WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

বোমারু বিমান থেকে দেখেছি; মুক্তিযুদ্ধ বোমারু বিমান থেকে দেখেছি; মুক্তিযুদ্ধ

বোমারু বিমান থেকে দেখেছি; মুক্তিযুদ্ধ

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৪০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২৩ অপরাহ্ণ

RCAF-CF-18১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার কল্যান কুমার দত্ত। যুদ্ধের প্রথমে পশ্চিম রণাঙ্গনে, আর শেষের দিকে হাজার হাজার পাউন্ড বোমা ফেলতে ঢাকার আকাশে উড়ে গিয়েছিলেন কল্যান কুমার। পরবর্তিতে ভারত সরকার তাঁকে ‘বীর চক্র’ উপাধি দিয়েছিলেন।

বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হয়ে অবসর নেওয়া কল্যান কুমার দত্তের সেই স্মৃতিচারণ তুলে ধরা হলো প্রতিক্ষণ পাঠকদের জন্য:

“আমার জন্ম বার্মায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাবা দেশের বাড়িতে নিয়ে আসেন আমাদের। এখন যে মুন্সিগঞ্জ জেলা, তারই টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় আমাদের গ্রাম, অপারকাঠি। দেশভাগের সময়ে আমরা পাকাপাকিভাবে ভারতে চলে আসি।

১৯৫৭ সালে বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসাবে যোগ দিই । আমি ছিলাম ফ্লাইট নেভিগেটর। ৬২ আর ৬৫ সালেও যুদ্ধে গিয়েছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়ে আমি বিমান বাহিনীর ১৬ নম্বর স্কোয়াড্রনের লিড নেভিগেটর ছিলাম, আমার র‍্যাঙ্ক ছিল স্কোয়াড্রন লিডার। আমাদের স্কোয়াড্রনের ঘাঁটি ছিল উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে। আমাদের বোমারু বিমানগুলো ছিল ক্যানবেরা।

এই বিমানে দুজন ক্রু সদস্য থাকে, পাইলট আর নেভিগেটর। পাইলট যেমন নেভিগেটরের নির্দেশিত পথে বিমান নিয়ে যায়, তেমনই রকেট হামলা বা গুলিবর্ষণের কাজটাও পাইলটের। আর নেভিগেটরের কাজ হল বোমা নিক্ষেপ করা। টার্গেটের কত আগে থেকে কোন অ্যাঙ্গেলে বোমাগুলো রিলিজ করতে হবে, সেটা আমাদের কাজ।

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আমাদের নিয়মিত ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ চলছিল। কোথায় কোথায় সম্ভাব্য হামলা চালাতে হতে পারে, সে ব্যাপারে শিলংয়ে বায়ুসেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড দপ্তরে ব্রিফিং করা হয়েছিল।
আমি যেহেতু স্কোয়াড্রনের প্রধান নেভিগেটর ছিলাম, তাই সম্ভাব্য টার্গেট, যেমন: যশোর, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জায়গায় আমাদের বোমারু বিমানগুলো কোন রাস্তায় যাবে সেটা আমিই ঠিক করেছিলাম, পাইলটদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিলাম।

ডিসেম্বরের ৩ আর ৪ তারিখ যখন পাকিস্তান আমাদের ওপরে হামলা শুরু করল পশ্চিমাঞ্চলের বিমান ঘাঁটিগুলোর ওপরে, তখন আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে নেমে পড়লাম। প্রস্তুতি আগেই ছিল। আমাদের স্কোয়াড্রনের কিছু ক্যানবেরা বিমান গেল পূর্ব রণাঙ্গনে, আর কিছু গেল পশ্চিমে। আমি পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক ভেতরে ঢুকে পাঁচবার বোমা হামলা চালিয়েছি। যুদ্ধের শেষ দিকে আমাদের পাঠানো হল পূর্ব দিকে।

তার আগে সেনাবাহিনী অনেকটাই লড়াই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, একরকম কোণঠাসা করে ফেলেছিল পাক বাহিনীকে। আমাদের বলা হল ফাইনাল এসল্ট করে পাক বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে হবে। আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানিদের কোণঠাসা করতে করতে ঢাকার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। একটা পাকিস্তানী ডিভিশনাল হেডকোয়াটার্স অবস্থান করছিল শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে। গোরখপুর থেকে আমাদের দমদমে নিয়ে এসে বলা হল ওই ডিভিশনাল হেডকোয়াটার্সটা ধ্বংস করতে হবে।151216030922_kalyan_kumar_dutta_640x360_groupcaptainkalyankumardutta_nocredit (1)

তারিখটা ছিল ১১ই ডিসেম্বর। দুপুর বেলায় ব্রিফিংয়ের পরে বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ আমরা রওনা হলাম। আমাদের কম্যান্ডিং অফিসার গৌতমের সঙ্গে আমি প্রথম বিমানে। খুব নীচ দিয়ে বিমান চালিয়ে ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যেই টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম কোনও বাধা ছাড়াই। ওদের তখন বোমারু বিমান আটকানোর মতো কিছুই ছিল না।

