WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ গণহত্যার ভিডিও করেছি মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ গণহত্যার ভিডিও করেছি

মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ গণহত্যার ভিডিও করেছি

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৫:২৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫৫ অপরাহ্ণ

151920-freedom২৬ মার্চ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল প্রাঙ্গনে ছাত্রদের কিভাবে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করেছিলো পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লাহ একটি ভিডিও ক্যামেরায় তুলে রেখেছিলেন ভয়াবহ সেই দৃশ্য।ইউটিউবে আমরা বড়জোর মিনিটখানেক দেখেছি।

মূল ফুটেজটা প্রায় ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের। এ সাক্ষাতকারটি স্বাধীনতার পরপর ছাপা হয়েছিল দৈনিক বাংলার বাণীর বাংলাদেশে গণহত্যা নামের একটি বিশেষ সংখ্যায়। এটিতে নুরুল উল্লাহ আরো বিস্তারিত জানিয়েছেন তার সেই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। সাক্ষাতকারটি নিয়েছিলেন রাশীদুল হাসান:

আপনি কি ২৫ মার্চের হত্যাকাণ্ডের ছবি নিজ হাতে তুলেছিলেন?

হ্যাঁ। আমি জগন্নাথ হলের মাঠে ২৬ মার্চের সকালবেলা যে মর্মস্পর্শী দৃশ্য ঘটেছিলো তার ছবি আমার বাসার জানালা থেকে টেলিস্কোপ লাগিয়ে মুভি ক্যামেরায় তুলেছিলাম।

এ ছবি তোলার জন্য আপনার কি কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো, না এমনি হঠাৎ করে মনে হওয়ায় তুলে নিয়েছেন?

৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণের পর থেকেই আমার একটা ধারণা হয়েছিলো যে এবার একটা বিরাট কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তাই তখন থেকেই বিভিন্ন সভা, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, ব্যারিকেড ইত্যাদির ছবি আমি তুলতে আরম্ভ করি।

ক্যামেরাটি কি আপনার নিজস্ব?

না, ওটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ভিডিও টেপ ক্যামেরা। ছাত্রদের হাতেকলমে শিক্ষা দেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের আরো বহু ক্যামেরা ও জটিল যন্ত্রপাতি রয়েছে।

ক্যামেরাটি আপনার কাছে রেখেছিলেন কেনো?

এর জবাব দিতে গেলে আমাকে আরো একটু পেছনের ইতিহাস বলতে হয়। ইতিহাস কথাটা বলছি এজন্য যে. এগুলো ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখা উচিত। ৭ই মার্চের পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কিছু ছেলে এসে আমাকে ধরল, স্যার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি দিয়ে একটি ওয়ারলেস স্টেশন তৈরি করতে হবে।

আমি ওদের কথাটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারলাম না। এরপর ওরা একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে কথা ঠিক করে আমাকে তার ধানমন্ডীর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর একেবারে ভিতরের এক প্রকোষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি প্রথমে ব্যাপারটার গুরুত্ব অতোটা উপলব্ধি করতে পারিনি। অনেক ভিতরের একটা কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর আমি দেখলাম সেখানে সোফার উপর তিনজন বসে রয়েছেন। মাঝখানে বঙ্গবন্ধু। তার ডান পাশে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও বাপাশে তাজউদ্দিন সাহেব।

আমি ঢুকে বঙ্গবন্ধুকে সালাম করলাম। ছাত্ররা আমাকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। যদিও আগে অনেকবার তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছিলো। তিনি সোফা থেকে উঠে এসে আমাকে ঘরের এককোণে নিয়ে গেলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে অত্যন্ত সন্তর্পনে বললেন, ‘নুরুল উল্লাহ, আমাকে একটা ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে হবে। আমি যাবার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। তুমি আমাকে কথা দাও, যেভাবেই হোক একটা ট্রান্সমিটার আমার জন্য তৈরি রাখবে। আমি শেষবারের ভাষণ দিয়ে যাব।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ তখন আমার কাছে বাচ্চা শিশুর আবেগময় কণ্ঠের আবদারের মতো মনে হচ্ছিলো। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমাদের তড়িৎ কৌশল বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে সব কথা খুলে বললাম। শুরু হলো আমাদের কাজ। বিভাগীয় প্রধান ড. জহুরুল ইসলামসহ প্রায় সকল শিক্ষকই আমাকে সহযোগিতা করতে লাগলেন। ৯ দিন কাজ করার পর শেষ হলো আমাদের ট্রান্সমিটার। এর ক্ষমতা বা শক্তি ছিলো প্রায় সারা বাংলাদেশব্যাপী। শর্টওয়েভে এর শব্দ ধরা যেত। যাহোক, পরবর্তী সময়ে এর ব্যবহার আর হয়নি। এরই সাথে আমার মাথায় ধারণা এলো যদি কোনো হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ বা গোলাগুলি হয়, তাহলে আমি তা ক্যামেরায় তুলে ফেলবো। এবং সেই থেকেই আমি ক্যামেরাটি সাথে রাখতাম।

