WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

সংগ্রামী পারুলের এক যুগের স্বপ্ন সংগ্রামী পারুলের এক যুগের স্বপ্ন

সংগ্রামী পারুলের এক যুগের স্বপ্ন

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ১০:০৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

parulগ্রাম থেকে গ্রামে পায়ে হেটেঁ ফেরি করে কাপড় বিক্রি করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এ কাজ করেই তিন সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোসহ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তুলেছেন ৬ কক্ষের টিনশেড ঘর।

এখন সেই মানুষটির স্বপ্নজুড়ে আছে শুধু নিজস্ব একটি কাপড়ের দোকান। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের বিধবা গৃহবধূ পারুল বেগমের স্বপ্নের কথাই বলছি।
সারা দিন ফেরি করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাপড় বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন বিধবা পারুল বেগম। একেবারে শূন্য হাত থেকে অদম্য মনোবল আর কঠোর পরিশ্রম করে পারুল আজ সফল নারী। এই কাজ করেই সহায়-সম্বলহীন পারুল খুজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন।

ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতে করতে পারুলের কেটে গেছে ১৪টি বছর। পারুল এখন বেশ অসুস্থ। কথাও বলতে পারেন না ঠিকমত। পারুলের বোন জানান, মিশন থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার ঋণ নিয়েছে পারুল এবং সর্বোচ্চ দেড় লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণ পরিশোধে অনিয়মও  করেনি। এ ব্যবসা করেই পারুল মেয়ে রোজিনাকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়ে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছেন।

বড় ছেলে রাশেদকে করে দিয়েছেন গাড়ি মেরামত করার একটি দোকান। ছোটখাটো গাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করেছে সে। ছেলেকে একটি ওয়ার্কশপের মালিক হতে সহযোগিতা করাটাই তার আসল স্বপ্ন। ছোট ছেলে রাসেল এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট ছেলে রাসেল পড়াশুনা করে অনেক বড় কিছু হবে, এটিও পারুলের আরেকটি স্বপ্ন। আর যে স্বপ্ন তিনি অন্তরে লালন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে, শুধু টাকার অভাবেই তা করতে পারছেন না।

তার স্বপ্ন হলো একটি দোকানে বসে কাপড় বিক্রি করা। তাছাড়া এ ব্যবসা করেই ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তুলেছেন ৬ কক্ষের টিনশেড ঘর। একটিতে থাকেন দুই সন্তানসহ আপন এক বোন, অন্যটিতে দুই সন্তানসহ নিজে। অন্য ৪টি কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন। পারুলের ঘর ভাড়া থেকে মাসে আয় হয় ৩ হাজার ৬০০ টাকা। কাপড়ের ব্যবসা থেকে আয় হয় মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও হাঁস, মুরগি আর ছাগল পালন করে বছরে প্রায় ২থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের আবদুর রশিদ গাজীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামী পেশায় বাস ড্রাইভার। সংসারের ব্যয় মেটাতে স্বামীর এ পেশাই একমাত্র ভরসা। তবুও সব ব্যয় শেষে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করা তেমন কঠিন হয়নি তাদের জন্য। স্বপ্ন পুরনো একটি মাইক্রোবাস কিনবেন। এভাবে দিন গড়িয়ে বছর চলে যায়। অল্প অল্প করে সঞ্চিত টাকার পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

তিলে তিলে জমা করা ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি পুরনো মাইক্রোবাস শেষ অব্দি কেনা হয় তাদের। স্বামী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ পারুলদের ভবিষ্যৎকে ঘিরে তখন কতই না স্বপ্ন রচিত হতে থাকে প্রতিদিন। কিন্তু বিধি বাম। স্বপ্ন-সুখের জাল বুনতে না বুনতেই মহা দুর্যোগের তিমিরে নিমজ্জিত হয় গোটা পরিবার। মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পারুলের স্বামী আবদুর রশিদ গাজী। বড় মেয়ে রোজিনা, ছেলে রাশেদ ও ছোট ছেলে রাসেলকে নিয়ে পারুল তখন দিশেহারা প্রায়। একটি টাকাও সঞ্চয় রেখে যাননি তার স্বামী, যা দিয়ে সন্তানদের মুখে অন্ন জোগাবেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর মাইক্রোবাসকে কেন্দ্র করে পারুলের দুই দেবরের সঙ্গে শুরু হয় বিরোধের । এক সময় পারুল একজন চালক রেখে মাইক্রোবাসটি ভাড়া খাটানোর উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দেবররা মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় মাইক্রোবাসটি বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে নেয়। এবার সব কুলই যেন হারায় সে। অভিভাবকহীন পারুলের পায়ের নিচ থেকে ক্রমেই সরে যেতে থাকে মাটি।

এক পর্যায়ে দেবররা সন্তানসহ পারুলকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে। তখন কোথাও যাওয়ার জন্য পারুলের কাছে কোনো টাকা ছিল না। এ অবস্থায় পারুল সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি বরিশালের উদ্দেশে কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে হাজির হন। এ সময় পুটু নামে এক ব্যক্তি পারুলের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। পারুলদের নিয়ে যান নিজ বাড়িতে। শেষ পর্যন্ত তার বাড়িতেই ঝিয়ের কাজ পাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় পারুলদের নতুন জীবন।

এতকিছুর পরও সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হতে দেননি সংগ্রামী পারুল। বড় মেয়ে রোজিনা তখন সপ্তম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা দেবে। অথচ একটি বইও কেনা হয়নি তার। এতদিন সহপাঠীদের বই ধার করে এনে পড়া শেষে আবার ফেরত দিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা আসন্ন, তাই কেউ আর সেই সামান্য সহযোগিতা টুকুও করতে নারাজ।
এমনি এক অবস্থায় পারুল মেয়ের পাঠ্যপুস্তক ক্রয়ের জন্য অন্যের দ্বারে গিয়ে হাত পাতেন। অনেক কষ্টে জোগাড় হয় টাকা। এভাবে পরীক্ষার দশদিন আগে বই কেনা হলে রোজিনা তা পড়ে পরীক্ষা দেয় এবং ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়।

এমন র্দুদিনেই প্রতিবেশী জাহানারার পরামর্শে পারুল কালীগঞ্জে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন পরিচালিত ‘আশার আলো’ মহিলা সমিতির সদস্য হন এবং সপ্তাহে নিয়মিত ৫ টাকা করে সঞ্চয় জমা করতে থাকেন। এভাবেই ওই সমিতির মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ হয় তার।

ঋণের টাকা দিয়ে পারুল শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, লুঙ্গি ইত্যাদি কিনে দূর-দূরান্তে গিয়ে ফেরি করে করে বিক্রি করতে শুরু করেন। শুরু হয় পারুলের সংগ্রামী জীবনের নতুন অধ্যায়, জীবিকা নির্বাহের জন্য চালিয়ে যেতে থাকেন কাপড়ের ব্যবসা।

স্বপ্ন এখন তার একটাই সুস্থ হয়ে দোকানে বসে কাপড় বিক্রি করবেন তিনি। নিজের দোকানে বসে কাপড় বিক্রি করে এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করার কষ্ট ভুলতে চান এই মানুষটি। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য পারুল করে যাচ্ছে অব্যাহত পরিশ্রম সেই সাথে সংগ্রামী মানুষদের জন্য ধৈয্য আর প্রেরনার আলো জ্বালছেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G