WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনী সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনী

সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনী

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭ সময়ঃ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

babul

অনেকের অনেক জানতে চাওয়া আমার কাছে। আমি কথা বলার জন্য মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে কারও বিকার নেই। তবে আমার নিরুত্তর থাকার সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে মনের মত কাহিনী ফাঁদতে ফাঁদতে পরকীয়া থেকে খুন পর্যন্ত গল্প লেখা শেষ করে ফেলেছেন অনেকে। আমার কোন মাথাব্যথা নেই এসব নিয়ে, আমি আমার মা হারা সন্তানদুটোকে নিয়েই ব্যস্ত এখন। তাছাড়া প্রমাণের দায়িত্ব যারা অভিযোগ করেন তাদের। তবে আমার পরিবার পরিজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা ভেবে কিছু কথা না বললেই নয়।
শেষ থেকেই শুরু করি। ঐ শেষটা, যেখান থেকে আমার আর আমার সন্তানদের সব গ্লানির শুরু।

বাচ্চা দুটো হয়েছে তাদের মায়ের মত। ছিমছাম সাজানো ঘর ছেড়ে ঢাকায় বাবার বাড়ি বেড়াতে আসলে মিতু চট্টগ্রামে নিজের বাসায় ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠতো। ছেলেমেয়ে দুটোও কিছুদিনের মধ্যেই নানার বাড়ি ছাড়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। কিন্তু সন্তান আমার হলেও তাদের উপর নানা-নানীর অধিকারটুকু আমি বিলীন করতে চাইনি। ভেসে যাওয়ার দিনগুলোতে তারা (আমার শ্বশুরপক্ষ) আমায় আর আমি তাদের আকড়ে ছিলাম। তাই ছেলেমেয়ে নিয়ে দূরে সরে গিয়ে আমি অকৃতজ্ঞ হতে চাইনি। যত কষ্ট আর অস্বস্তিই হোক বাচ্চাদের নানা-নানীর কথা ভেবে আমি তাদের ঘরেই ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।

আমরা বাসায় ক্যাবল লাইন রাখা মোটেও পছন্দ করতাম না শুধুমাত্র ছেলেমেয়ে অরুচিকর অভ্যাস বন্দী হবে বলে। আর মিতু মারা যাওয়ার পর থেকে নানার বাড়িতে তার বাচ্চাদের দিন শুরু হত স্টার জলসা দিয়ে, শেষও হত স্টার জলসা দিয়ে। যে মিতুর দিন শুরু হত নামায দিয়ে তার সন্তানেরা সকাল সাতটায় জেগে টিভিতে সিরিয়াল দেখে দেখে বেলা এগারটায় নাশতা খেতে পেত। আমরা এধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ছিলাম না। ছেলে শাকসবজি খেতে পছন্দ করলেও মাসে দুই-একবারের বেশী তা খাওয়া হত না। অন্যের বাড়িতে বাচ্চার ক্ষুদা আর স্বাস্থ্যের তাগাদা দেওয়ার সুযোগ আমার ছিল না। তবুও আমি চুপ ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।

আমার ছেলেটার চোখের সামনে তার মা খুন হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সিলিং করিয়েছি তাকে। কাউন্সিলরের একটাই কথা কোন অবস্থাতেই ছেলের সামনে তার মায়ের মৃত্যু সংক্রান্ত কোন কথা বলা বা তাকে এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। ছয়টা মাস আমি চব্বিশ ঘণ্টা ছেলেটার পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। খেয়াল রেখেছি যেন সে এসব কথাবার্তার মুখোমুখি না হয়। তবে বাইরে একদম না বের হয়ে তো পারা যেত না। যেদিনই বাইরে যেতাম ফিরলে দেখতাম ছেলে আমার মুষড়ে আছে। বাইরে থেকে ফেরার পর এক মধ্যরাতে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটা আমায় প্রশ্ন করে, “বাবা, কান্না চেপে রাখলে কী বুকে ব্যাথা হয়? আমার বুকে এত ব্যাথা করে কেন?” আমি তাকে বুকে জড়িয়ে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছে?” সে বলল, “নানা-নানী সারাদিন আম্মুর কথা বলে আমার খুব কান্না আসে। কিন্তু কান্না করতে পারি না, আমার বুকে ব্যাথা করে।” তারপর আমাকে বলল যেন তাকে চট্টগ্রামের বাসার মত সুন্দর বাসায় নিয়ে যাই, দু’মাসের মধ্যেই।

