডিএ) এর তথ্য মতে, জানুয়ারীতে উদ্বোধনের পর সেই মাসে মোট গাড়ি চলেছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৩৭টি। ফেব্রুয়ারীতে সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার ২৩৪। এরপর মার্চে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪২, এপ্রিলে ২লাখ ৫২ হাজার ১৪৭, মে তে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৯, জুনে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৭০, জুলাইয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৬, আগস্টে ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৪, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৮০ ও অক্টোবরে চলে ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৯টি গাড়ি। গত ১০ মাসে মোট ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮ গাড়ি চলাচল করছে।

এই যানবাহনগুলো হতে মোট রাজস্ব আয় হয় ১৬ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭৮০ টাকা। যেখানে জানুয়ারীতে আয় হয় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৩১ হাজার ২৮০ টাকা। ফেব্রুয়ারীতে আয় ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৩০ টাকা, মার্চে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৮০ টাকা, এপ্রিলে ১ কোটি ৭১ লক্ষ ১৩ হাজার ২২০ টাকা, মে মাসে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ৯ হাজার ৭৯০ টাকা, জুন মাসে ১ কেটি ৬৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৫০ টাকা, জুলাই মাসে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৪০ টাকা, আগস্টে ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৭০ টাকা, সেপ্টেম্বরে ১ কোটি ৮১ লক্ষ ২৮ হাজার ২৮০ টাকা ও অক্টোবরে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৪০ টাকা আয় হয়।

র‍্যাম্প কম, প্রবেশপথ জটিল

মূল পরিকল্পনায় ছিল ১৫টি র‍্যাম্প, যাতে নগরীর বিভিন্ন অংশ থেকে সহজে ওঠানামা করা যায়। কিন্তু বাস্তবে তৈরি হয়েছে মাত্র ১টি। খরচ ও ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতায় বাদ গেছে বাকি ৬টি। অবশিষ্ট ৮টির মধ্যে ৫টির কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। শিগগরিই শেষ কাজ হওয়া র‌্যাম্পগুলো চালু করার কথা জানান তিনি।
চালকরা বলছেন, অনেক জায়গা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে গেলে ঘুরপথে যেতে হয়। আগ্রাবাদ, একে খান ও লালখান বাজার এলাকার অনেকেই মনে করেন, ‘উঠার আগে এত ঘোরাঘুরি করতে হয় যে নিচ দিয়ে গেলেই সময় বাঁচে।’

টোল রেট ও জনসচেতনতার অভাব

চালুর পর উচ্চ টোল রেটের কারণে সাধারণ চালকরা এক্সপ্রেসওয়ে এড়িয়ে চলেন। পরে সরকার টোল কিছুটা কমিয়ে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেয়, কিন্তু তাতেও ব্যবহারে আশানুরূপ বৃদ্ধি হয়নি।
অনেকে জানেন না কোন র‍্যাম্প কোথায়, আবার কেউ কেউ ধারণা করেন টোল দিতে হয় দুইবার। সাইনবোর্ড ও দিকনির্দেশনার অভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব নয়।

সময় ও ব্যয়—দুই-ই বেড়েছে

২০১৭ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩,২৫০ কোটি টাকা। তবে নির্মাণ বিলম্ব, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,৩০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় আট বছর, যেখানে নির্ধারিত সময় ছিল চার বছর। অর্থনীতিবিদদের মতে, সময়মতো শেষ না হওয়া অবকাঠামো প্রকল্প শুধু আর্থিক চাপই বাড়ায় না, জনআস্থাও কমিয়ে দেয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার সুবাস বড়ুয়া বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পেতে হলে দ্রুত র‍্যাম্পগুলো চালুর পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সমীক্ষা অনুযায়ী গাড়ি কম চলা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের জন্য বেশি দেখানো হয়। বাস্তবতা তা নয়।

সিডিএর উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আবু ঈসা আনসারী বলেন, প্রকল্পের পুরো বাস্তবায়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি। পূনার্ঙ্গ বাস্তবায়ন করা হলে ফলাফল পাওয়া যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথাও জানান তিনি।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G