ঘুরে আসুন নজরুল-পল্লী ত্রিশালে

প্রকাশঃ মার্চ ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৬:২৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Trishal-320130606033808সুন্দরের ধ্যান, তার স্তবগানই আমার উপাসনা আমার ধর্ম। যে কুলে যে সমাজে যে ধর্মে যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই আমি কবি।

বাংলা কাব্য ও সাহিত্য ভাণ্ডারে ঘটিয়ে ছিলেন এক অভাবনীয় বিপ্লব। মানবতাবাদী চেতনা ছিল তার সৃষ্টিকর্মে উদ্ভাসিত।

তিনি একাধারে শ্রমিক, সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, বিপ্লবী এবং ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমান। পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেয়া সেই দুখু মিয়া বর্তমান বাংলাদেশের যে অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন তার নাম ত্রিশাল। আমাদের প্রিয় জাতীয় কবির শৈশব ও কৈশোরের একটি বড় অংশ কেটেছে ময়মনসিংহের এই ত্রিশালে।

বিদ্রোহী কবির জীবনের সঙ্গে ত্রিশাল নামটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবিকে তার জীবদ্দশায় কোনো বাঁধনে বেঁধে রাখা না গেলেও ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় কবির স্মৃতিকে ঠিকই বেঁধে রেখেছেন এ জনপদের কবিভক্ত মানুষ। কবির স্মৃতিবলয়ে ঘেরা ত্রিশাল এখন নজরুল-পল্লী হিসেবে খ্যাত।

পর্যটক ও নজরুলপ্রেমীরা প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন এই নিঃসর্গের কোলে। আপনিও যান্ত্রিক জীবনের বাইরে হারিয়ে যেতে ঘুরে আসতে পারেন নজরুল-পল্লী ত্রিশালে। কাজী রফিজ উল্লাহ্ দারোগা ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবি নজরুলকে ত্রিশাল কাজীর শিমলা নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কাজীর শিমলা মোড় থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পশ্চিমে দারোগা বাড়ি। এখানে রয়েছে দুই তলা বিশিষ্ট নজরুল পাঠাগার ভবন।

নজরুলের বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ হচ্ছে অত্যাচারের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে, শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে। অত্যাচারিত, শোষিত, শ্রেণী বৈষম্যপীড়িত মানুষকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কবির অনবদ্য সৃষ্টি স্থান পেয়েছে। এছাড়াও এখানে থাকা তার কবিতা-গানের বইগুলো আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে মানবতাবাদী চেতনার খোরাক যোগাবে।

ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের পাশেই নজরুল একাডেমী। কবির স্মৃতিবিজড়িত দরিরামপুর হাই স্কুলই বর্তমানে নজরুল একাডেমী। এই স্কুলে কবি ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করেছেন। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার খাতায় নজরুল লিখেছিলেন আমি এক পাড়া গাঁয়ে স্কুল-পালানো ছেলে, তার উপর পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও অক্ষর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে কবির সেই ক্লাস রুম ও দেয়ালে এই কবিতার লাইন খোদাই করে সংরক্ষণ করা আছে।

Trishal-1বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতেই এক একর জায়গা জুড়ে নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ;নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র;। নজরুল স্মৃতি কেন্দ্রের মূল ভবনে রয়েছে কবি নজরুল সংগ্রহশালা ও পাঠাগার।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন, ;নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐত্যিহাসিক সত্তার রূপকার।

নজরুলের এধরনের বলিষ্ঠ উচ্চারণ নিয়ে গবেষণার সহযোগী ক্ষেত্র এখন এই পাঠাগার। এখানে কবি নজরুল যে ঘরটিতে থাকতেন সেটি পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। কবি তার কবিতা গানে যে সকল গাছের নাম উল্লেখ করেছেন সেই গাছগুলো দিয়ে নজরুল স্মৃতি কেন্দ্রে ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ বাগান তৈরি করা হয়েছে।

এখানে কবি যে পুকুরে গোসল করতেন সেটিও সংরক্ষণ করা আছে। কবিতা মানুষের কল্পনা ও আবেগের প্রকাশ আর আবৃত্তি শিল্পীকে বলা যায় কবির ভাষ্যকার। এখানে পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটে হাসনাহেনা ফুল গাছের নিচে চাঁদের আলোয় কবি-ভাষ্যকারের কাজ করতে কার না ভালো লাগবে!

স্কুল পালিয়ে ত্রিশাল নামাপাড়া শুকনি বিলের পাড়ে একটি বট গাছের নিচে কবি নজরুল আপন মনে বাঁশিতে সুর তুলতেন। এটি এখন নজরুল বটবৃক্ষ। দুই বাংলার নজরুল ভক্তদের কাছে এটি তীর্থ স্থানের মর্যাদা পেয়েছে। বটের নিচে প্রায়ই বসে কবিদের আসর। আজ কবি নেই কিন্তু এই বট গাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে কবির অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। এখানকার মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের মোহিত করবে।

কীভাবে আসবেন: ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোর ৫টা থেকে প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে সৌখিন, এনা, নিরাপদ বাস ছেড়ে আসে। টিকেটের মূল্য ১০০-১৫০ টাকা। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। ত্রিশালে আগত দর্শনার্থীদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সরকারি নজরুল রেস্ট হাউস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে উপজেলা ডাকবাংলো, ত্রিশাল বাজারে রয়েছে রোদেলা গেস্ট হাউস ও বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G