WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

মেঘনা ডাকাতিয়া'র মোহনায় মেঘনা ডাকাতিয়া'র মোহনায়

মেঘনা ডাকাতিয়া’র মোহনায়

প্রকাশঃ নভেম্বর ৩০, ২০১৫ সময়ঃ ৫:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০৩ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

vromon“মোহনা কাকে বলে জানিস?”
“স্যার, আমার খালাত বোনের নাম মোহনা। খুব ভাল ছাত্রী। সারা রাত জেগে পড়াশোনা করে দেখে আম্মা আমাকে ঝাড়ি দেয় কেন তাঁর মত রাত জেগে পড়াশোনা করি না।“
“চুপ থাক ফাজিল কোথাকার। আমি কি এই মোহনার কথা জানতে চেয়েছি?”

চুপ মেরে গেলাম। আমার এই নির্দোষ উত্তরে কি এমন দোষ খুঁজে পেয়ে স্যার বাঘের মত গর্জে উঠেছিলেন বুঝতে পারছিলাম না। ষষ্ঠ শ্রেণীর ক্লাসটিচার বোরহান স্যারকে ভয় পেত না এইরকম ছেলে খুব কমই ছিল। হাতে আড়াই ফুট লম্বা একটা বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকলে কলিজা শুকিয়ে পানি হয়ে যাবে না এইরকম বাপের বেটা গভঃমেন্ট স্কুলে একটাও জন্মায় নাই তখন পর্যন্ত (এখনকার খবর বলতে পারব না)।

একে তো ছিলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন, তার উপর আবার স্কাউটিংও করতাম (বোরহান স্যার আমাদের স্কাউট টিচার ছিলেন)। এই জন্য স্যার বেশ স্নেহের নজরে দেখতেন এই অধমকে। সম্ভবত এই কারণেই শুধু ঝাড়ির উপর দিয়েই পার পেয়ে গেলাম, বেতের বাড়ি আর খেতে হয় নি সেই যাত্রা।

“মোহনা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে একাধিক নদী একসাথে মিশে সমুদ্রের পানে এগিয়ে যায়। আচ্ছা বলতো বাংলাদেশের কোন জায়গায় ৩ টা বড় নদী একসাথে মিশেছে?
“স্যার গোয়ালন্দে (হু হু, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় প্রাইজ পাওয়া পোলা আমি। কিছুই পারব না সেটা কি হয় নাকি?)।“
“হয় নি, তবে কাছাকাছি গিয়েছিস। চাঁদপুরের মোহনায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া এই ৩ টা নদী একসাথে মিশেছে। সুযোগ পেলে ঘুরে আসিস। দারুণ জায়গা।“

সেই প্রথম আমার ডাকাতিয়া নদীর নাম শোনা। সেই প্রথম আমার খালাতো বোন ছাড়াও অন্য কোন মোহনার নাম শোনা। সেই প্রথম আমার কিশোর মনে মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন বোনা। হায় আমি কি আর জানতাম এই স্বপ্ন পূরণে আমাকে ২০ টা বছর অপেক্ষা করতে হবে?

vromon

বাংলাদেশের ৫৬ টা জেলায় পদচিহ্ন রাখবার সুযোগ হলেও চাঁদপুর কখনও আসিনি। সঞ্জয় দা (চাঁদপুরের জোনাল ম্যানেজার) আগেই বলেছিলেন বর্ষার সময়ে চাঁদপুর ঘুরতে। একইসাথে ইলিশ আর নদীর প্রমত্তা রূপ দুইটাই তাহলে দেখা যাবে। কুমিল্লায় অফিসের মিটিং ছিল। মিটিং এর পরদিন চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। দুই ঘণ্টার বাস যাত্রা দেখতে দেখতেই শেষ। বাসস্ট্যান্ডে নেমে প্রথমেই যে জিনিসটা চোখে পড়ল সেটা হচ্ছে ইলিশের ভাস্কর্য। এই শহর যে ইলিশের জন্য বিখ্যাত সেটা মনে হয় আর বলে দিতে হবে না।

vromonঅনেকক্ষণ দানা-পানি না পড়ায় পেটের মাঝে ছুঁচোর কীর্তন চলছিল। পেট ঠাণ্ডা তো মাথা ঠাণ্ডা। সঞ্জয় দা লাঞ্চ করবার দুইটা অপশন দিলেন। এক, শহরের নামী এক হোটেল। অথবা, ডাকাতিয়া নদীর তীরে সার বেঁধে অবস্থান করা ছাপরা সদৃশ অখ্যাত হোটেলগুলোর কোন একটা। পছন্দ আমার, নিয়ে যাবেন তিনি। অবশ্য চোখ টিপে এও যোগ করতে ভুললেন না যে ছাপরা হোটেলগুলোতে টাটকা ইলিশ তৎক্ষণাৎ ভেজে দেওয়া হয়। শুধু তাই না, ইলিশ এর সাথে সাথে মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনা থেকে ভেসে আসা শীতল বাতাসের স্পর্শ পাওয়া যায়; মেঘ ও আকাশের মিতালী দেখা যায় এবং ডাকাতিয়ার অপর পাশের পুরাতন চাঁদপুর শহরের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখা যায়। এখন বলুন, আমার জায়গায় আপনি থাকলে কোন অপশনটা পছন্দ করতেন?

