জাপা ছাড়লেন মাওলা চৌধুরী: ছাড়ছেন আরো অনেকে

প্রকাশঃ অক্টোবর ৮, ২০১৬ সময়ঃ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কাজী লুৎফুল কবীরঃ

14620141_1205792052812033_317502937_nজাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ষোলকলা পূর্ণ করলেন প্রজ্ঞাবান প্রবীণ রাজনীতিবিদ এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী। ছাড়লেন দল। এই প্রথম পদত্যাগের মাধ্যমে নতুনধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে। সকাল ৯টায় বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে দু’নেতা শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে দলীয় সম্পর্কের ইতিটানে গোলাম মাওলা চৌধুরী।
পরে দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান,কো চেয়ারম্যান ও পার্টর মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন মাওলা চৌধুরী। এ সময় দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দূঃখ প্রকাশ করে বলেন,দলে যোগ্য একজন নিবেদিত রাজনৈতিক হাতিয়ারকে ধরে রাখা গেলো না। চৌধুরীকে শুভ কামনা জানিয়ে হাওলাদার বলেন,দলের জন্য তাঁর কর্ম তৎপরতা দল শ্রদ্ধাভরে স্মরন করবে। পদত্যাগ প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন,কারো বিরুদ্ধে এক তরফা অভিযোগ নেই। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দল হিসেবে যে ভূমিকা রাখা দরকার তার ধরে কাছে জাতীয় পার্টি আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তাই বলে দেশের ক্ষতিকর কর্মকান্ড কোনভাবেই সমর্থন করি না। কিন্তু অসুস্থ ধারার রাজনীতি জনগণের জন্য কোন ধরনের সুখকর বার্তা দিতে পারে না। বর্তমানে প্রধান তিন দলই সেই রাজনীতি নিয়ে অসুস্থ প্রতিয়োগীতায় ব্যস্ত বলে দাবি করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। গোলাম মাওলা বলেন,জনগণের জন্য সুনির্দিষ্ট কল্যাণকর কর্মসূচী নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানো উচিত। তিনি বলেন,অনেক তো হলো,এবার দেখা যাক মানুষের জন্য কিছু করা যায় কিনা। মাওলা চৌধুরীর পদত্যাগ সম্পর্কে প্রতিক্ষণের সঙ্গে কথা বলেন দলের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সেচ্ছাসেবক পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সৈয়দ। তিনি বলেন,কর্মীর মূল্যায়ন জাতীয় পার্টিতে নেই। একজন নিঃস্বার্থ,ত্যাগী কর্মী থেকে নেতা গোলাম মাওলা চৌধুরী। তিনি পদত্যাগ করে দলের অভ্যন্তরের বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের বিপক্ষে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।14610818_1205792116145360_84387931_n
এদিকে দলীয় একটি সূত্র জানায় একই ধারায় আরো অনেকে পদত্যাগ করবেন। এর মধ্যদিয়ে পার্টির অনিয়মের প্রতিবাদ করলেন দলের সিনিয়র এই নেতা। আর তাঁরই পথ ধরে খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে অনেক নেতাকর্মী পদত্যাগে অপেক্ষায় আছেন। মনের কোনে কষ্ট চেপে দলের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন,যোগ্য একজন সিনিয়র নেতার দল ছেড়ে এভাবে চলে যাওয়া খুবই দূঃখজনক। মনে রাখতে হবে যে কোন নেতাকর্মী দল ছাড়া মানেই পার্টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর মাওলা চৌধুরী হারিয়ে আমরা একজন সৎ ও যোগ্য সংগঠকে হারালাম। এর চেয়ে বেশীকিছু বলার শক্তি ও মনের অবস্থা নেই।14608167_1206582242733014_2137940658_n
দলের অভ্যন্তরে তাঁর পদত্যাগ নিয়ে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনার জবাবে এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন,২০০২ সালে কঠিন এক সময় জাতীয় পার্টিতে যোগদান করি। কখনই হালুয়া-রুটির আশায় রাজনীতি করিনি। এমনকি দলে পদ পেতে কখনও মরনপন লড়াই বা ক্ষমতার বাগ-বাটোয়ার জন্য চেয়ারম্যানের সুপারিশ চাইনি। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি,অনেকে ছোট-বড় কাজ-কারবারে প্রতিযোগীতা করে সুপারিশ নিয়েছেন,কিন্তু আমি তা করিনি। এমনকি অনেকে হালুয়া-রুটির আশায় দল ছেড়ে গেছেন,আমি তাদের সঙ্গী হইনি। শুধু তাই নয় দলও ভাঙ্গিনি,সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরবে দল ছেড়েছি। তাই নোংরা কাদা ছোড়াছুড়ি না করতে জাতীয় পার্টর নেতাকর্মীদেন প্রতি বিশেষ অনুরোধ সদ্য দল থেকে পদত্যাগকারী ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরীর।