আপনি কখন ছবি তোলা শুরু করেন?war-71

রাতে ঘুমের ভেতর হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে আমাদের সকলের ঘুম ভেঙে যায়। অবশ্য আমরা তখন অতটা গুরুত্ব দেইনি। আমি ভেবেছিলাম যে আগের মতোই হয়তো ছাত্রদেরকে ভয় দেখাবার জন্য ফাঁকা গুলি করা হচ্ছে। অথবা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের নির্দেশ ও সহযোগিতায় যেসব হাতবোমা তৈরি করেছিলো, তারই দুয়েকটা হয়তো বিস্ফোরিত হয়েছে। সারারাত একটা আতঙ্কের মধ্যে কাটালাম। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে জগন্নাথ হলের দিকে তাকাতাম। কিন্তু সমগ্র এলাকাটা আগে থেকেই বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়াতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো।

রাতে জগন্নাথ হল এলাকায় কি হচ্ছিলো কিছুই দেখতে পারলাম না। শুধু গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছিলাম। কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে ওখানে দুপক্ষেই একটা ছোটখাট লড়াই হচ্ছে। সাথে সাথে আমার ক্যামেরাটার কথা মনে পড়ে গেলো। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সকাল হবে আর দিবালোকে আমি ছবি তুলতে পারবো।

আপনি যে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন তা কি বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো না?

এমনভাবে ক্যামেরা বসানো হয়েছিলো যে বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। কারণ পর্দার আড়ালে এমনভাবে বসানো হয়েছিলো যে শুধু ক্যামেরার মুখ বের করা ছিলো। পুরো ক্যামেরাটা কালো কাপড়ে মোড়ানো ছিলো। আমাদের জানালাগুলো এমনভাবে তৈরি যে বন্ধ করার পরও ধাক্কা দিলে কিছুটা ফাঁক রয়ে যায়। ঐ ফাঁক দিয়ে ক্যামেরার মুখটা বাইরে বের করে রাখলাম।

ক্যামেরা চালু করলেন কখন?

সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম যে, জগন্নাথ হলের সামনের মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদেরকে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে, তখনই আমার সন্দেহ জেগে যায়। এবং আমি ক্যামেরা অন করি। আমাদের ক্যামেরাটির একটি বিশেষ গুণ এই যে, এতে মাইক্রোফোন দিয়ে একই সাথে শব্দ তুলে রাখা যায়। তাই আমি টেপের সাথে মাইক্রোফোন যোগ করে ক্যামেরা চালু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম যে ছেলেগুলোকে এক ধার থেকে গুলি করা হচ্ছে ও একজন একজন করে পড়ে যাচ্ছে।

পাকসেনারা আবার হলের ভিতরে চলে গেলো। আমি ভাবলাম আবার বেরিয়ে আসতে হয়তো কিছু সময় লাগবে। তাই এই ফাঁকে টেপটা ঘুরিয়ে আমার টেলিভিশন সেটের সাথে লাগিয়ে ছবি দেখতে লাগলাম যে ঠিকভাবে উঠেছে কিনা। এটা শেষ করতেই আবার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আবার কিছু সংখ্যক লোককে ধরে এনেছে। আবার লাইন করে দাঁড় করানো হয়েছে। আমি তখন আগের তোলা টেপটা মুছে ফেলে তার উপরে আবার ছবি তোলা শুরু করলাম।

6আপনি আগের তোলা টেপটা কেনো মুছে ফেললেন?