চাঁদপুর খুব ছোট শহর। আধা ঘণ্টা বাইকে চক্কর দিলে পুরো শহর ঘুরে আসা যায়। অল্প কয়েকটা ভাস্কর্য আছে শহরে। তার মাঝে নিচেরটা অন্যতম। যদিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো খালটাকেই ভরাটের প্রক্রিয়া চলছে।

vromonব্রিটিশ আমলে মেঘনা ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে চাঁদপুর রেলস্টেশন ও স্টিমারঘাট স্থাপন করা হয়। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ সুবিধার কারণে চাঁদপুর অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্যতম যোগাযোগ ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। চাঁদপুর আসাম-বেঙ্গল গেটওয়ে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভারত বিভক্তির পর চাঁদপুরের পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম যোগাযোগ ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রের পরিচয় অক্ষুন্ন থাকে। ষাটের দশকে চাঁদপুর নদী বন্দর স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চাঁদপুরের যোগাযোগ ও বাণিজ্য কেন্দ্রের ঐতিহ্য অটুট থাকে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের লোকজন লঞ্চ স্টিমার যোগে চাঁদপুর এসে সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এ কারণে চাঁদপুরকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের সেতুবন্ধন বলা হয়ে থাকে।

ইলিশের আড়ত চাঁদপুর রেলস্টেশনের পাশেই। সেই আড়ত পার হয়ে খাবারের হোটেলগুলোতে যেতে হয়। আড়ত পার হওয়ার সময় প্রচুর তাজা ইলিশ চোখে পড়ল। সব প্যাকেট করা হচ্ছে। এই প্যাকেটগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবে। সঞ্জয় দা’র ভাষ্য অনুযায়ী ইলিশ এখনও সেই হারে উঠেনি। সামনের মাসে উঠবে। তখন এই আড়তে ইলিশের বাক্স আর লোকজনের ভিড়ে পা ফেলবার জায়গাও থাকবে না।

vromonমাছের আড়ত পার হয়ে নদীর পাড় ধরে এক সারি দিয়ে অনেকগুলো খাবারের দোকান বা ছাপরা। ছাপরার ছোট ছোট বেঞ্চগুলোতে বসে নদী এবং নদীর ওইপারের পুরাতন চাঁদপুর শহর দেখা যায়। আর আছে বাতাস। আহ, শরীর এবং মন দুইটাই জুড়িয়ে দেয়।

vromonডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য ২০৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদী ভারতের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা, লাকসাম ও চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে যা লক্ষ্মীপুরের হাজিমারা পর্যন্ত বিস্তৃত। চাঁদপুর থেকে ডাকাতিয়া নদী যোগ হয়েছে কুমিল্লার গোমতীর সঙ্গে যা বামদিকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফেনী নদীতে মিশেছে।

vromonইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে নিয়েই এসেছিলাম। ছাপরাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপনি মাছের কোন অংশটা খাবেন সেটা পছন্দ করবেন আর একদম টাটকা ভেজে দিবে। তাই ভেজাল খাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কিছু কিছু জায়গায় আপনি আস্ত মাছ পছন্দ করলে আপনার সামনেই কেটে ভেজে দিবে। ভাজি করার সময় ইলিশের ঘ্রাণে চারপাশ সুবাসিত হয়ে যায়। ঢাকার বাজারে যেই ইলিশ পাওয়া যায় সেই ইলিশে এই গন্ধও নেই, স্বাদও নেই।