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী

14607977_1205792146145357_853639947_n

আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরী, পরিচ্ছন্ন এক রাজনীতিক। ছাগলনাইয়া-পশুরাম-ফুলগাজী, ফেনী-১ নির্বাচনী এলাকা নিয়ে যার রাজনৈতিক পরিমন্ডল। ত্রিপুরার প্রথম মসলিম স্বাধীন নবাব শমসের গাজীর সপ্তম বংশধর এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, শিক্ষা জীবন শুরু করেন শুভপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর জগন্নাথ সোনাপুর স্কুল, দক্ষিণ বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী সরকারী কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ এবং নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করেন। স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির প্রতি দূর্বলতা ছিলো তাঁর। ৭১ এ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১ নম্বর সেক্টরের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, সবেমাত্র মেট্রিক পাশ বাউনডেলে কিশোর মাওলা চৌধুরী। আর স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে জাসদের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন এই মুক্তিযোদ্ধা। ৭৪ এ প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে গণবাহিনী গঠনকে কেন্দ্র করে মত-বিরোধ দেখা দিলে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। জাসদের রাজনীতিতে সক্রিয় হবার পর থেকেই তাঁর উপর চলে জেল-জুলুমসহ নানা ধরণের নির্যাতন। আর জাসদ ছেড়ে দেয়ার পর বেড়ে যায়, সেই মাত্র। তবে রাজনীতি করতে এসে শত নির্যাতনেও পিছু ফিরে তাকাননি মাওলা চৌধুরী। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। ১৯৭৪ সালে জাসদ ছাত্রলীগের ধানমন্ডি থানা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের রাজনীতিতে জড়িয়ে প্রথম দিকে আত্ম গোপনে থেকেই চালিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তেমনি অবস্থায় ৭৪ এর মে মাসে আগ্নেয়াস্ত্রের মিথ্যা অভিযোগে ফেনী থেকে আটক করা হয় নবাব শমসের গাজী এই বংশধরকে। এ সময় ২ মাস ২২ দিন কারাভোগ করেন তিনি। সে সদয় পুলিশ রিমান্ডে তাঁর উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পায়ের তালু ও হাঁটুর সেই আঘাত আজও যন্ত্রণা দেয় তাঁকে। দ্বিতীয় বার গ্রেফতারের শিকার হন ৮৫/৮৬ এর দিকে। তৎকালীন সরকার বিরোধী আন্দোলনে বেশ ক’বার আটক করা হয় তাঁকে। সবশেষ ১৯৯৮ সালের ৩০ মার্চ পার্বত্য চুক্তি বাতিলের দাবিতে অনশন থেকে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালনের সময় আটকের শিকার হন সংগ্রামী এই রাজনীতিবিদ।

14569230_1205791962812042_1886363956_n১৯৮০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তরুন রাজনীতিক মাওলা চৌধুরী। পরে ১৯৮৪ সালে জাতীয়তাবাদি রাজনীতি নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দিলে, পিএনপি গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন তিনি। শুরুতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেও, ৮৬ সালে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পিএনপির মহাসচিব নির্বাচিত হন এই রাজনীতিক। দীর্ঘ ১৬ বৎসর পিএনপির রাজনীতিতে চারটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাশাপাশি দেশের সংকটকালে জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন সক্রিয়। ২০০২ সালে তিন দলের যৌথ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাগপা-পিএনপি বিলুপ্ত করে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। যোগদানের পর থেকে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে গেলো ১৬ বৎসর দায়িত্ব পালন করেছেন সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সঙ্গে।

আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরীর রাজনৈতিক দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ফেনী নদীর পানি রক্ষার দাবীতে লংমার্চ কর্মসূচীর উদ্যোগ। টিপাইমুখ লংমার্চ কর্মসূচী ঘোষনার আগেই ফেনীমুখি লংমার্চ করার প্রয়োজনীয়তা সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ ও বন্ধু মহলে তুলে ধরেন তিনি। তাই দেশের অভ্যন্তরীন জলপ্রবাহ ফেনী নদী নিয়ে ভারতের আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ জানাতে প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলনের ডাক দেন তিনি। তাঁর চিন্তা চেতনা নিঃসৃত ফেনী নদীর পানি রক্ষার দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচী পালন করা হয়। শুরুতে চলে মাঠের পর্যবেক্ষণ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা থেকে সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞ নিয়ে ফেনী নদীর প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। পরে এর উপর তৈরি করা হয় গবেষণাপত্র। বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক প্রতিবেদন। চুড়ান্ত পর্যায়ে গবেষণারপত্র ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর সঙ্গে মুল্যায়ন বৈঠক করেন এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী। এর পর পরই ঘোষণা আসে ফেনী নদীর পানি রক্ষায় লংমার্চ কর্মসূচী। অনেক মতবিরোধ থাকলেও যা সাফল্যের সঙ্গে পালন করা হয় ৫ মার্চ ২০১২। এক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে ফেনীর জনসভায়। যা সমাদৃত হয় সকল মহলে।14625340_1205792306145341_997927871_n

১৯৭৫ সালে চামড়া শিল্পের কল্যাণে গঠিত হাজারীবাগ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৫ সাল ১৯টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত “ফারাক্কা সংগ্রাম পরিষদ” এর মহাসচিব, ১৯৮৬ সালে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৯৯০ সালে পাঁচ দলীয় মোর্চার প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৯৯৩ তে “সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ” এর মজলিসে সুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় রাজনীতির বাইরে, বাংলাদেশ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উপদেষ্টা, এশিয়া মুসলিম যুব কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সদস্য, ঢাকাস্থ ফেনী জেলা সমিতি ৯৩ এর সহ-সভাপতি, ঢাকাস্থ ছাগলনাইয়া ছাত্র কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা এবং শমসের গাজী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী।

১৯৫৩ সালে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার জগন্নাথ সেনাপুর গ্রামের স্বভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন, আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরী। পিতা মরহুম আবু নাছের চৌধুরী। তাঁর পিতা আবু নাছের চৌধুরী ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাতা আনোয়ারা বেগম ছিলেন একজন গৃহিনী। ৭ ভাই ৩ বোনের মধ্যে মাওলা চৌধুরীর ৪ ভাই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বড় ভাই আওরঙ্গজেব চৌধুরী সাজু বিএনপি, এ টি এম গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী খেলাফত মজলিশের রাজনীতি এবং ছোট ভাই মোতাহার হোসেন চৌধুরী রাশেদ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। গোলাম মাওলা চৌধুরীর স্ত্রী শাহানারা বেগম একজন গৃহিনী। এক পুত্র সন্তানের পিতা চির সংগ্রামী মোড় খাওয়া প্রবীন এই রাজনীতিবিদ। তার পুত্র মুহম্মদ বিজয় চৌধুরী (চৌধুরী আব্দুল্লাহিল মাওলা) অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ব্যাক্তিগত জীবনে সে একজন উদীয়মান ক্রিকেটার। অনুর্ধ্ব ১৮ তে ফেনী জেলা ক্রিকেট টিমের হয়ে খেলছেন বিজয় চৌধুরী।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G