WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

গরীবেরাই কেন ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত গরীবেরাই কেন ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত

গরীবের ডাক্তার আসলেই মারা গেছেন!

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৫ সময়ঃ ৮:১০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১০ অপরাহ্ণ

কাশ্মীরি রহমান

ডাক্তারগৌতম বুদ্ধের অনুসারীদের কানে কথাটি শুধু পৌঁছায় দিলেই হতো। লাখো অনুরাগী কোটি কোটি মুদ্রা পায়ে সঁপে দিতেন। ভালোবাসা এমনই। শ্রদ্ধা-ভক্তির মাত্রার রূপ এমনই তীব্র। কিন্তু জীবক নামের মহান চিকিৎসক সেই পথ মাড়াননি। ঔষধ-দাওয়াই ব্যবহারে থলে ভরানোর মন ছিল না তাঁর।

কথিত আছে, একবার গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসায় জীবক তাঁকে কোন ওষুধ সেবন করতে না দিয়ে, শ্বেত পদ্মের মধ্যে ওষুধ রেখে তার ঘ্রাণের সাহায্যে এই জীবক তাঁকে সারিয়ে তোলেন। এভাবে বুদ্ধকে আরো কয়েকবার তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সারিয়ে তোলেন।

জীবকের মন্ত্র ছিল, অর্থ নয়-আর্ত, লোভ নয়-সেবা, প্রতিকারের দাওয়াই নয়-প্রতিরোধের ছবক। জীবকের কথা শুনে বুদ্ধ তাঁর অনুগামী সন্ন্যাসীদের রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যায়াম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

‘‘অর্থ নয়-আর্ত, লোভ নয়-সেবা, প্রতিকারের দাওয়াই নয়-প্রতিরোধের ছবক’’-এই দফাগুলো আমাদের এই যুগে কতটুকু মানানসই? এই যুগের কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা তার একটি গানে ডাক্তার সম্পর্কে অনেক কথা তুলে ধরেছেন। অনেকের মতে, সাধারণ মানুষের ‘মনের কথা’ তুলে ধরেছেন অনুপম উপমায়।

ডা: ইব্রাহিম, ডা: নুরুল ইসলাম, ডা: এম আর খানদের মতো মহান সন্তানদের দেশে এই গান বড় বেমানান। সবখানের সবচিত্র এক-এমন নয় মোটেই। এখনো কারো চেম্বারে প্রবেশ করলেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যান রোগী। এমনকি সুদূর গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক চিকিৎসক আছেন, যাঁরা সমাজের কাছে পূজনীয়৷ যাঁদের অন্যত্র পাঠালে হয় প্রতিবাদ৷

উৎকৃষ্ট পেশা হল চিকিৎসা সেবা। এই পেশায় মানুষের কাছে যাওয়া, মনের মাঝে বসত গড়া, তাদের সেবা করার সুযোগ আছে। মানুষ কোনো কেনো চিকিৎসককে ভগবান বলেও ভাবেন, কারণ আপদে-বিপদে একজন প্রকৃত চিকিৎসক তাঁর পাশে থাকেন ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষার কথা না ভেবে৷ মানুষকে সুস্থ, শান্তিতে রাখার জন্য চিকিৎসকদের মূল্য কোনও কিছুতেই পরিমাপ করা যাবে না৷ চিকিৎসকগণ কত মানুষকে যে পুনঃজন্ম দিয়েছেন, তার শেষ নেই৷

মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হয়, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে, তখন চিকিৎসার মাধ্যমেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চায়, আর সেই মানুষ চিকিৎসকের উছিলাতেই আরোগ্য হয়। রোগাগ্রস্ত অবস্থায় মানুষ অসহায় এবং দুর্বল থাকে। এই দুর্বল সময় চিকিৎসকই তার বড় অবলম্বন, বড় বন্ধু, তার অসহায়ের সহায়। সকলে কামনা করেন, ব্যবসায়িক ও পেশাদারি দৃষ্টির বাইরে যেন থাকে সহমর্মিতা ও আর্তের আবেদনে কাজ করার মানসিকতা৷ ধনী, দরিদ্র না ভেবে, রোগীর সুস্থতাই একমাত্র কাম্য হওয়া উচিত৷