ছেলের নানার বাড়িতে অস্বস্তি হওয়ার অনেক কারণ ছিল। আমার শ্বশুরবাড়িতে যৌথ পরিবার। অর্থাৎ, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, আমার শ্যালিকা ও তার স্বামী, আমার শ্বাশুড়ির নিজের বোন এবং সেই বোনের স্বামী-সন্তানসহ মোট তিনটি পরিবার আমার শ্বশুরের চার বেডরুমের ঘরটিতেই থাকে। আমার শ্বশুরপক্ষের জামাতারা নিজের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে শ্বশুরঘরেই থাকে, এটা তাদের পারিবারিক রীতি (যাতে আমি অভ্যস্ত নই)। মিতু মারা যাওয়ার পর আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরঘরের একটি রুমে থাকতাম। ঘরটা যেন আরও ঘিঞ্জি হয়ে উঠল। শ্বশুরঘরের লোকজনেরও আরও কষ্টে পড়তে হল। তাছাড়া চারপাশে বস্তিবাসীর চেঁচামেচি আর অশ্লীল কথোপকথন ছেলেকে আরও খিটখিটে করে তুলছিল।
জন্মের পর থেকে যে সন্তানদের আমরা সুবচনে অভ্যস্ত করেছিলাম তারা মায়ের মৃত্যুর পর চারপাশ থেকে গালমন্দ শিখতে শুরু করল। এভাবেই দিন কাটছিল। মাঝে আর বাসা পরিবর্তন নিয়ে ছেলের সাথে কোন কথা হয়নি, ভাবলাম হয়ত সে ভুলে গেছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন ছেলে আমাকে টেনে ক্যালেন্ডারের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “বাবা, আজ তোমার দু’মাসের সময় শেষ।” আমি অবাক হয়ে দেখলাম ছেলে আমার দু’মাস ধরে ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে দিন গুনছিল নানার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার। তারপর আমি ছেলের কাছ থেকে আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে নিলাম।

সবদিক বিবেচনা করে আমি শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে জানালাম যে বাচ্চারা এই পরিবেশে অনভ্যস্ত এবং থাকতে চায় না, তাই তাদের নিয়ে সুন্দর পরিবেশে থাকা প্রয়োজন। তারা খুব সুন্দর সমাধান দিলেন। বললেন তাদের ঘরের উপরেই আরও ঘর তৈরী করতে আমি যেন ১০ লক্ষ টাকা দেই এবং সেখানেই থাকি। আমি যে দশ টাকার লোকও নই, একথা বোঝানোর মত সাধ্য আমার ছিল না। আর ঘর ঘিঞ্জি না হওয়ার সমাধান স্বরূপ বললেন যেন আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন কেউই আমার কাছে না আসে। আমার শ্বশুর বললেন, হয় আমাকে আমার বাবা-মা ছাড়তে হবে, না হয় শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ছাড়তে হবে। আমি কী মরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম? কী জানি! তবে আমি চুপ ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।

দিন কাটছিল যুগের গতিতে। ছেলেমেয়ে রাত বারটা পর্যন্ত পড়াশোনা করতে শুরু করল। আমি ভীত হয়ে উঠলাম। কারণ শিশু বয়সে পড়াশুনার চাপ নেওয়াটা আমি মানসিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবেই দেখি। তাছাড়া মা হারিয়ে আমার সন্তানেরা এমনিতেই তীব্র মানসিক চাপের মাঝে ছিল। আমি একদিন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম এত রাত পর্যন্ত তারা কী পড়াশুনা করে। তখন ছেলে বলল নানী বলেছে তাকে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলে চান্স পেতেই হবে এবং তাই ‘ছোটআম্মু’ তাদের মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ায়। ভাবলাম মিতুর ছোটবোন শায়লার কথা বলছে। কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম মিতুর সদ্য এসএসসি পাশ করা ১৬ বছর বয়সী খালাতো বোনকে (যে তার পরিবারসহ মিতুর বাবার বাড়িতেই থাকে) আমার ছেলেমেয়েকে ‘আম্মু’ ডাকা শেখানো হয়েছে এবং আমাদের সবকিছুর তদারকিও সেই বাচ্চা মেয়েটিকে দিয়ে করানো হয়।