আমরা গিয়েছিলাম দুপুর ৩ টার পর, তখন ইলিশ প্রায় শেষ। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে এক দোকানে ইলিশ মাছ পেলাম কিন্তু টুকরাগুলো খুব ছোট ছিল। রাতে অবশ্য সেই আফসোস পুষিয়ে দিয়েছিলাম।

vromonখাওয়া শেষ করে ডাকাতিয়ার তীর ধরে মোহনার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ইলিশ ধরবার মৌসুম সামনেই। জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। গল্পগুজবের সাথে সাথে জাল মেরামত এবং শুকানোর কাজ সারছিলেন তাঁরা।

vromonচাঁদপুর নতুন শহর থেকে পুরাতন শহরে যাওয়ার দুইটা উপায় আছে। শহরের ভিতর দিয়ে সেতু পার হয়ে যাওয়া যায়, আবার ইলিশ ঘাট থেকে নৌকা দিয়েও পাড়ি দেওয়া যায়। সার বেঁধে অনেক নৌকা রাখা আছে। যার যেটা সুবিধা।

vromonতীব্র স্রোতের কারণে মোহনার কাছাকাছি নদীভাঙন একটা সময় খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। যদিও সিমেন্টের ব্লক ফেলে এই ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। ত্রি-নদের অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক ফেলে যতটুকু রক্ষা করা গেছে তার অংশবিশেষকেই চাঁদপুর মোহনা বা মোলহেড বলে ডাকা হয়। স্থানীয়রা একে সাবের গাজীর আস্তানা বলেও ডেকে থাকেন।

vromonমহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনে শহীদ হওয়া বীর যোদ্ধাদের স্মরণে মোলহেডের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ রক্তধারা। দূর থেকে পর্যটকদের মানসপটে এর সৌন্দর্য অবলোকনে পিপাসা ধরায়। পর্যটকরা ঘুরে ঘুরে শিল্পীর কারুকার্য খচিত সৃষ্টিকর্ম প্রত্যক্ষ করে থাকে। অগণন শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।

vromonরক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভের উদ্যোক্তা চাঁদপুরের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা। স্মৃতিস্তম্ভে লেখা আছে নিচের পঙক্তিগুলো –

নরপশুদের হিংস্র থাবায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে যারা
এখানে ইতিহাস হয়ে আছে তাঁদের রক্তধারা
এ শুধুই স্মরণ নয়
নয় ঋণ পরিশোধ
এখানে অবনত হয়ো শ্রদ্ধায়
নরপশুদের জানিও ঘৃণা আর ক্রোধ।

একটু সামনে এগোলেই দেখতে পাওয়া যাবে মোহনার বর্ণিল সাজ, ছোটদের জন্যে রয়েছে চরকি, কিশোর-কিশোরীরা নাগরদোলায় দোল খায়। তার একটু সামনে হাতের বাম পাশে সুন্দর একটি বিশ্রামাগার। পর্যটকদের বসার সুবিধার্থে ছোট ছোট বেঞ্চ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। মা-বোনদের জন্যে দোকানিরা হরেক রকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে। এর পাশেই রয়েছে চটপটি-ফুচকা ঘর। আম গাছের শীতল ছোঁয়ায় বন্ধু-বান্ধবীরা ঝাঁক বেধে চটপটি-ফুচকা খায়। বটতলায় পাশাপাশি বসে বাদাম টিপে মুখে দেয়। আরেকটু সামনে গেলে মোটর সাইকেলের মেলা বসেছে বলে মনে হবে। এখানেই সারি বেঁধে বুট, বাদাম নিয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ হকার। চানাচুর বিক্রেতাদের দম ফুরোনোর সুযোগই নেই। হাতের ডান পাশে দেখা মিলবে সুপারি গাছের সারি।

vromonমোলহেডের ঠিক মাঝখানে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে লেখা আব্রাহাম লিঙ্কনের বিখ্যাত চিঠি’টি বাংলায় অনুবাদ করে টানিয়ে রেখেছে কোন একটা এনজিও । চিঠির বক্তব্য অসাধারণ। বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে অনেক কাজে দিবে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই চিঠির ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। যাক এক উসিলায় নতুন কিছু জানা গেল।

vromonএলাচি পাতার চা পান করেছেন কখনও? না করে থাকলে এখান থেকে ঘুরে যান। এই চা দেখতেও যেমন চমৎকার, খেতেও তেমনই উপাদেয়। শ্রীমঙ্গলে ৭ রঙা চা খেয়েছিলাম। দেখতে সেটাও চমৎকার ছিল কিন্তু স্বাদ ছিল জঘন্য। তুলনা করলে এলাচি পাতার চা তো একদম যাকে বলে স্বর্গীয় স্বাদযুক্ত।

vromonজীবিকার তাগিদে মাঝিদের নৌকা নিয়ে কিংবা বড়শি হাতে লোকদের মাছ শিকারের দৃশ্যগুলো ইলিশের প্রতি বাঙালির ভালবাসা আর হাজার বছরের ঐতিহ্যকে চোখের সামনে তুলে ধরে। ঘাটে সবসময়ই ইঞ্জিনচালিত সারি সারি ছোট নৌকা বাধা থাকে। সেখান থেকে একটি নৌকা ভাড়া করে আপনি পদ্মার বুকে ঘুরে আসতে পারেন।

