WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো জাদিপাই ঝরনার বিশালতা মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো জাদিপাই ঝরনার বিশালতা

মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো জাদিপাই ঝরনার বিশালতা

প্রকাশঃ মার্চ ১০, ২০১৫ সময়ঃ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

download-31আমরা সবাই জানি যে পানির কোনো রং নেই। পানি যখন যেখানে থাকে, সেখানকার রং ধারণ করে। কিন্তু এই পানিই মানুষের মনে হরেক রকম রঙের বিকিরণ ছড়িয়ে দেয়। পুকুরের পানি দেখলে সবাই যেমন ক্লান্তি ভুলে ডুব দিতে ছুটে যায়, সাগরের পানি যেমন কৈশোরের দুরন্তপনা ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে, বৃষ্টির পানিতে একবার ভিজতে না পারলে বছরটাই যেমন অর্থহীন মনে হয়, ঠিক তেমনি হিমশীতল ঝরনার পানিতে শরীরখানা একবার ভেজানোর জন্যও মরুভূমি হয়ে থাকে বুকের উষ্ণ জমিনটুকু।

আজ ঠিক তেমনি এক ঝরনার কথা শোনাব সবাইকে, যে ঝরনার পাশ দিয়ে এসে থমকে দাঁড়ায় দিনের বাতাস, যে ঝরনায় প্রবেশের জন্য আকাশসমান গাছের কাছে অনুমতি চেয়ে বেড়ায় ভোরের রোদ্দুর, যে ঝরনায় এখনো কাচের মতো স্বচ্ছ টলটলে পানি আয়না হয়ে অপেক্ষা করে নতুন কোনো বিস্ময়ে বিহবল চোখের জন্য, যে ঝরনা এখনো শহুরে মানুষের চোখে অদেখা এক জাদুকরি ঝরনা। নিজেকে আর সবার কাছ থেকে আড়াল করে বান্দরবানের গহিন অরণ্যে বয়ে চলা এ ঝরনাটির নাম ‘জাদিপাই ঝরনা’। আমি বান্দরবান গেছি নয়বার, অসম্ভবকে সম্ভব করার কিছুটা পরিকল্পনা নিয়ে। তাই ১৩ জন সঙ্গীকে নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম। প্রথম গন্তব্য মেঘ-কুয়াশার দেশ ‘তিন্দু’।

indexতিন্দু সম্পর্কে একটা বিশাল বই লিখলেও এর সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও তুলে ধরা সম্ভব নয়। শুধু এতটুকু বলি, আকাশ-কুয়াশা-মেঘ-নদী-পাথর-পাহাড়-ঝরনা-বন-নীল-সবুজ পানি, পাহাড়িদের জীবন আর রহস্য-রোমাঞ্চ-ভয় সব যদি একবারে পেতে চান, তাহলে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন তিন্দু।

সকালে ঘরের ভেতরে ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে যখন দরজা খুঁজে বের করতে হয়, তখন নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে হয় এ দেশটাতে জন্মানোর জন্য।

বান্দরবান কন্যা তিন্দুকে ফেলে সাঙ্গু নদীর প্রকৃতিকে দুচোখে গিলতে গিলতে আমাদের চলে আসতে হলো রুমা বাজার। কারণ, জাদিপাই ঝরনায় যেতে হলে এখান দিয়েই যেতে হবে। পার হতে হবে প্রকৃতির বিস্ময় বগা লেক এবং কেওক্রাডংকে। এ দুটির মাঝে পড়ে চিংড়ি ঝরনা আর সবচেয়ে গোছানো পাহাড়িপাড়া হিসেবে পরিচিত দার্জিলিংপাড়া।

আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মজার মানুষ ছিলেন রকি ভাই, যা-ই দেখেন তা-ই তাঁর ভালো লাগে। তিন্দুতে তাঁবুর ভেতরে মেঘ দেখেই লাফালাফি করেন, পাহাড়ের মধ্যে বগা লেকে পানি দেখে বিস্ময়ে ভিরমি খেয়ে উল্টে পড়েন আবার কেওক্রাডংয়ে পায়ের নিচে মেঘের সাগর দেখে যেন তাঁর কয়েকবার হার্ট অ্যাটাকই হয়! জাদিপাই ঝরনার পানি দেখে সেই রকি ভাইয়ের বিস্ময় যেন নিহতই হয়ে যায়! পরে সেই বিস্ময়কে আর বয়ে নিয়ে আসা হয়নি।

আমরা ১১ জন বেরিয়ে পড়লাম জাদিপাই ঝরনার উদ্দেশে। দুজন থেকে গেল রুমায়, তারা আর যাবে না। চঞ্চল খুব ভালো গান গায়, তার গান শুনতে শুনতে কেওক্রাডং থেকে নেমে গেলাম পাসিংপাড়ার দিকে। আমার দেখা সবচেয়ে খোলামেলা ও সুন্দর পাড়া হলো এই পাসিংপাড়া। এখানে এক জায়গায় দাঁড়িয়েই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। লালমাটির এই পাড়া থেকে অনেক নিচে ছবির মতো দেখা যায় জাদিপাইপাড়া।

পাড়ার ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা দেখে ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুড়ে শহুরে জীবন ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ি তাদের ভিড়ে। রোদ-বাতাস-বৃষ্টি-কুয়াশা সব শুধু তাদের জন্য, তাদের কোনো ব্যস্ততা নেই, অচেনা পথিকেরা হেঁটে গেলে খুব আগ্রহ নিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে কৌতূহলী চোখ নিয়ে, এরপর আবার লুটিয়ে পড়ে লালমাটির ধুলায়। হঠাৎ থমকে দাঁড়াল রুবাইয়্যাৎ—আওয়াজ, শব্দ, পানি কোলাহল! উলা উলা, বুলা বুলা, ইয়াপ ইয়াপ করে সামনের দিকে পড়িমরি করে দৌড়ে গেল বাকিরা। হ্যাঁ, এটা ঝরনারই আওয়াজ, যাকে দেখতে এত দূরে ছুটে আসা, এটা সেই জাদিপাই ঝরনা।

