জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি

প্রকাশঃ নভেম্বর ১৩, ২০২৫ সময়ঃ ৫:২৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:২৪ অপরাহ্ণ

সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর গেজেট প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এ গেজেট জারি করা হয়।

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদ এই আদেশ অনুমোদন দেয়। দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে এর সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রকাশ পায়। সেই অভ্যুত্থানের ফলেই ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকারের পতন, ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন হয়, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।

অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” প্রণয়ন করে, যা দলগুলো স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে।

সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন হওয়ায় গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

গণভোটে ব্যালটে থাকবে প্রশ্ন:
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এতে উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহে সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?” (হ্যাঁ/না)

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের নতুন প্রক্রিয়া
  • দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, যার উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্য থাকবেন এবং সংবিধান সংশোধনে তাদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে
  • নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার
  • রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুত অন্যান্য সংস্কার বাস্তবায়ন

গুরুত্বপূর্ণ ধারা
১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ ও ১৫ অনুচ্ছেদ তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে।
৭–১১, ১৩ ও ১৪ অনুচ্ছেদ গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ফলাফল পাওয়া গেলে কার্যকর হবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন
গণভোটে অধিকাংশ ভোটার ‘হ্যাঁ’ দিলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়েই একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই সনদ ও গণভোটের ফল অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। পরিষদের কার্যক্রম শেষে এটি বিলুপ্ত হবে।

পরিষদের কার্যপ্রণালী ও অধিকার
পরিষদের সভাপ্রধান নির্বাচিত হবেন সদস্যদের মধ্য থেকে। কোরামের জন্য ৬০ সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে। পরিষদ ও এর সদস্যরা সংসদের মতোই বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি ভোগ করবেন।

সংবিধানে জুলাই সনদ অন্তর্ভুক্তি ও সংস্কার কার্যকর
পরিষদ সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করলে তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং গেজেটে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।
সংস্কারের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্বমূলক উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।

সরকারের ক্ষমতা
আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

এভাবে “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫” আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হলো, যা সংবিধান সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G