তবে বর্তমান সময়টা বড় অদ্ভুত। চিকিৎসা ব্যবসার বাণিজ্যকরণে চারপাশে ছড়িয়ে গেছে৷ নিত্যনতুন কর্পোরেট হাসপাতাল চালু হচ্ছে৷ সঙ্গে প্যাকেজের হাতছানি৷ আমাদের চোখের সামনের চিত্র অনেকটা ভয়াবহই বলা যায়। বর্তমানে পত্র-পত্রিকায় চিকিৎসার ওপর যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা পড়ে গা শিউরে ওঠে। ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, অপারেশন করেও রোগী সুস্থ হয়নি বরং অবস্থার অবনতি, অপারেশনের পর রোগীর পেটে গজ ব্যান্ডেজ এমনকি কাঁচি রেখেই সেলাই, রোগীর সাথে ডাক্তারের দুর্ব্যবহার, চড়-থাপ্পর মারা, রোগীর স্বজনদের সাথে এমনকি সংবাদ সংগ্রহের কারণে সাংবাদিকদের লাথি, ঘুষি, আমরা এসব কিছুই ইলেক্ট্রনিক প্রচার মাধ্যমে দেখেছি। সরকারি হাসপাতালে রোগীর সাথে ডাক্তারের খারাপ আচরণ তো আছেই।

একজন বড় দু:খের সাথে বলেছিলেন, ‘ডাক্তাদের একটি অংশ ভালো পোস্টিং-প্রমোশনের জন্য আজ মুজিব কোর্ট; কাল প্রিন্সকোর্ট-গগলস পরতেও দ্বিধা করেন না’। একবার তুলনা করুন, কোথায় সেই জীবনজয়ী জীবক আর কোথায় এই যুগে চিকিৎসক! অবহেলা আর বাণিজিকীকণের একটা বাস্তব প্রমাণ পড়া যাক-তিনি ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক, যিনি ভারতের একটি হাসপাতালে তার স্ত্রীকে অপারেশন করিয়েছেন এবং বর্তমানে সুস্থ আছেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর ফুসফুসে পানি জমে, তার সুস্থতার জন্য কয়েকজন ডাক্তারের পরামর্শে রাজধানীর নামকরা একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই যথারীতি অপারেশন হলেও সুস্থ হয়নি। এর মাঝে অপারেশন করতে বড় অংকের টাকা লেগে যায়। যা পরিশোধ করতে অনেক ধার-কর্জ করতে হয়েছে। গত এক বছরে আবার অর্থ সংগ্রহ করে স্ত্রীকে নিয়ে বোম্বের একটি মিশনারী হাসপাতালে যাই এবং দ্বিতীয়বার অপারেশন করাই। দেখা গেছে, ফুসফুসে যে পানি জমে ছিল, যার জন্য অপারেশন করানো হয়, সে পানি ঠিকই ছিল, তবে অপারেশন কেন করা হয়েছে? এবং আগের অপারেশনের ব্যবস্থাপত্র সাথে নিয়ে যাই, ডাক্তাররা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এত এন্টিবায়টিক, এত ওষুধ কেন সেবন করানো হল কেন? যাক, আল্লাহর রহমতে অল্প সময়েই অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে দেশে ফিরি।’’

তার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৫০ জন রোগী ভারতে ঐ হাসপাতালে যাচ্ছেন। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার যে, যারা যাচ্ছেন তারা অধিকাংশই দেশে ভুল চিকিৎসায় কারো অপারেশন হয়েছে কিন্তু সুস্থ হননি, এমন সব রোগী। এখন দেখা যায়, ভারতের চিকিৎসার জন্য যেতে এ্যাম্বাসিতে ভিসার জন্য রোগীদের লাইন, সারারাত জেগে কেমন করে লাইনে শুয়ে আছে জটিল রোগীরা।

একবার ভেবে দেখুন চিকিৎসা শাস্ত্রের কি এমন দিক ভারতে আছে, যা বাংলাদেশে নেই! সব আছে, যা নেই তা হল সেবা ও নিষ্ঠতা। যে দেশে এমবিবিএস পড়তে আসে বিদেশের অনেক ছাত্র-ছাত্রী সেই দেশের এই হাল হবে কেন?
ভাল ছাত্র ভাল রেজাল্ট করলেও ভাল ডাক্তার হওয়া যায় না। ভাল ডাক্তার হতে হলে মানুষের প্রতি রোগীদের প্রতি আন্তরিক সেবার মনোভাব ও দরদ থাকতে হয়। ডাক্তারদের একটু অবহেলা একটু অসতর্কতায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। আল্লাহর দেয়া সুন্দর জীবন বিষাদময় হয়ে যায়।

আমাদের দেশের শহর এলাকার চিকিৎসা সেবার খন্ড চিত্র পেলাম। শহরে থেকে সচেতন মানুষ হয়েও হয়রানি ও সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত, প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব রোগীদের অবস্থা তো আরো নাজুক হবে, তা সহজ অনুমেয়।
সেই গ্রামে যাওয়া যাক এবার। দেশের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল মানুষেরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাস করে। শহরে মানুষের সামর্থ্য বেশি হওয়ায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ছড়াছড়ি। গ্রামে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারি সেবা তুলনামূলক দুর্বল থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও সেখানে সেবা দেয়ার আগ্রহ কম। আর এভাবেই বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে, গরীব জনগোষ্ঠি বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গরিবরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ধনী ও মধ্যবিত্তরা বেসরকারি খাত থেকে সেবা কিনতে পারলেও গরিবরা টাকার অভাবে সেবা বঞ্চিত হয়। এমনকি সরকারি খাত থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে স্বাস্থ্যবরাদ্দ বণ্টন ও ব্যয়ে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এভাবে চূড়ান্ত বিচারে ক্ষতির মুখে পড়ছেন গরিবরা।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যব্যয়ের মাত্র ২৬ শতাংশের জোগান দিচ্ছে রাষ্ট্র। এই ব্যয়ের বৃহদাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে খরচ করা হয়। অন্যান্য স্থানে স্বাস্থ্যের জন্য রাষ্ট্রের ব্যয় অনেক কম। মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান মতে, মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ৬৪ শতাংশ টাকা নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। অর্থাৎ গরিবের টাকা খরচের সামর্থ্য নেই। তাই তাদের জন্য সেবাও নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বৈষম্যের এ চিত্র ফুটে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান এই বৈষম্য মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে। রোগে আক্রান্ত ও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসাব্যয় মেটাতে মধ্যবিত্তরা দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। দরিদ্ররা হচ্ছে নিঃস্ব। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো এই বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য অনেকটা দায়ী। বাড়ির পাশে বেসরকারি বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিক থাকলেও উচ্চব্যয়ের কারণে গরিবরা সেখানে যেতে পারছে না। তাদের মতে, উচ্চ ফি নির্ধারণ করে এগুলোকে ধনীদের সেবা কেন্দ্র বানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম একবার বলেছিলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ২ টাকা খরচ হয় এমন ডায়াগনোস্টিক পরীক্ষার ফি আদায় করছে ২০০ টাকা।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান-২০১২’ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ একাউন্টসের (বিএনএইচএ) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ধনী ও গরিব বৈষম্যের উল্লিখিত চিত্র মিলেছে। বিএনএইচএ রাষ্ট্রীয় খাত থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগে স্বাস্থ্যবরাদ্দ ও ব্যয়ে বৈষম্যের চিত্র, ওইখাত থেকে মাথাপিছু খরচ ইত্যাদি তথ্য দিয়েছে। অন্যদিকে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান-২০১২’ প্রসবকালীন সেবা, টিকাদান, পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে।

এখানে কেবল প্রসবসেবা ও পুষ্টি খাতের চিত্রটিই খতিয়ে দেখি আপাতত। ধনী-গরিব বৈষম্য কতটা দেখুন এখানে- প্রসবকালীন উন্নত সেবা প্রাপ্তিতে ধনী-গরিব বৈষম্য চিত্র তুলে ধরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান। প্রতিবেদনটি বলছে, দরিদ্র পরিবারে মাত্র ৫ শতাংশ প্রসূতি প্রসবকালে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পাচ্ছেন। অন্যদিকে ধনী প্রসূতিদের ৫১ শতাংশ দক্ষ সেবাকর্মীর উপস্থিতিতে সন্তান প্রসব করেন। অপুষ্টিতেও ধনী-গরিব বৈষম্য বিরাজমান। ধনী পরিবারে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৬ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় খাটো। দরিদ্র পরিবারে এই বয়সী ৫৪ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় খাটো। এক্ষেত্রে পার্থক্য দ্বিগুণেরও বেশি। হার্ড টু রিচ এলাকায় সেবাকর্মীদের যেতে না চাওয়া, যন্ত্রপাতি সচল রাখতে পারা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর এসব কারণে সরকার টাকা ব্যয় করা নিয়ে দ্বিধায় থাকে।

