ঈদে ঘুরে আসুন আলীর সুড়ঙ্গ !

প্রকাশঃ জুলাই ৭, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

জহির উদ্দিন মিশু

Alikadamদুই পাশেই সবুজ বৃক্ষ। ঢালগুলো ছায়া ফেলেছে সড়কে। পিচঢালা অাঁকাবাঁকা সড়ক। তার পাশ দিয়েই ছুটে চলেছে মাতামুহুরী নদী। নদীর দুই তীরেই তামাক ক্ষেত। নিচে নদীর জলে ভেসে চলে বাঁশের ভেলা ও পালতোলা নৌকা। পূর্বদিকে চোখ দিলেই কালো পাহাড়। তারই পাড়ে মারমা আদিবাসীদের বাস। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে যেতে যেতে চোখে পড়ে আরেকটি বড় পাহাড়। এই আলীর পাহাড়েই রয়েছে রহস্যজনক ৩-৪টি সুড়ঙ্গ। এসব সুড়ঙ্গ নিয়ে এলাকায় নানা রকমের কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এই সুড়ঙ্গকে ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ বা ‘আলীর সুরম’ বলে। দুই বন্ধু মিলে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য আলীকদমের আলীর সুড়ঙ্গ দেখা।

সকাল সাতটায় যাত্রা শুরু। কক্সবাজার থেকে সড়কপথে চকরিয়া। এরপর মাতামুহুরী নদী থেকে ডিঙি নৌকায় নদীপথে যাত্রা। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল আদিবাসী দুই তরুণ। মূলত তাঁরা আমাদের গাইড। সেতু থেকে নৌকায় আধা কিলোমিটার গেলে তৈন নদী। এই শাখা নদীর চার কিলোমিটার গেলেই আলীর পাহাড়। নৌকা থেকে নেমে পাহাড়ের দিকে আবার হাঁটা শুalikadam3রু। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পানি মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি। বিস্তৃত সবুজের বুক চিরে যাচ্ছি। পিচ্ছিল পথ। এক কদম এগোয় তো দুই কদম পেছনে যায়। এভাবে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হাঁটলাম।

অবশেষে সুড়ঙ্গের দেখা। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুটো উঁচু পাহাড়ের একটির মধ্যভাগে দেখা যাচ্ছে সুড়ঙ্গে ঢোকার প্রবেশমুখ। নিচ থেকে প্রবেশমুখ পর্যন্ত ওঠানামার জন্য রাখা হয়েছে একটি লোহার সিঁড়ি। সিঁড়ি ভেঙে সুড়ঙ্গের মুখে পা রাখলাম। মনে হলো এভারেস্ট জয় করেছি। সুড়ঙ্গের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। একবারে গা ছমছমে অন্ধকার। এর মধ্যে এক ঝাঁক বাদুড় উড়ে গিয়ে ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিল। পকেট থেকে মুঠোফোন ফোন বের করে আলো জ্বালানো হলো। সেই আলোয় সুড়ঙ্গের অন্ধকার কিছুটা দূর করে সামনে পা ফেলছি। সুড়ঙ্গের নিচে জমে থাকা অল্পস্বল্প পানিতে পথটি পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আদিবাসী তরুণেরা আমাদের হাত ধরে টেনে ৬০-৭০ মিটার পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। ভয়ংকর গুহা। আর সামনে এগোনো যাচ্ছে না। নিচে সাপসহ বন্য প্রাণী থাকতে পারে এই আতঙ্কে ভর করেছে।alikadam৪৫

এবার ফিরতি পথ ধরলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল পাঁচটার ঘরে। আদিবাসী তরুণেরা জানান, এই সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটারের মতো হবে। তাঁরা পর্যটকদের সঙ্গী হয়ে ২০০ মিটার পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বাকি পথ যাওয়া সম্ভব হয়নি। জনশ্রুতি আছে, ৩৬০ আউলিয়া উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে একটি অংশ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামের জয় নিশান উড়িয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলী নামের কোনো আউলিয়া থাকতে পারেন। যাঁর পদধূলিতে নাম হয়েছে আলীকদম বা আলী গুহা। যাঁরা পাহাড় নদী, ঝরনা আর অরণ্য পাছন্দ করেন-তাঁদের জন্য আলীকদম অনন্য স্থান। তাহলে আর দেরি কেন? বেরিয়ে পড়ুন ঈদের ছুটিতে। যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার থেকে সড়কপথে আলীকদম। তারপর সেনাজোন থেকে নৌকায় আলীর সুড়ঙ্গে। সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। সুড়ঙ্গে ঢুকতে হলে স্থানীয় আদিবাসীদের গাইড হিসেবে নিতে হবে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G