vromonএখানে এসে যে ব্যাপারটা মানুষের চৈতন্য নাড়া দেয় তা হলো তিন নদীর মিতালি। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডাকাতিয়া ও পদ্মার পানি এখানে আপন রঙে বিচ্ছিন্নভাবে মিলিত হয়েছে। বিশাল জলরাশির মধ্যে আলাদা রঙের জলের দুটি ধারা স্পষ্ট দেখা যায়। পশ্চিম দিকে নদী পার হলেই শরীয়তপুর জেলা।

vromonদিনের একেক সময় মোহনার সৌন্দর্য একেক রকম। সকাল বেলায় এক রকম।

vromonভর দুপুরে এক রকম।

vromonআবার আকাশে মেঘ করলে মোহনার দৃশ্য সম্পূর্ণ অন্য রকম।

vromonপড়ন্ত বিকেলে বিশাল পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখলে মনে হবে আপনি যেন কোনো সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে। পেছনে প্রাচীন হাট, পুরান বাজার রেখে ডাকাতিয়া নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে যখন দেখবেন দূর থেকে বড় বড়নৌকা এবং লঞ্চ ভেসে আসছে তখন মনে হতেও পারে চাঁদ সওদাগর যেন সওদা করতে আসছে এই প্রাচীন জনপদে।

vromonমোহনার রাতের সৌন্দর্য একদমই আলাদা। রাতের বেলা বাতাসের বেগ থাকে বেশি। সেই হাওয়ায় কেবল চুলগুলোই দোলে না, মনও দোলে। ইচ্ছে জাগে প্রিয় মানুষটাকে পাশে বসে জ্যোৎস্নায় অবগাহন করতে। পানিতে লঞ্চ আর স্টিমারের আলোর প্রতিফলন এক অদ্ভুত আবেশে মন জুড়িয়ে দেয়।

vromonএই মোহনা দিয়েই দেশের ৯০ ভাগ নদনদীর পানি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। তীব্র স্রোতের কারণে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনার কথা হয়ত আপনাদের স্মরণে আছে। ২০০৩ সালে এম ভি নাসরিন লঞ্চ এখানেই ডুবে গিয়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় ২০০ এর অধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। তাই বিআইডব্লিউটিএ-র টানানো একটা সতর্কবার্তা এখানে আসলেই চোখে পড়বে।

vromonদুর্ঘটনা প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহনার দক্ষিণ পাশের পুরাতন লঞ্চঘাটের পাশাপাশি উত্তর দিকে নতুন একটা লঞ্চঘাট তৈরি করা হয়েছে। শীতের সময় লঞ্চগুলো দক্ষিণ দিকের ঘাটে ভিড়ে। আর বর্ষার সীজনে উত্তর দিকের ঘাট বেশি ব্যবহৃত হয়। পুরাতন এবং নতুন দুইটা ঘাটের ছবিই দিয়ে দিলাম। প্রথমটা ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ থেকে সন্ধ্যার সময় তোলা।

vromonআর দ্বিতীয়টা ঢাকায় রওনা দেওয়ার দিন সকালে তোলা।

vromonরাতের বেলা আড্ডা দিচ্ছিলাম সঞ্জয় দা’র সাথে। চাকরীতে তাঁর পারফর্মেন্স দারুণ। জিগ্যেস করেছিলাম কেন তিনি প্রমোশন নিয়ে অন্য কোথাও বদলি হয়ে যাচ্ছেন না। অদ্ভুত উত্তর দিলেন। এই মোহনার প্রেমে পড়ে গেছেন তিনি। প্রতিদিন অন্তত একবার এখানে না আসলে নাকি তাঁর ভাল লাগে না। প্রচণ্ড টেনশন নিয়ে এখানে বসলেই টেনশন চলে যায়। এই জায়গা ছেড়ে তাই অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছেই তাঁর নেই।

অবাক করা ব্যাপার। শুধু এক সঞ্জয় দা’ই এই জায়গার প্রেমে পড়েন নি। সমস্ত চাঁদপুরবাসিই এই মোহনার প্রেমে পাগল। তাঁদেরকে আর কি দোষ দিব? আমি নিজেই তো মাত্র দুই দিনেই এই জায়গার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। শেষবেলায় তাই মোহনার সাথে নিজের একটা ছবি দিয়েই লেখা শেষ করলাম। সবাইকে মোহনায় ঘুরবার নিমন্ত্রণ।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G