WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

স্বচ্ছ এক অ্যাকুরিয়াম ‘টাঙ্গুয়া হাওর’ স্বচ্ছ এক অ্যাকুরিয়াম ‘টাঙ্গুয়া হাওর’

স্বচ্ছ এক অ্যাকুরিয়াম ‘টাঙ্গুয়া হাওর’

প্রকাশঃ মার্চ ৯, ২০১৫ সময়ঃ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

tanguar2গ্রামগুলো যেন এক-একটি দ্বীপ। গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, নীল আকাশ যেখানে পানির সঙ্গে খেলা করে, সাদা মেঘ যেখানে পাহাড়ের কোলে ঘুমায়, গাছের সারি যেখানে প্রতিনিয়ত সবুজ পানিতে গোসল করে, আর পানির নিচে যেন রঙিন বনের বসতি। সূর্যমামা আগে এখানে ওঠে, তারপর হাসে; তাড়াহুড়ো করে চাঁদ এসে জলের আয়নায় তার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়; ঢেউয়ের কোলে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়ে তারার সারি। জায়গাটার নাম ‘টাঙ্গুয়া হাওর’।

আলোঝলমলে শহর ছেড়ে ছোট্ট একটা পোঁটলা কাঁধে নিয়ে এক রাতে চড়ে বসলাম বাসে। গন্তব্য সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওর।
সুনামগঞ্জের সাহেববাজার ঘাটে নৌকা ভাড়া করতে গিয়ে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! না, দাম শুনে নয়, নৌকার সাইজ দেখে। নৌকার এ মাথা থেকে ও মাথার কাউকে ডাকতে হলে বুলহর্নের সাহায্য নিতে হবে। তাতে যাত্রী মাত্র আটজন (তিনজন মাঝিমল্লাসহ)। দুই দিনের জন্য চাল-ডাল কিনে নৌকা ভাসানোর পরে মনে পড়ল আলুভর্তা যে করব, কাঁচা মরিচই তো কিনিনি! সবুজ সে কাঁচা মরিচ কেনার আশা মনের চিপায় চাপা দিয়ে চারপাশের চৌহদ্দি ছাড়ানো সবুজ দেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সুরমা নদীর ওপারেই মেঘালয়ের পাহাড় মেঘ কোলে নিয়ে অতিথির জন্য বসে আছে। নৌকার নিচে ঘোলাপানি ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বারবার জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব।

মণিপুরি ঘাট পার হতেই সামনের দৃশ্যপট মুহূর্তে পাল্টে গেল। বিরাট চুলের অধিকারী জুনায়েদ লম্বা একটা কাউবয় হ্যাট মাথায় নিয়ে নদীর এক পাশে হাত তুলে লাফাতে লাগল ‘নিউজিল্যান্ড নিউজিল্যান্ড’ বলে! শোনা কথায় কান না দিয়ে নিজের চোখে দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়ে অজান্তেই ঢোক গিললাম, চোখের সামনে ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের ডেইরি ফার্মের গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। তাদের পেছনে বাঁক খেয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের দেয়াল। যত দূর চোখ যায়, সবুজের মখমল। ততক্ষণে আমাদের নাবিক আজাদ মিয়া জানাল, আমরা ‘কচা’ হাওরে অবস্থান করছি। নৌকার পাশ দিয়ে নিচে তাকালাম—নীলচে পানি, পানির নিচে শেওলার অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। নলখাগড়ার ডগা ভেসে ভেসে ঢেউয়ের দোলায় নাচছে হাওরজুড়ে। তার মাঝ দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালানোর মতো সাঁই সাঁই ছুটে চলছি আমরা টাঙ্গুয়া হাওরের উদ্দেশে।

tanguar6যাওয়ার পথে আনোয়ারপুর গ্রামে পড়ল পাথরের স্তূপ। এখানে পাথর ভাঙা হয়, হলদে বালির বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাথরগুলো রোদ পোহাচ্ছে। একটু পরপর পাশ দিয়ে যাওয়া নৌকার ঢেউ তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। পাশ দিয়ে চলে গেল মাছধরা এক নৌকা। নৌকা ভেড়ালাম। মাত্রই পানি থেকে তুলে আনা মাছটি মুখ বড় করে দম নেওয়ার শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে যা দেখে আর কিনতে ইচ্ছে করল না।

যতই সময় যাচ্ছে, ধীরে ধীরে রং বদলাচ্ছে পানির। নীল থেকে কালো, কালো থেকে সবুজ, আবার গাঢ় নীল। আমাদের আরেক নাবিক সোবহান মিয়া কিছুক্ষণ পরপর ডিগবাজি খেয়ে হাওরের পানিতে লাফ দিয়ে প্রপেলারে জমে থাকা শেওলা ও ঘাস পরিষ্কার করে আবার নৌকা চালু করছে। এভাবেই এক পাশে পাহাড় রেখে চলতে থাকে আমাদের পাঁচ ঘণ্টার হাওরযাত্রা। এর মধ্যেই নৌকায় আয়োজন করা হয় আমাদের দুপুরের রান্নার। কেরোসিনের স্টোভ তিনবার নষ্ট করার পর অবশেষে শুরু হয় আলু আর ডিমভুনার কালোত্তীর্ণ রান্নার প্রক্রিয়া। এই রান্নার সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বলে আখ্যা দেওয়া হয় এই কারণে যে, আমরা তো দূরের কথা, আমাদের মহান নাবিকেরাও জীবনে কোনো দিন নাকি পাতিল ধরেননি।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মাঝি হাঁক দিল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বনের রাজা টারজানের মতো বুক কাঁপিয়ে জানান দিল, ‘এইটাই টাঙ্গুয়া হাওর। দেখেন।’ ঘুম ভেঙে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এসে রেদওয়ান দেখল, আমরা পানির ওপর ভাসতে থাকা একটি নিঃসঙ্গ কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওর দেখছি। এখানে এই বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে কেন এই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটা একটা অমীমাংসিত প্রশ্নই বটে। চারপাশে যত দূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। বর্ষা মৌসুমে গোটা টাঙ্গুয়াই পরিণত হয় ২০-২৫ ফুট জলের এক স্বচ্ছ অ্যাকুরিয়ামে।

হঠাৎ করে কেউ দেখলে নির্দ্বিধায় বঙ্গোপসাগর ভেবে ভুল করবে। এই সেই টাঙ্গুয়া হাওর, যেখানে জল আকাশের রং চুরি করে নীলের ভুবন সাজিয়েছে। মেঘমালা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যায়, দূর থেকে দেখে মনে হবে পানিতে বুঝি তুলোর ভেলা ভাসছে। এই সৌন্দর্য বলে বোঝানো আমার কর্ম নয়! সীমাহীন এই হাওরে বর্ষাকালে চলে বিশাল ঢেউয়ের রাজত্ব। পানি এতই পরিষ্কার যে ২০ ফুট নিচের ঘাস, গাছ, লতাগুলো মনে হয় অ্যাকুরিয়ামে সাজানো। অচেনা এক পৃথিবী মনে হয় যখন দেখি কোনো রকম ভেলা বা জাহাজ ছাড়াই থইথই পানিতে পইপই ভাসছে ছোট ছোট গ্রাম। পাঁচ-সাত বছরের বাচ্চাগুলো লাইসেন্স ছাড়াই নামিয়ে দিয়েছে তাদের নৌকাগাড়ি। ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে খিলখিল করে হাসছে।

opurnoRayhan_1347280503_22-534499_403625942999505_130240287_nপুরো হাওর গাছের সীমানা দিয়ে ঘেরা। সেই গাছও মাথাটুকু বাদে ডুবে আছে নীলের সমুদ্রে। এখানে বাতাস কখনো ক্লান্ত হয় না, এখানে আকাশের নিচে সাদা মেঘের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে কচি পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের কোলে নাচে উদ্দাম, উত্তাল, দুরন্ত সবুজ জ্যাকেট পরা নীল পানি, হাওরের পানি।

আমাদের মধ্যে সাঁতারজানা মানুষ মাত্র দুজন। দিনশেষে আবিষ্কার করলাম, সবচেয়ে বেশি সময় পানিতে ছিল তারাই, যারা সাঁতার জানে না। ঝালমুড়ির সঙ্গে নিউট্রি-সি মিশিয়ে চিবোতে চিবোতে যখন পৌঁছালাম শাপলা ফুলের বাগানে, তখন দিগন্তে সূর্যটা চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। তার চোখে ঘুমের আনাগোনা। মেঘের পর্দায় সে হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা পৌঁছে গেলাম তাহিরপুর ঘাটে। হাওর দেখেছি বলে মনে হয় না; মনে হলো, এইমাত্র বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ দেখে ফিরলাম। সেদিনের রাতটা বিশ্রামের। তাহিরপুরের ডাকবাংলোতে।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ; শ্যামলী পরিবহনে ৪০০ টাকা ভাড়া নেবে। শ্যামলী আর ইউনিক ছাড়া অন্য কোনো বাস যায় না। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। সেখান থেকে টাঙ্গুয়া হাওরের উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করবেন, প্রতিদিনের জন্য ভাড়া নেবে তিন হাজার টাকা। হাওরে যেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। দু-তিন দিনের জন্য নৌকা ভাড়া করলে প্রয়োজনীয় বাজারসদাই করে নেবেন। হাওর ঘুরে রাতটা তাহিরপুর থানার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন।

তাহিরপুরে রাতে থেকে পরদিন ট্যাকেরহাট, বারিক্কাটিলাসহ জাদুকাটা নদী ঘুরে সুনামগঞ্জ চলে আসতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে বেলা আড়াইটায় একটা, এরপর রাতে অরেকটা গাড়ি ছাড়ে—রাত ১০টায়। সঙ্গে তেমন কিছুই নিতে হবে না, তবে লাইফ জ্যাকেট থাকলে নিয়ে নিতে পারেন। এটা বর্ষাকালে যাওয়ার রাস্তা। তবে শীতকালে নৌকা চলবে না, সে ক্ষেত্রে আপনাকে সুরমা নদী পার হয়ে মণিপুরিঘাট থেকে মোটরসাইকেলে শ্রীপুর বাজারে অথবা ডাম্পের বাজারে গিয়ে টাঙ্গুয়া হাওরে যেতে হবে। সূত্র:প্রথমআলো।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G