নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভ্যালি সাজেক
রবিউল ইসলাম, প্রতিক্ষণ ডট কম
আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে। মেঘ ছুঁয়েছে পাহাড়। আর ঝরণা ছুঁয়েছে নদীকে। বিস্তৃত উঁচু পাহাড়। সবুজে ঘেরা আর পাখপাখালিতে ভরা বনবাঁদাড়। নুয়েছে যেন মেঘবালিকা। পৃথিবীর এ যেন এক মনোরম ভূ-স্বর্গ। চোখ জুড়ানো নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার এ স্থানের নাম সাজেক ভ্যালি।
সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটারের দূরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। প্রকৃতির এই রুপ যেন রাঙামাটির ছাদ! নয়নাভিরাম অরণ্যভূমি আর পাহাড়ের বন্ধনে যেখানে মেঘের দল প্রেমে মেতে থাকে।
পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়, তারা যেন নিজেকে আবৃত করেছিল কুয়াশার নরম চাদরে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচালং নদী।
রাস্তার দুপাশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি ঘর। বাঘাইহাট বাজারের পর গঙ্গারাম মুখ। দুপাশ থেকে বয়ে আসা দুটি নদী এক হয়েছে এখানে। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া নদী চলে গেছে দূরের পথ ধরে। মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল সমৃদ্ধ বনভূমির সন্ধান পাবেন কেবল সাজেক ভ্যালির পথে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, কয়েক রকমের জুম চাষে ভরপুর পাহাড়।
পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ছোটখাট বাজার। এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। আদিবাসী আর বাঙালি— মিলেমিশে এই বাজারে ব্যবসা করে। দূরদূরান্তের পাহাড়িরা একদিন আগেই বাজারে আসতে শুরু করেন।
মাচালং বাজার থেকে সাজেকের পথের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। বন্ধুর পথ— দুপাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে উদ্ধত শিখর তুলে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষরাজি। দীর্ঘজীবি বৃক্ষের দেখা মেলে এই পথে, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি। দূরের পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়ি দেখতে না দেখতেই পৌঁছে যায় সেই মেঘের রাজ্যে।
রুইলুই পাড়া থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথ কংলাক পাড়া। পাংখোয়াদের বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ১৫ পরিবারের বসবাস হবে। বিশাল পাথরখণ্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান। কংলাকের পাথরচূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়।
পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে এখানে আকাশ ঘুমায়, পাহাড়ের বন্ধনহীন মিলন দেখা যায়। কোথাও কোথাও তুলার মতো দলছুট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের চূড়ায়, যেন স্বপ্নরাজ্য। পূর্ণিমায় আলোয় আলোকিত পুরো পাড়া। সহস্র নক্ষত্রে ঢাকা সাজেকের বিস্তৃত আকাশ আর নক্ষত্রের আলোয় নিচের পৃথিবী, ধবধবে জোছনার আলোয় আলোকিত উপত্যকার পুরো রাজ্য।
জ্যোৎস্না রাতের আলোয় কাছে দূরের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জেগে উঠছে ঘন সাদা কুয়াশা। এমনই ঘন যে, কুয়াশাকে মনে হয় মেঘের ভেলা। এরকমই মেঘের ভেলায় ডুবে যাওয়া পাহাড়ের চূড়াকে মনে হয় সমুদ্রের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। বিভ্রম জাগে, এ কি আমাদের চেনা পৃথিবী!
ঘোরলাগা রাত এক সময় ভোর হয়, মেঘ পায়ের কাছে হেসে লুটোপুটি খায়- নতুন দিনের অভিবাদন জানায়। হলুদ নদী, সবুজ বন, গেরুয়া পাহাড় সবটুকু অদৃশ্য হয় সাদা মেঘের আড়ালে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাকিব
