ইসলামে মানব পাচারের অপরাধ

প্রকাশঃ মে ১৩, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক :

untitled-13_94010মানব পাচার মানবাধিকার বিরোধী জঘন্য অপরাধ। মানব পাচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মানব পাচারকে দাসত্বের আধুনিক রূপ বলে মনে করা হয়। অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে কিছু লোক মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

ইসলাম মানব পাচারকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ হারাম। অনেক সময় পাচারকারীরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়, যাতে নারী বা শিশুর অভিভাবক নিজেদের সন্তানকে স্বেচ্ছায় তাদের হাতে তুলে দেয়, কিন্তু সে আর ফিরে আসে না। আল্লাহর সেরা সৃষ্টি মানুষের স্বাধীনতা হরণ করার পাশাপাশি তাদের বিশ্বাসের চরম অবমাননা ও অবমূল্যায়ন করে থাকে। এর চেয়ে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি আর কী হতে পারে?

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছুই নেই যে, তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিথ্যার আশ্রয় নেবে, যে তোমাকে বিশ্বাস করে।’-আবু দাউদ

পাচার হওয়া নারী ও মেয়েশিশুদের সাধারণত পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি, গৃহস্থালির কাজসহ নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হয়। আর পুরুষদের বিভিন্ন অমানবিক, অপরাধমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করা হয়। যেমন— মাদক ও অস্ত্র পাচার, চোরাচালান, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি।

indexপাচারকারীরা নারী ও শিশুদের সাধারণত যেসব কাজে নিয়োজিত করা হয়, তার অধিকাংশই শরিয়তসম্মত নয়। এসব কাজ ইসলামে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানব পাচার শারীরিক ও মানসিক বল প্রয়োগের পাশাপাশি নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই অপরাধ বেশিরভাগ সময়ই ঘটে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অপরাধ সম্পর্কে অসচেতনতা, লোভ, বেকারত্বসহ নানাবিধ কারণে।

পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। মানব পাচার একটি প্রতারণামূলক কাজ। এ প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, প্রতারণার মাধ্যমে মানব পাচারের শাস্তি বিধানে সরকার তার ধরন ও ভয়াবহতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড, জেল-জরিমানা, নির্বাসনে দেয়া, মালামাল ক্রোক করা, সামাজিকভাবে বয়কট করাসহ যে কোনো শাস্তি নির্ধারণ করতে পারে। সে হিসেবে বলা যায়, সমাজের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য মানব পাচার রোধে প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ইসলাম মানব পাচারকারীদের কোনো অবস্থাতেই ক্ষমা করে না, তাদের অবশ্যই ইহকাল ও পরকালে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমাদের সমাজ থেকে যাতে আর কেউ পাচার না হয়, সে জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করছ না? অথচ দুর্বল নারী, পুরুষ ও শিশুরা চিৎকার করে বলছে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের জালিমের জনপদ থেকে উদ্ধার করুন। আপনি আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী পাঠান।’ -সূরা আন নিসা : ১৭৫

অবৈধভাবে মানব পাচার বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। যে চক্র এই অমানবিক ও অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার করে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/নুর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G