প্রাচীন মিশরের মমি সংরক্ষণের ইতিহাস

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৮:১০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১০ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

egyptian_mummyমিশরের পিরামিড ও মমি বিশ্ব ইতিহাসের এক অনবদ্য অধ্যায়। পিরামিডগুলো সাধারণত গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ফারাওদের সমাধি সৌধ হিসেবে। ফারাওদের মৃত দেহগুলো সরাসরি মাটি চাপা না দিয়ে মমি তৈরি করে পিরামিড বা সমাধি সৌধ নির্মাণ করা হতো।

আবার এমন অনেক মৃতদেহ ছিল যেগুলোর পিরামিড তৈরি না করলেও মমিতে রুপান্তরিত করার পর সমাহিত করা হতো। মিসরীয়দের বিশ্বাস ছিল মৃত্যুর পরও  জীবনের অস্তিত্ব থাকে। আর সেজন্য তারা মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়-স্বজনের দেহকে  স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কবরস্থ করত না।

মৃতদেহগুলোকে মমি তৈরি করার পিছনে ছিল এক অভিনব পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মমিগুলোকে এমনভাবে সংরক্ষণ করা হতো যাতে সেগুলো পচে-গলে নষ্ট না হয়ে যায়। যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকে তারা ভূগর্ভস্থ কক্ষে শায়িত অবস্থায় বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মৃতদেহগুলোকে কবরস্থ করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মরুভূমির বুকেই তারা মমি তৈরির মাধ্যমে মৃতদেহকে কবরস্থ করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করত। এই কবর দেওয়ার মাঝে ধনী, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণের মাঝে থাকতো পার্থক্য। ধনী বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কবরের উপর পাথর গেঁথে গেঁথে পিরামিড তৈরি করে স্মৃতি রক্ষা করা হতো।

কিছু দিন পর থেকে লাশ পচা-গলা শুরু হওয়ার কারণে সেগুলোকে অবিকৃত অবস্থায় পিরামিডে বা সমাধিতে সংরক্ষণ করা ছিল তাদের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। তাই মৃতদেহগুলোকে পিরামিডে বা সমাধিতে অবিকৃত রাখতে মিসরীয়রা এক বিশেষ ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করত। যাকে বলা হয় মমি সংরক্ষণ পদ্ধতি। প্রথম দিকে তারা যে পদ্ধতিতে মমি সংরক্ষণ করতো তাতে মৃতদেহগুলো খুব বেশী দিন স্থায়ী হতো না।

মমি তৈরির পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকার কারণে কিছু দিন পর মৃতদেহগুলো নষ্ট হয়ে যেত। এর ফলে মিসরীয়রা চেষ্টা চালিয়েছিল নতুন কোনও পদ্ধতির আশ্রয় নিতে। নতুন পদ্ধতি হিসেবে তারা মানুষের মৃত্যুর পর  পচন ধরার আশংকা থাকে এরকম কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে বাহির করে আলাদা করে রাখতো। সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে ছিল পাকস্থলী, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, যকৃত, প্রভৃতি। এরপর তারা কাটে নেওয়া দেহের অংশগুলোকে চারটি বিশেষ পাত্রে রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতো। কয়েক ঘণ্টা পরে সেগুলোকে আবার মৃতদেহে প্রতিস্থাপন করা হত। এরপর মৃতদেহটিকে লবণ মাখিয়ে প্রখর রোদে রাখা হতো শুকানোর জন্য। এভাবে কয়েকদিন মৃতদেহটিকে রোদে শুকানোর পর খুবই সতর্কতার সাথে এমনভাবে মৃতদেহের পেটের কাটা অংশকে সেলাই করা হতো যাতে মৃতদেহের পেটের ভিতর কোনও প্রকার বাতাস না ঢুকতে না পারে।

এরপর এক গামলা পাইন গাছের বর্জ্য পদার্থ বা আঠা মৃতদেহের গায়ে ঘষে-মেজে ভালো করে লেপে দেয়া হত, তারপর লিনেন কাপড়ের চওড়া ফিতে জড়িয়ে মৃতদেহটিকে বেশ পুরু করে ফেলা হতো। লিনেন কাপড় বায়ু নিরোধক। ফলে সহজে এটি ভেদ করে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। কাপড় জড়ানোর পর একটি ঢাকনা যুক্ত কাঠের বাক্সে লিনেন কাপড়ে ঢেকে আপাদমস্তক মমিটিকে রাখা হত। এরপর তারা শুরু করতো মৃতদেহটিকে সমাহিত করার কাজ।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G