এখানে ফিরতেই হবে

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭ সময়ঃ ১১:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:১৪ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

26224473635_d561ef2346_bশান্ত নির্জন চারিধার। হঠাৎ বুনো বিড়ালের উঁকিঝুঁকি, পানকৌড়ির সদর্পে মাছ খুঁজে বেড়ানোর তাড়া। কাঠবিড়ালির আধ খাওয়া পেয়ারা নিয়ে ব্যস্ত দোয়েল, ফিঙে আর শালিকের দল।

পুকুরঘাটে ভরদুপুরে কলসি নিয়ে হাজির গ্রামের বধু। তাকে দেখে মুখ তুলে চেয়ে দুষ্টু  মাছগুলো মুহূর্তেই ডুব দেয় পানির গভীরে একে একে চক্রাকারে। আবার খানিক বাদে একটু উঁকি দিয়ে যায়। গ্রাম্য বধুর ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। 

হঠাৎ নির্জনতা ভেদ করে মৃদুমন্দ বাতাস দোলা দেয় বাঁশবাগানে। তার আঁচড় লাগে না সুপারী, নারকেল আর চালতার রাজ্যে। তারা যেন অন্য কোনো ভাবনায় নিমজ্জিত। শান্তির পরশ বুলিয়ে শান্ত দীঘি নিশ্চুপ বসে আছে। হলুদে রো11385571_102059296806590_561683552_nদ এসে তাকে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে; পাড়ঘেষা ছোট-বড় প্রাচীরসম গাছেরা ছেয়ে ফেলে ছায়া দেয় দীঘির গায়ে।

রুই, কাতলা আর বোয়ালেরা টুক টুক শব্দে এই উঠে, এই ডুবে দীঘির রৌদ্র-ছায়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। শুকনো মরা পাতা ঝড়ে পড়ে সেই শান্ত দীঘির কোলে; হলুদ রোদের ছোঁয়ায় আবার জীবিত হয়ে উঠে তামাটে রঙের মরা পাতারা। কুহু কুহু সুরে অবিরাম ডেকে চলে কোনজন? নানান রঙের আর হরেক ঢঙে শাল, তমালের ডালে মুনিয়া, পাপিয়া, ফিঙেরা ডেকে চলে সারাখন।

এই আমাদের বাংলার গ্রাম, গ্রামীণ ভরদুপুরের রোদ মাখা ছায়াঢাকা সৌন্দর্য। কোথায় পাবো এমন  মোনোহরিণী, ছায়াবিথীর খোঁজ! শ্বাসরোধ করা নগরীর ব্যস্ত কৃত্রিমতার ভীড়ে দম বন্ধ হওয়া পুবের অসহ্য উত্তপ্ত হাওয়ার মিশ্রণে?

যেখানে প্রাণের দায়ে বেঁচে থাকা। টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যাতিব্যস্ত সংগ্রামী শহুরে জীবন। যেখানে গোলাপের সুবাস ছড়ায় না, পারফিউমের যাতাকলে পড়ে। এখানে কোকিলের অবিশ্রান্ত কুহুকুহু সুর পৌঁছে না কোনো সুহৃদের কাছে, শহরের কোলাহল আর  কর্মব্যস্ততার ভীড়ে।

village

এখানে এই হলাহলপূর্ণ শহরে ফিঙে আর কাঠ ঠোকরার অপূর্ব রূপ যেন দেখবার কেউ নেই। সবাই দায়বদ্ধ সময়ের কাছে। খানিক চোখ ফেরানোর ফুসরত নেই কারো। এ নগরী কৃত্রিম, কৃত্রিমতা আর পুরোনোকে নতুন সাঁচে বসাতেই বড় বেশি ব্যস্ত। সৃষ্টির সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়।

4b34ca5ce20f4a31759b957bc87beec3যে জন কবি জসিম উদ্দিনের আসমানীদের ভেন্না পাতার ছানি দিয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টি দেখেনি, জীবনানন্দের রূপসী বাংলার অপরূপ রূপ খুঁজেনি, আল মাহমুদের মতো  উদাস দুপুরে গ্রাম্য বালিকার চুপটি করে উদাসীন দাওয়ায় বসে থাকা সচক্ষে অবলোকন করেনি; সে কী করে লিখবে মাতাল করা উদাসী হাওয়ার কথা! কী করে বুঝবে সৌন্দর্য হাতছানি দেওয়া গ্রামীণ প্রকৃতির ভাষা!

অরণ্যের ছোঁয়া পেতে, নির্জনতার আবহ বুঝতে, গোলাপের সুবাস নিতে, শান্ত দুপুরে কোকিলের কুহুকুহু তানে সুরেলা ডাক  শুনতে অথবা শীতের শীতল স্পর্শ  পেতে গ্রামে আসতেই হবে।

এই অপরূপ বাংলার গ্রামীণ গন্ধে মৃতপ্রায় মনকে জাগাতে হলে এই শীতলপাটির দেশে আসতেই হবে।

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G