শীতলক্ষ্যার ধারে তখন অনেক চটকল ছিল। তারমধ্যে পাক বাহিনীর ডিভিশনাল হেডকোয়াটার্স খুঁজে নিতে খুব অসুবিধা হল না। বেশ কিছুটা আগে ৫শ ফিট থেকে একলাফে সাত হাজার ফিট উঠে আমি বোমাগুলো রিলিজ করে দিলাম। আমার ফেলা বোমার ধোঁয়া দেখে পিছনের তিনটে বিমানও নির্দিষ্ট টার্গেটেই বোমা ফেলতে পারল। আমরা সেদিনের মতো ফিরে গেলাম গোরখপুরে আমাদের ঘাঁটিতে।

এর পরে ১৩ তারিখ আবার আমাদের মিশন দেওয়া হল। এটা রাতের মিশন ছিল। তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে ধ্বংস করতে হবে। এবারও তিনটে বিমান আমাদের সঙ্গে। আমরা এক এক মিনিটের তফাতে গুয়াহাটি থেকে উড়েছিলাম সেই রাতে। শিলং পাহাড় পেরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতেই মেঘের কবলে পড়তে হল। তাই একটু পথ পালটিয়ে ঢাকার ওপরে পৌঁছলাম। তেজগাঁও বিমানবন্দরের ওপরে একটা চক্কর কাটল আমাদের বিমান। ততক্ষণে অন্য দুটো বিমান চলে এসেছে কাছে।

আমি সময় বুঝে ফ্লেয়ার (বিমান থেকে ছাড়া প্যারাশ্যুট লাগানো প্রবল শক্তিশালী আলো – যাতে নীচের টার্গেট স্পষ্ট দেখা যায়) ছাড়লাম চারটে। সেই অনুযায়ী পর পর বোমাগুলো ফেলা হল বিমানবন্দরের ওপরে। এর পরে শেষ মিশন ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ।ৎ

জেনারেল মানেকশ ততক্ষণে পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বলা হল আরও চাপ বাড়াতে হবে, যাতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি–র সামনে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা না থাকে। আবারও যেতে হল গুয়াহাটি বিমানঘাঁটিতে। সেখানকার বেস কমান্ডার আমাদের কিছু ছবি দেখালেন, ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটির। বলা হল ওখানে গিয়ে যা দেখবে ধ্বংস করে দেবে। বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটে, এই আধঘণ্টার মধ্যে হামলা শেষ করতে হবে আমাদের।

national-flag-of-bangladesh-online-dhaka-guideযাত্রাপথ নির্দিষ্ট করার পরে আমরা ঠিক করলাম ঠিক দশ মিনিট পর পর আমরা হামলা চালাবো। সেই মতো প্রথমে আমাদের বিমান। বিকেল চারটের সময়ে পৌঁছলাম কুর্মিটোলার ওপরে। একটা বাড়ি দেখে মনে হল ওটা সম্ভবত অপারেশনস্ কন্ট্রোল রুম। সেটাকে টার্গেট করে বিমানের ডানায় যে দুটো এক হাজার পাউন্ডের বোমা রাখা থাকে, সেদুটো রিলিজ করে দিলাম আমি। কয়েক সেকেন্ড পরেই ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখলাম। এত কালো ধোঁয়া জ্বালানি তেলে বিস্ফোরণ হলেই হওয়া সম্ভব। আমরা যখন ঘুরে চলে আসছি আমার পিছনের দুটি বিমানকেও জানিয়ে দিলাম ধোঁয়ার কথাটা। আমরা ফিরতে থাকলাম গোরখপুরের দিকে। দুনম্বর বিমানটা ওই ধোঁয়াকে টার্গেট করেই বোমা ফেলেছিল। কিন্তু তিন নম্বর যে বিমান গিয়েছিল, সেখান থেকে পাইলট উইলসন রেডিও মেসেজ দিল যে ও ধোঁয়ার নীচে নেমে গিয়ে বোমা ফেলতে চায় ।

সেটাই ছিল ওই বিমানের শেষ ট্র্যান্সমিশন। পাক বাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলায় ক্যানবেরা বি ১ – ৫৮ বিমান আর তার পাইলট, নেভিগেটর দুজনেই মারা যায়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বি আর ই উইলসন ছিল পাইলট। যুদ্ধের ঠিক আগে ওর একটা মেয়ে হয়েছিল। আর নেভিগেটর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আর বি মেহতা অবিবাহিত ছিল, কিন্তু গোরখপুর এয়ার বেসকে মাতিয়ে রাখত ও, এত মিশুকে ছিল। দুজনেই আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। কি করে যে ঘটনাটা ঘটল, আমরা কিছু বুঝেই উঠতে পারলাম না। যদি যুদ্ধের গোড়ার দিকে পশ্চিম রণাঙ্গনে এটা হত, তাও মানতে পারতাম।

সেখানে আমাদের বিমানের ওপরে হামলা চালানোর মতো বিমানধ্বংসী গোলা, মিসাইল, ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট অনেক কিছু ছিল। কিন্তু যুদ্ধের একেবারে শেষ দিন, আমাদের স্কোয়াড্রনের শেষ মিশনের শেষ বিমানটা ধ্বংস হয়ে গেল, সঙ্গে মারা গেল দুজন খুব ভাল অফিসার। এজন্যই আমরা যুদ্ধ জয়ের কোনও আনন্দ করতে পারি নি।

যদিও পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করল, তাতে আমরা সন্তুষ্ট, কিন্তু আমাদের মনোবল সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিল। মনে পড়লে এখনও আমার চোখে জল এসে যায়।”

প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G