আমরা গ্রামে-মফস্বলে পেলাম যে ওইখানে গরীবদের বসবাসই বেশি। অসহায়ও তারা বেশি। এমন অসহায় যে, তাদের সন্তানরাও বেঁটে-খাটো হতে বাধ্য। সেই গ্রামেই আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম এক মানিক-রতন।

তিনি হলেন ডাক্তার এড্রিক বেকার। আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিত্ব। টাঙ্গাইলবাসীর প্রিয় মানুষ। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরগড়ে অবস্থিত ব্যতিক্রমী চিকিৎসাকেন্দ্র ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’ গড়েছিলেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ৭৪ বছর বয়স্ক ডাক্তার এড্রিক গ্রামের সবার কাছেই ‘ডাক্তার স্যার’ নয়, ‘ডাক্তার ভাই’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ৩৫ বছর ধরে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত এই ভিনদেশি মানুষটি বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়ে।

১৯৬৫ সালে তিনি ডুনেডিন শহরের ওটাগো মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে সরকারের শল্য চিকিৎসক দলের সদস্য হিসাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনাম যান। সেখানে কাজ করার সময়ই তিনি পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারেন। যুদ্ধকালীন ও তার পরবর্তী এখানকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখে তিনি ঠিক করেন সম্ভব হলে বাংলাদেশে আসবেন। অবশেষে ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন।

এদেশে এসে বেকার প্রথমে কয়েক বছর কাজ করেন মেহেরপুর মিশন হাসপাতাল, কুমুদিনী হাসপাতাল ও থানারবাইদ গ্রামের একটি ক্লিনিকে। কিন্তু তার সবসময় ইচ্ছা ছিল বড় হাসপাতালে কাজ না করে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে কাজ করার। সেই চিন্তা থেকেই তিনি চলে আসেন মধুপুরগড় এলাকায়।

গ্রামের দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতেই ২০০২ সালে তিনি মধুপুরের শোলাকুড়ি ইউনিয়নের কাইলাকুড়ি গ্রামে গড়ে তুলেন পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতেন।

ডাক্তারচার একর জায়গার ওপর বেকারের এই চিকিৎসাকেন্দ্র। ছোট ছোট মাটির ঘরে ডায়াবেটিস বিভাগ, যক্ষা বিভাগ, মা ও শিশু বিভাগ, প্রশিক্ষণ কক্ষ, মাতৃসদনসহ নানা বিভাগ রয়েছে। সব বিভাগ মিলিয়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

শুধু ক্লিনিকেই নয়, কোনো রোগী যদি চিকিৎসাকেন্দ্রে আসতে না পারেন, দু-একজন সহকর্মীসহ সাইকেল চালিয়ে ‘ডাক্তার ভাই’ নিজেই বেরিয়ে পড়তেন তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে। এলাকাবাসী তাই ভালবেসে তাকে ডাক্তার ভাই বলে ডাকতো। ২০১৪ সালের পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার তাকে নাগরিকত্ব দেয়।

নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী। তাতে কী, গরীব দুঃখী মানুষের সেবা করা করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়।

৭৪ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন সেই ডা. এড্রিক সাজিশন বেকার। ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫-এ এ দেশের সংবাদ মাধ্যম শিরোণাম করতে লাগলো-‘গরীবের ডাক্তার মারা গেছেন’।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, গরীবের ডাক্তার কি আদৌ মারা গেছেন? আহারে! জবাবে যদি বেশি মাত্রায় পেতাম ‘না, না’। আর সেই জবাব যদি বেশি আসতো ডাক্তারদের পক্ষ থেকেই!

এক সময় আমরা সবাই পাঠে পাঠে মনে গেঁথেছিলাম-‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। মেধাবীদের অভিলাষে ছিল-‘বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই, মানুষের সেবা করতে চাই’। এই সময়ে এসে আমাদের বলতে হচ্ছে শিক্ষা নয়, কেবল ‘সুশিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড’। এখন মেধাবীদের ইচ্ছায় প্রতিফলন হতে হবে এভাবে, ‘আদর্শ ডাক্তার হয়ে গরীব-দু:খীর সেবা করতে চাই’। তাহলে আর যাই হোক, ‘গরীবের ডাক্তার’ কখনো মরবে না।

প্রতিক্ষণ/এডি/তাফ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G