একদিন ছেলের স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মায়ের ভূমিকায় পাশে এসে বসে মেয়েটি। বিভিন্ন সময়ে তাকে এগিয়ে দেওয়া হত বাচ্চাদের মায়ের ভূমিকায়। রাতে ফিরে দেখতাম ছেলেমেয়ে নিয়ে সে আমার ঘরেই আছে। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ায় আমি এতটা বিকারগ্রস্ত হইনি যে, একটা ইন্টার পড়ুয়া ১৬ বছরের বাচ্চামেয়েকে বিয়ে করে আমার বাচ্চাদের ‘মা’ বানাতে হবে। তাদের একটাই কথা, শ্বশুরের বাড়িতেই নতুন ঘর বাঁধতে হবে এবং সেখানেই থাকতে হবে। আমার ঐসময়কার অনুভূতি কোন শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে দিনদিন এসব আচরণ এতটাই বিধতে লাগল যে, আমি আমার দ্বিমত প্রকাশের জন্য কোন শব্দ না খুঁজে বরং একটা চাকরি ও বাসা খুঁজে নিলাম। আমার শ্বশুর পক্ষকে জানিয়েই বাসা নিয়েছি এবং এতে তারা ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণও হয়েছিলেন। বলেছিলেন এর পরিণাম হবে খারাপ এবং আমাকে পচিয়ে ছাড়বেন তারা। তবে প্রস্থানে আমি চুপই ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।
বাস্তব জীবনটা কোন চলচ্চিত্র না। আমি সুপারকপের মত উঠে গিয়ে স্ত্রীর খুনী বের করে ফেলব?! সবকিছুর নিয়ম থাকে, প্রক্রিয়া থাকে। তদন্ত তদন্তের নিয়মে চলছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় আমার যতটুকু প্রয়োজন অংশগ্রহণও রয়েছে।আমাকে যখনই তদন্তের প্রয়োজনে ডাকা হয়েছে আমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েছি, তদন্তকর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা বলেছি।
বাদীর কাজ সাক্ষীকে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, এটা আমি বুঝতে পারিনি! আমার মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কাউকেই তদন্তকর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার মত বিলাসিতা করার সুযোগ আমার নেই কারণ মায়ের মৃত্যুর পর থেকে একরাতও বাচ্চারা আমায় ছেড়ে থাকেনি। জন্মের পর থেকেই তারা রাতে আমার সাথে ঘুমিয়েই অভ্যস্ত। আমাকে কয়েকঘন্টা না দেখলেই কেঁদে অস্থির হয় তারা। আমাকে দিনের মধ্যে কয়েকবারই বাসায় যেতে হয়, অনেক সময় ছেলেমেয়েকে নিয়েই অফিসে যেতে হয়। তাই প্রথমে আমার শ্বশুরের পছন্দমত তার বাড়ির কাছের স্কুলটিতে ভর্তি করালেও ছেলের দিকে তাকিয়ে তাকে আবার আমার অফিসের কাছাকাছি একটি স্কুলে ভর্তি করাই।

আমার মূখ্য অপরাধের তালিকায় বাচ্চামেয়ে বিয়ে না করে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে নিজেরমত থাকাটাই হয়ত একনম্বরে জায়গা পাবে। না হয় মিতুর মৃত্যুর পর তার মা কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, “১৪ বছরের সংসারে অশান্তি হয়নি বাবুল-মিতুর।” আমার শ্বাশুড়ি আরও বলেছিলেন, “বাবুল হইল ফেরেশতা।” এমনকি গতমাসে (২৫ জানুয়ারি, ২০১৭) তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমি বাবুলকে সন্দেহ করি না।” মিতুর বাবা মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন, “এসব কথা ভিত্তিহীন। তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এসব রটানো হচ্ছে।” আমার শ্যালিকা শায়লা বলেছিল, “ভাইয়া আর আপুর সংসারে কোন অশান্তি ছিল না।” আর কয়েকমাস গড়াতেই আজ ভিন্ন কথন!
মিতু মারা যাওয়ার আটমাস পর তার মা-বাবা আর বোনের মনে পড়ল আমি মিতুকে অবহেলা করেছি, তার সাথে খারাপ আচরণ করেছি দিনের পর দিন, প্রতিনিয়ত পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছি, মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এবং মিতু নিতান্তই অপারগ হয়ে আমার সংসারে ছিল! আর এই আট মাসে একবারও মিতুর মায়ের মনে হয়নি যে মিতুর মৃত্যুর আগে তার সাথে আমার আচরণ বদলে গিয়েছিল। মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এটা ২/৩ মাস আগে জানলেও গত মাসেই চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলে এসেছেন তারা আমাকে সন্দেহ করেন না। আমার অবুঝ দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে নাকি তারা চুপ ছিলেন। তাহলে কী এখন আমার সন্তানেরা সব বুঝতে শিখেছে, আট মাসেই সাবালক হয়ে গেছে? ছেলেমেয়ের প্রতি মায়া উবে গেছে?!