Muftikhar_1340167879_4-557359_376995615655149_1908176589_nএই ঝরনার শেষের ৩০ মিনিট নামাটা বিপজ্জনক, খাড়া পাহাড় বেয়ে গাছ ধরে ধরে নামতে হয়। কোথাও মাটি ঝুরঝুরে, কোথাও মাটি পিচ্ছিল, আবার কোথাও মাটিই নেই—একদম গাছ ধরে ঝুলে পড়া! এমন করেই নামতে নামতে পানির ঝমঝম শব্দকে ছাপিয়ে সারাটা শরীর ছমছম করে ওঠে এই ঝরনার বিশালতা দেখে। আমার দেখা সবচেয়ে বিশাল ও প্রশস্ত ঝরনা এটি। মাপামাপি ছাড়াই বলছি, প্রায় ২৫০ ফুট ওপর থেকে একাধারে পড়া পানির তিনটি ধাপে তৈরি করেছে সাতটি ছোট ছোট রংধনু, একটানা ঝমঝম শব্দ নিমেষেই ভুলিয়ে দিয়েছে যাত্রাপথের সব ক্লান্তি, মুছে দিয়েছে আবার তিন হাজার ফুট পাহাড় বেয়ে ওঠার চিন্তা। ঝরনার নিচে জমে থাকা কাচের মতো স্বচ্ছ পানিতে চঞ্চল একেকবার লাফ দিচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে, ‘ও মাই গড, আই অ্যাম সো হট!’

আমাদের গাইড আলমগীর ভাই, যে কি না ১০০ বারের বেশি এসেছে এখানে, সে-ও আর স্থির থাকতে পারল না, জামাকাপড় খুলে নিজেকে মেলে দিল ঝরনামুখের তোপের নিচে। নিরাপদ ঝরনা এটা, কারণ পানি এখানে তিনটি ধাপে পড়ে, ফলে সরাসরি মাথায় কিছু এসে পড়ার ভয় নেই। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে লম্বা লেজ নাড়তে নাড়তে চলে এসেছে শ খানেক বানর। এত বানর আমি এর আগে কোথাও দেখিনি। নিজেদের রাজত্ব যেন হাতছাড়া না হয়, সে জন্য কতক্ষণ দাঁত কিড়মিড় করে আমাদের শাসন করল তাদের দলপতি, দুই-তিনজন হাত মুঠো করে কিলও দেখাল।

লিপি আপু প্রাণিবিদ্যার ছাত্রী। তিনি ঘোষণা দিলেন অবস্থা সুবিধার নয়। তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখি রিতু ভেজা চুলে দৌড় দিল। আরেকটু ভালো করে খেয়াল করে দেখি, মিরান ভাই ও বাপ্পি ভাই আগেই ভেজা শরীর নিয়ে পথের প্রান্তে দৌড়ানোর জন্য রেডি, শুধু কমান্ডারের নির্দেশের অপেক্ষা। কালবিলম্ব না করে হাত তুলে নির্দেশ দিলাম, ‘মুভ।’ ঘোষণা শেষ হতেই দেখি আমি ছাড়া আর কেউই দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। পড়িমরি করে আমিও দৌড় দিলাম। পেছনে বানরদের রাজত্ব ফিরে পাওয়ার উল্লাসধ্বনি শোনা যাচ্ছে। গাছে ঝুলে উঠতে উঠতে আরেকবার পেছন ফিরে তাকালাম, বাতাসের দোলায় দুলতে থাকা গাছের ফাঁকা দিয়ে হাসছে জাদুপাই ঝরনার সাদা পানি। বিশাল সবুজ বন নিজের কোলের মধ্যে পরম মমতায় আড়াল করে রেখেছে প্রকৃতির এ জাদুকে।

কীভাবে যাবেন
জাদিপাই ঝরনায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবান। ঢাকা থেকে বান্দরবানে চারটি বাস যায়। ইউনিক, শ্যামলী, এস আলম ও ডলফিন। প্রতিটি সিটের জন্য ভাড়া পড়বে ৪৩০ টাকা। বান্দরবান নেমে যেতে হবে কাইক্ষ্যংঝিরি। স্থানীয় বাসে বা চান্দের গাড়িতে করে সেখানে হেলতে-দুলতে দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। বাসভাড়া ৮০ টাকা, আর চান্দের গাড়ি রিজার্ভ গেলে পড়বে তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

কাইক্ষ্যংঝিরি থেকে রুমাবাজার পর্যন্ত নৌকাভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা, আর রিজার্ভ গেলে এক হাজার টাকা। রুমা থেকে যেতে হবে বগা লেক পর্যন্ত। এখানে চান্দের গাড়িভাড়া দুই হাজার টাকার মতো। জাদিপাই যেতে হলে আপনাকে এই রুট ধরেই যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাইড ভাড়া বাবদ খরচ পড়বে দুই হাজার ৫০০ টাকা। বগা লেকে গাড়ি থেকে নেমে পাহাড় ডিঙিয়ে উঠতে পারেন ‘সিয়াম দিদি’র হোস্টেলে, খুব ভালো আপ্যায়ন পাবেন। সেখান থেকে শুধুই হাঁটাপথ। চিংড়ি ঝরনা, দার্জিলিংপাড়া, কেওক্রাডং, পাসিংপাড়া আর জাদিপাইপাড়া পার হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন জাদুকরি ঝরনা জাদিপাইতে।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G