তাজমহলের সত্যিকারের নির্মাতা কে?

প্রকাশঃ মে ২০, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

ইয়াসীন পাভেল, প্রতিক্ষণ ডট কম:

History_Engineering_the_Taj_Mahal_পৃথিবীতে সাতটি বিস্ময়ের একটি তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায়, যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এ বিস্ময়ের সৌন্দর্যের বর্ণনা ভাষাতীত। শাশ্বত ভালবাসার অনন্য নিদর্শন তাজমহল। মোঘল স্থাপত্যের এই অনন্যশৈলীর মাধ্যমে মানব হৃদয়ের ভালবাসার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তাজমহল তৈরি করেন মোঘল সম্রাট আকবরের দৌহিত্র সম্রাট শাহজাহান, তার প্রিয়তমা স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগমের স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে।

মমতাজ মহল ছিলেন শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী। ১৬৩১ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপুরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য নির্মাণ করেন ভালবাসার এই অপরূপ নিদর্শন।

তাজমহলের নির্মাণ শুরু হয় ১৬৩২ সালে, মমতাজের মৃত্যুর এক বছর পর। ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের প্রচেষ্টায় ১৬৪৮ সালে, মমতাজের মৃত্যুর ১৭ বছর পর গম্বুজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। যদিও পুরো কাজ শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। শুধু মানুষ নয়, এ মহান কীর্তির ভাগিদার ১০০০ হাতী, যারা নির্মাণের জন্য মার্বেল পাথর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।

উপরে যা বললাম তা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু এবার একটু নড়েচড়ে বসতে হবে। কারণ এখন যা বলতে যাচ্ছি তা হয়ত অনেকের কাছেই নতুন ও অন্যরকম মনে হতে পারে।

আমাদের চেনা-জানা তাজমহলের ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন প্রফেসর পি.এন. অক (Professor P.N. Oak– Taj Mahal: The True Story বই এর লেখক)। তিনি দাবী করেন যে, তাজমহল বেগম মমতাজ মহলের সম্মানে নির্মিত প্রেমের সমাধিস্থল নয়, বরং এটা প্রাচীন দেবতা শিব (যাকে আগে বলা হত “তেজ মহালয়”) এর মন্দির যেখানে আগ্রার রাজপুতরা পূজা অর্চনা করত। পরে শাহজাহান একে তার মৃত স্ত্রীর স্মরণে স্মৃতিশালা হিসেবে গড়ে তোলেন।

ইতিহাস অনুসন্ধানে তিনি দেখতে পান যে, শিব মন্দিরটি সম্রাট শাহজাহান অন্যায়ভাবে জয়পুরের মহারাজার (জয় সিং) কাছ থেকে দখল করেন। সম্রাট শাহজাহান তার নিজস্ব দিনপঞ্জীতেও (বাদশাহনামা) উল্লেখ করেছেন যে, জয় সিং এর কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেয়া হয়। এবং এর জন্য জয় সিংকে অনত্র জমিও দেয়া হয় সম্রাট শাহজাহানের পক্ষ থেকে।

Tombs-in-crypt
এখানেই ঘুমিয়ে আছেন সম্রাট শাহজাহান এবং তার প্রিয় “তাজ”

“তাজমহল” নাম নিয়েও প্রফেসর অক সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মোঘল আমল (এমনকি সম্রাট শাহজাহানের আমলেও) দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও “তাজমহল” নাম উল্লেখ নেই! তাছাড়া ওই সময়ে কোন মুসলিম দেশে কোন প্রাসাদ/ভবনের নাম “মহল” রাখার প্রচলন ছিল না!

তাজমহল নাম এসেছে মমতাজ মহল থেকে—এটাও তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি দুটো কারণে। প্রথমতঃ তার প্রকৃত নাম কখনই মমতাজ মহল ছিল না। দ্বিতীয়তঃ কেউ কারো নামে কোন প্রাসাদের নামকরণ করতে চাইলে তার নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে (মমতাজ থেকে “মম” বাদ দিয়ে তাজ) নাম রাখবেন–এটাও সহজে মেনে নেয়া যায়না।

তিনি আরো বলেন, মমতাজ আর শাহজাহানের ভালবাসার গল্প মুলতঃ রূপকথা যা সময়ের লোকদের মুখ থেকে সৃষ্ট। কারণ ওই সময়কার কোন সরকারী নথিপত্রে বা গ্রন্থে মমতাজ-শাহজাহানের প্রেমের কথা উল্লেখ নেই।

পাশাপাশি প্রফেসর অক কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন যা প্রমাণ করে তাজমহল শাহজাহান শাসনামলের নয়!

১। নিউ ইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার (Marvin Miller) যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে যে কার্বন পাওয়া যায় তা সম্রাট শাহজাহনের শাসনামলেরও ৩০০ বছরের পুরনো!

২। ইউরোপিয়ান পর্যটক যিনি ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমণ করেন (মমতাজ মারা যাওয়ার মাত্র সাত বছর পর) তিনি তার গ্রন্থে সেসময় তাজমহল তৈরির কোন সূত্র উল্লেখ করেননি।

প্রফেসর অক তাজমহলের স্থাপত্যশৈলীর কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা তুলে ধরে বলেন যে, তাজমহল মুলতঃ হিন্দু মন্দির ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, তাজমহলের অনেক কামরাই শাহজাহানের আমল থেকেই তালবদ্ধ  রাখা হয়েছে যা এখনও জনসাধারণের অজানা রয়ে গেছে। প্রফেসর অক দৃঢ়তার সাথে দাবী করেন যে, ওই কামরাগুলোর একটাতেই আছে দেবতা শিবের মস্তকবিহীন মূর্তি যা সচরাচর হিন্দুদের মন্দিরে দেখা যায়।

ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সংঘাতের আশংকায় ইন্দিরা গান্ধির সরকার প্রফেসর অকের বই বাজার থেকে উঠিয়ে নেয় এবং ভারতে এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। থাকুক কিছু রহস্য, রহস্য আছে বলেই তাজ হয়তো আজ এত সুন্দর…!!

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G