WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য তাঁর ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। তাঁর গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। গ্রামীণ উন্নয়ন ও গ্রামীণ জনসমাজে শিক্ষার বিস্তারের মাধ্যমে সার্বিক সমাজকল্যাণের তত্ত্ব প্রচার করতেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের দর্শনে ঈশ্বর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরের মূল নিহিত রয়েছে মানব সংসারের মধ্যেই। তিনি দেববিগ্রহের পরিবর্তে মানুষ অর্থাৎ কর্মী ঈশ্বরকে পূজার কথা বলতেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। এখানে এই মহান মানবের কিছু মজার ঘটনাকে তুলে ধরা হল।
ঘটনা প্রথমঃ
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কথাশিল্পী প্রমথনাথ বিশী। তো, একবার প্রমথনাথ বিশী কবিগুরুর সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আশ্রমের একটি ইঁদারার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওখানে একটি গাবগাছ লাগানো ছিল। কবিগুরু হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, ‘জানিস, একসময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম? আমার ধারণা ছিল, এটা অশোকগাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো দেখি, ওটা অশোক নয়, গাবগাছ।’
অতঃপর কবিগুরু প্রমথনাথের দিকে সরাসরি তাকিয়ে স্মিতহাস্যে যোগ করলেন, ‘তোকেও অশোকগাছ বলে লাগিয়েছি, বোধকরি তুইও গাবগাছ হবি।’
ঘটনা দ্বিতীয়ঃ
একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। তো গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল; আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।
গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।’ উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
ঘটনা তৃতীয়ঃ
রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন, সেটা প্রথম দফা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরূপ পাঠের আসরে যোগদান করতেন। তা, একবার আসরে যোগদানকালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন।
রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন। তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ‘শরৎ, তোমার বগলে ওটা কী পাদুকা-পুরাণ?’ এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসাহাসি হয়েছিল।
ঘটনা চতুর্থঃ
একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো, পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।
আবির দ্বারা রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন, ‘এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’
ঘটনা পঞ্চমঃ
মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। তো, একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, ‘গুরুদেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।’ অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে…।’
‘তা চিনির গান তো মিষ্টি হবেই। কিন্তু এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?’ প্রমথনাথ বিস্মিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন।
উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, ‘কেন, স্বয়ং গুরুদেবই আমাকে বলে দিয়েছেন।’
ঘটনা ষষ্ঠঃ
কবিগুরুর ৫০ বছর বয়সে পদার্পণ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের একটি কক্ষে সভা বসেছিল, যেখানে তিনি স্বকণ্ঠে গান করছিলেন। তো, তিনি গাইলেন, ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি, শুধু কাশি শুনেছি।’ কবিগুরু এটা গেয়েছিলেন আচার্য যতীন্দ্রমোহন বাগচি উক্ত কক্ষে প্রবেশের পূর্বক্ষণে, তাই বাগচি মহাশয় কক্ষে প্রবেশ করে বিস্ময়-বস্ফািরিত নয়নে সকলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
‘সিঁড়িতে তোমার কাশির শব্দ শুনেই গুরুদেব তোমাকে চিনেছেন’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তখন বাগচি মহাশয়কে বুঝিয়ে দিলেন, ‘তাই তো তাঁর গানের কলিতে বাঁশির স্থলে কাশি বসিয়ে তাঁর গানটি গেয়েছেন।’
ঘটনা সপ্তমঃ
সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রীবলাইচাঁদ ব্যানার্জির এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বললেন, ‘কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি’, তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’
রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই।’
ঘটনা অষ্টমঃ
একবার কালিদাস নাগ ও তাঁর স্ত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ মৃদুহাস্যে নাগ-দম্পতিকে প্রশ্ন করলেন, ‘শিশু নাগদের (সাপের বাচ্চাদের) কোথায় রেখে এলে?’ আরেকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা করে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে কপট বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বললেন, ‘চা-কর বটে, কিন্তু সু-কর নয়।’
আরও একবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছেন শান্তিনিকেতনে, কলকাতা থেকে। একদিন সেই নাতনি দুজন কবিগুরুর পা টিপছিলেন; অমনি তিনি বলে উঠলেন, ‘পাণিপীড়ন, না পা-নিপীড়ন?’ প্রথমটায় তারা কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে খুবই মজা পেয়েছিলেন।
প্রতিক্ষন/এডি/ ইম