আমার মনে হচ্ছিলো আগের ছবিতে সবকিছু ভালোভাবে আসেনি। আর নতুন ছবি তুলতে গিয়ে আমি হয়তো আরো হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য ধরে রাখতে পারবো। আর হাতের কাছে আমার টেপ ছিলো না। মোটকথা আমি ঐ সমস্ত দৃশ্য দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেলাম। আজও আমি দুঃখ করি যদি নতুন টেপে ছবি তুলতে পারতাম তাহলে কতো ভালো হতো। দুটো দৃশ্য মিলে আমার টেপের দৈর্ঘ বেড়ে যেত। কিন্তু তখন এতকিছু চিন্তা করার সময় ছিলো না। যাহোক দ্বিতীয়বারের লাইনে দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোর করে ক্ষমা চাইছে। আমার মনে হচ্ছিলো সে তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলো যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকবাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো।

মাঠের অপরদিকে অর্থাৎ পূর্বপাশে পাকবাহিনী একটা তাবু টানিয়ে ছাউনি করেছিলো। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি তামাশা ও আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ছে।

লোকগুলোকে হলের ভিতর থেকে কিভাবে আনা হচ্ছিলো?

যাদেরকে আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। এবং মৃতদেহগুলি এনে সব একজায়গায় জমা করা হচ্ছিলো। এবং ওদেরকে দিয়ে লেবারের কাজ করাবার পরে আবার ওদেরকেই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মনে হচ্ছিল একটা একটা করে পড়ে যাচ্ছে।

জমা করা মৃতদেহের সংখ্যা দেখে আপনার ধারণায় কতগুলো হবে বলে মনে হয়েছিলো?

আমার মনে হয় প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছিলো।

আপনার কি মনে হয় যে ওগুলো সবই ছাত্রদের মৃতদেহ?

আমার মনে হয় ছাত্র ছাড়াও হলের মালি, দারোয়ান, বাবুর্চি-এদেরকেও একই সাথে গুলি করে মারা হয়েছে। তবে অনেক ভালো কাপড়চোপড় পড়া বয়সী লোকদেরও ওখানে লাইনে দাড় করিয়ে মারা হচ্ছিলো। এদেরকে দেখে আমার মনে হয়েছে এরা ছাত্রদের গেস্ট হিসেবে হলে থাকছিলো।

আপনি কি দেখেছেন যে কাউকে গুলি না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?

না, তবে লাইনে দাঁড় করাবার পর যে খান সেনাটিকে গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো সে যখন পেছনে তার অফিসারের দিকে মুহূর্তের জন্য তাকিয়েছিলো তখন দুজন লোক ঝপ করে মৃতদেহগুলোর মধ্যে শুয়ে পড়লো। আর বাকিদের গুলি করে মারা হলো। গুলি করে খানসেনারা সবাই যখন কয়েক ঘণ্টার জন্য এই এলাকা ছেড়ে চলে গেলো সেই ফাঁকে ওই দুজন উঠে প্রাণভয়ে পালাতে লাগলো। পরবর্তীতে এদের একজন এসে আমার বাসায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলো। সে একজন ছাত্রের অতিথি হিসেবে হলে থাকছিলো। ঢাকায় এসেছিলো চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে।

আপনি কি আপনার ইচ্ছেমতো সব ছবি তুলতে পেরেছিলেন?

না, আমি আগেই বলেছি যে আমি থেমে থেমে তুলছিলাম পাছে টেপ ফুরিয়ে যায়। তাই আমি সব ছবি তুলতে পারিনি বলে আমারও ভীষণ দুঃখ হচ্ছে। কারণ পরে বুলডোজার দিয়ে সব লাশগুলো ঠেলে গর্তে ফেলা হচ্ছিলো সে ছবি আমি তুলতে পারিনি। কারণ ওরা কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবার পরপরই আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো।

আপনি কি টেপ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন?5

না, আমি সাথে নেয়াটা আরো বিপদের ঝুঁকি মনে করে বাসাতেই যত্ন করে রেখে যাই। আর এ ঘটনা একমাত্র আমার স্ত্রী ছাড়া কেউ জানতো না। বাইরে নিয়ে গেলে হয়তো অনেকেই জেনে ফেলতো এবং আজকে এই মূল্যবান দলিল আমি দেশবাসীর সামনে পেশ করতে পারতাম না।

আপনি কখন এই টেপ সবার সামনে প্রকাশ করলেন?