আমি বুঝলাম না কোন মা-বাবা তাদের মেয়ের স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক আছে জেনেও কীভাবে মেয়েকে ঐ স্বামীর সংসারে রেখে দেয়!!! অন্তত যৎসামান্য চেষ্টাও কী কেউ করে না তার মেয়েকে সুখী করার?! আর যেই মেয়ের স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত, যার সাথে দিবানিশি অশান্তির সংসার ছিল, সে খুন হওয়ার পর আট মাসেও তার মা-বাবার একটিবারের জন্যও মনে হল না যে স্বামীই তার হত্যাকারী?! বরং ছয়মাস সেই জামাতাকে নিজের ঘরে রেখে তাদেরই আরেক মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইলেন?!

আরও কত গল্প যে শুনতে হবে জানি না। কারণ, আমার শ্বশুর তো বলেই রেখেছেন যে আমার দেশে-বিদেশে পরকীয়া আছে। তাদের কথা শুনে আমার এখন মনে হয় পরকীয়া ছিল আমার ফুলটাইম পেশা, আর চাকরি ছিল পার্ট টাইম!!!

আমার শ্বশুরপক্ষ তাদের কথা রেখেছেন, আমাকে অপমানিত করার জন্য চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখেন নি। “তোমারে পচাইয়া ছাড়মু, শান্তিতে থাকতে দিমু না।”- কথাটি অক্ষরে অক্ষরে রাখার নিরন্তর সাধনা করে যাচ্ছেন তারা। আমি যে বড়ই অবাধ্য জামাতা, আমার মা-বাবা,পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ষোড়শী শ্যালিকাকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই ঘর তৈরী করে ঘরজামাই হবার মত বাধ্য যে আমি নই!!!

মিতু যেদিন মারা যায় সেদিন সারাদেশই ছিল দিশাহারা। আমার শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকাও (শায়লা) ছিল শোকে বিহ্বল। তারা সেদিন দুঃখে মিতুর লাশ বাদ দিয়ে আমাদের আলমারী থেকে আমাদের সব কাপড়চোপড়, গয়নাগাটি আর জমানো কিছু টাকাপয়সা ব্যাগে ভরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসাতেই ব্যস্ত ছিল!! তাছাড়া এর কিছুদিন পর তারা মিলাদ পড়ানোর নামে চট্টগ্রাম গিয়ে বাইরে থেকে মিস্ত্রী ডেকে নিয়ে আমার বাসার আলমারী ভেঙ্গে বাকী যা কিছু ছিল তাও নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মিতুর ব্যবহৃত জামাকাপড় ও জিনিসপত্র তার আত্মীয় স্বজনদের ব্যবহার করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম। মায়ের স্মৃতি হিসেবে বাচ্চা দুটোর জন্য আমার কাছে আর কিছুই নেই। শোকগ্রস্ত আমি চুপই ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।
পৃথিবীর এমন একটি দম্পতি আমি দেখতে চাই যাদের মধ্যে মতবিরোধ এবং মনোমালিন্য হয় না। আমি কী আকাশের চাঁদই হাতে চেয়ে ফেললাম? হ্যাঁ, অতি অবশ্যই হ্যাঁ। আমি আগেও বলেছি, নির্ঝঞ্ঝাট সংসার দেবদূতেরও হয় না। আমার সংসারেও ছোট বড় রাগ অভিমান হত, যেভাবে আর দশজনের হয়। সবাই নিশ্চয় এজন্য একে অন্যকে মেরে ফেলে না। তাছাড়া একে অন্যকে মেরে ফেলার জন্য কেউ চৌদ্দ বছর সংসার করে না। একে অন্যকে মেরে ফেলার জন্যই কী কেউ দুটি সন্তানের জন্ম দেয়?

আর আমার পরকীয়া সম্পর্কে সংবাদমাধ্যম থেকে জেনে একজন যৌক্তিক পাঠক হিসেবে আমার প্রশ্ন এসবের কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে কী না?

নিহত আকরামের বোন রিনি অভিযোগ করেছেন যে আমার প্রভাবে পুলিশ আকরাম হত্যার অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিয়েছিল। অথচ তিনি তখন আমার নামে কোন অভিযোগই করেননি। রিনি তখন আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে আকরামের স্ত্রী তার ফুপাতো ভাই মুনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে আকরামকে খুন করে। ঐ অভিযোগে আকরামের স্ত্রী, তার কথিত প্রেমিক মুন এবং আকরামের শ্বশুর-শ্বাশুড়ির নাম উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া ঘটনার সময় আমি দেশেও ছিলাম না।

এত বছর পর রিনি আগের সব অভিযোগ ভুলে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে তার ভাই হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের (আমার শ্বশুর) কাছে!!! আর নিহত আকরামের স্ত্রী থাকেন মাগুরা এবং ঝিনাইদহে; আমার পদোন্নতির আগ পর্যন্ত আমি থাকতাম চট্টগ্রামে। আর আমার বছরে একবারও বাড়ি যাওয়ার মত সময় সুযোগ হত না। পরিচয় ছাড়া, যোগাযোগ ছাড়া, দেখা সাক্ষাত ছাড়াও যে পরকীয়া হয় এটা জানা ছিল না।

আকরামের বোন অভিযোগ করেছেন যে ছেলের শোকে তার মা মারা গিয়েছেন। এখন আকরামের মায়ের মৃত্যুর দায়ও যদি আমার উপর চাপানো হয় আশ্চর্য হব না!!! কারণ তিনি তো বিচার চাইতে গেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের (আমার শ্বশুর) কাছে। এটা ঠিক যে মৃত আকরামের স্ত্রী মাগুরায় আমাদের একই এলাকায় থাকতেন এবং তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আকরামের রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে সে আমার ছোট ভাইয়ের (পেশায় আইনজীবি এবং মাগুরায় থাকে) কাছ থেকে আইনী সহায়তা নিয়েছিল, যে ঘটনায় আমার কোন সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। একই এলাকায় থাকলে কিংবা বাবা-ভাইয়ের সাথে পরিচয় থাকলেই যদি পরকীয়া হয়ে যায় তবে আমার পরকীয়ার প্রেমিকাদের নাম লেখা শুরু করলে তা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে পৌঁছালেও শেষ হবে না।

যখনই আমি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অমতে বাচ্চাদের নিয়ে আলাদা বাসায় আমার মা-বাবাকে নিয়ে থাকা শুরু করলাম, তখনই আমার শ্বশুর আমার পরকীয়ার খোঁজ পেলেন, ঠিক তখনই আমার শ্বাশুড়ি মিতুর সাথে আমার খারাপ সম্পর্কের কথা জানতে পারলেন, আর তখনই আকরামের বোন জানতে পারলেন তার ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে আমার পরকীয়া ছিল; তখনই তারা জানলেন চিত্রনাট্যের নাট্যকার ছিলাম আমি!!! আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর-শ্বাশুড়ি হয়তো সেই নীতি অনুসরণ করেছেন, ‘একটা মিথ্যা দশবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়।’ তারপরও আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। কারণ, তারা তো আমার স্ত্রীর বাবা-মা, আমার সন্তানের নানা-নানী।

আমি চাই আমার স্ত্রী হত্যার সঠিক বিচার হোক। সে আমার সন্তানদের মা, আমার পৃথিবীর ভিত ছিল সে। তাকে হারিয়ে আমি এবং আমার বাচ্চা দুটোর চেয়ে বেশী কষ্ট কেউ পেয়েছে বলে আমার বোধ হয় না। এখনও সামলে উঠতে পারিনি আমরা। বাচ্চাদের একটা স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরমধ্যেই যে যা ইচ্ছে বলছে, ছাপছে। আমার ছেলেটা যখন এসব সংবাদ পড়ে ও দেখে তখন তার মানসিক অবস্থাটা কী দাড়ায়? কোন সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র কারও ব্যক্তিস্বার্থে করা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যারা কথা বলছেন, তারা আমার জায়গায় নিজেকে একবার রাখুন, নিজের সন্তানটিকে আমার ছেলের জায়গায় ভাবুন। তারপর কলম হাতে নিন।
আজ আমার ছেলের জন্মদিন, মাকে ছাড়া প্রথম জন্মদিন তার। কী ভাবছে সে মনে মনে? কতটা কষ্ট পাচ্ছে সে? এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায় কার?

কথাগুলো একান্তই পারিবারিক। মেয়ে হারিয়ে মা-বাবার কষ্ট প্রকাশের একটা মাধ্যম হয়ত এসব ভিত্তিহীন অসংলগ্ন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাবার্তা, তাই আমি প্রত্যুত্তরে এতটুকু শব্দ করতেও নারাজ। কিন্তু এখন কথাগুলো পরিবারের সীমা পেরিয়ে লোকের ঘরে ঘরে বিনোদোনের উৎস হিসেবে স্থান পেয়েছে। তাই আজ কিছু বলতে হল।

এত স্বল্প পরিসরে সবটুকু বলে শেষ করা সম্ভব নয়। যদি সব বলতে বসি তবে হয়ত একটা বই-ই হয়ে যেত।

প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G