যুদ্ধকালীন নয় মাস প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত আমার আতঙ্কের মধ্যে কেটেছে। কখন কে জেনে ফেলে। কখন আমি ধরা পড়ে যাই, বা কখন এসে এটা নিয়ে যায়। এমনি মানসিক যন্ত্রনায় আমি ভুগছিলাম। যাহোক দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৭ই ডিসেম্বরের দিকে আমি আস্তে আস্তে প্রকাশ করলাম আমার এই গোপন দলিলের কথা। এবং ২-৩দিন পরেই এটা আমি সবাইকে জানালাম ও কয়েকদিন পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্যদের এটা দেখালাম। এ খবর শুনে অনেক বিদেশী সাংবাদিক আমার কাছে এলেন। এর ছবি দেখে আমার কাছে বহু টাকার বিনিময়ে এই দলিলের অরিজিনাল কপি অর্থাৎ আসল টেপ কিনতে চাইলেন।

আপনি কি রাজী হলেন?

আমার রাজী হবার প্রশ্নই ওঠে না। অরিজিনাল কপি আমি হারালে সেটা আমার দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি হবে। টাকার বিনিময়ে আমি এই সর্বনাশ করতে পারলাম না। আমার সাধ ছিলো বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তাকে আমি এই চলমান জীবন্ত ছবি দেখাবো।

বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর দেখাতে পেরেছেন কি?

না, সে কথা বলে আর লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর তাকে ঘিরে ফেললেন যারা তাদের কাছে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েও আমি বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতপ্রার্থী হতে পারলাম না। কোনো এক সচিব মন্তব্য করেছিলেন যে এসমস্ত বাজে ছবি দেখার মতো সময় নাকি বঙ্গবন্ধুর নেই।

কিন্তু এতবড় প্রামাণ্য দলিল নিয়ে আপনার চুপ করে বসে থাকাটা মোটেও উচিত নয়। কারণ আমার মনে হয় পাকবাহিনীর বিচারের সময় এই প্রামাণ্য ছবি বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহীদের পক্ষে স্বাক্ষী দেবে। আপনার কি মনে হয়?

এটা নিয়ে আমি অনেক কিছু চিন্তা করেছি। কারণ যে টেপে এই ছবি নেওয়া হয়েছে তা যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই টেপ থেকে ফিল্ম তৈরি করে রাখতে হবে। কারণ ফিল্ম অনেক পুরানো হলেও নষ্ট হয় না। কিন্তু টেপ কিছুদিন পরেই নষ্ট হয়ে যাবে। আর ফিল্ম করা হলে পরে এ থেকে অনেক কপি করে বিশ্বের মানুষের কাছে আমরা প্রমাণ দেখাতে পারবো যে বর্বর পাকবাহিনী বাংলাদেশে কিরকম গণহত্যা চালিয়েছে।

ফিল্ম তৈরি করার জন্য কোনো চেষ্টা আপনি করেছেন কি?

আমার চেষ্টায় এ ফিল্ম তৈরি সম্ভব নয়। কারণ যে ক্যামেরা দিয়ে এই ফিল্ম তৈরি করা যাবে তা বাংলাদেশে নেই। এজন্যে হয় এই টেপ জাপানে পাঠিয়ে করিয়ে আনতে হবে নতুবা ক্যামেরা এখানে নিয়ে আসতে হবে। তবে আমার মতে কারো হাতে এভাবে আসল কপিটা তুলে দেয়া ঠিক হবে না। আর এ ব্যাপারে সরকারী প্রচেষ্টাও পদক্ষেপ নেয়া না হলে এ দলিল নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য এ যাবত বিভিন্ন বিদেশী টেলিভিশন ও দেশী টেলিভিশন এ থেকে ছবি তুলে বিশ্বের মানুষকে দেখিয়েছে। কিন্তু সে ছবি স্পষ্ট আসেনি। কারণ দুটোর স্পিড ভিন্ন হওয়ায় চলমান দাগ পড়ে যায়। সুতরাং স্পষ্ট ছবি তুলে রাখতে হলে এই টেপ জাপানে বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যেতে হবে। আর বর্তমানে আমাদের রেকর্ডারটিও নষ্ট হয়ে যাওয়াতে এর ছবি দেখা যাচ্ছে না। যদি মেরামত করা হয় তাহলে বঙ্গবন্ধুকে এ ছবি দেখাবার ইচ্ছা আমার রয়েছে। অবশ্য বাংলার বাণী পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা বের করছে শুনে আমার ইচ্ছে হলো দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে কিছূ জানিয়ে রাখতে। তাই সকলের সুবিধার্থে আমি কতকগুলি আলোকচিত্র ছাপিয়ে দিচ্ছি। এই আলোকচিত্রগুলি আবার এই টেলিভিশন থেকে আমার নিজস্ব ক্যামেরায় তোলা হয়েছিলো।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G