WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
শরীফ খান
বিশ্বে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা আছে-একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটি আর দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কিছুদিন আগে সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শাটল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। তাই বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে এর দাবিদার।
শাটল ট্রেনকে বলা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ভোমরা। চবির সম্পদ হিসাবে ধরা হয় এই শাটল ট্রেনকে। শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি মুখরোচক কথা প্রচলিত আছে, ‘চবিতে পড়বেন আর শাটলে চড়বেন না তা কি হয় ?
হুড়োহুড়ি করে উঠতে হয় শাটল ট্রেনে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের এমন দৃশ্য প্রতিদিনই চোখে পড়ে। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দুটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।
শাটল ট্রেনকে ঘিরেই রচিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যতসব আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার কথকতা। ট্রেনে বসে ছাত্রছাত্রীদের কুশল বিনিময়, পড়াশোনার আদ্যোপান্ত সবই চুকিয়ে নেয়া হয়।
অনেকে এই শাটল ট্রেন দুটিকে চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বলে থাকেন। সাংস্কৃতিক যত কর্মকান্ড ট্রেনেই চূড়ান্ত হয়, এ যেন অন্য এক পরিবেশ। ট্রেনে উঠলে মনে হয় শাটল ট্রেনটি একটি মঞ্চ। আর এই মঞ্চের শিল্পী এক একজন শিক্ষার্থী।
১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিত্যসঙ্গী হিসেবে পরিচিত শাটল ট্রেন। ২২কিলোমিটার দূরত্বের ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে শাটলে সময় যায় প্রায় এক ঘন্টা।
মূলত শাটল ট্রেনের মাধ্যমেই গড়ে উঠে চবি’র শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভিত। প্রতিদিন শাটল ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার পথে গানে গানে মাতিয়ে রাখে প্রতিটি বগির শিল্পীরা, কখনও সুরের তালে আবার কখনও ছন্দহীন সুরের আঁকাবাঁকা তালে। সুর-বেসুরের এই গানের ভেলায় মেতে উঠে শিক্ষার্থীরাও। সময়ের জনপ্রিয় ও কালোত্তীর্ণ গানের চর্চার সাথে সাথে বিভিন্ন গানের প্যারোডিতেও দক্ষ শাটল ট্রেনের শিল্পীরা।
প্রতিটি বগিতে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখার জন্য রয়েছে একপাল গানের দল। গানের তালে তালে সবাই নিমিষেই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হৃদয়ের সাথে মিশে যাওয়া রঙিন শাটল মাঝেমাঝে বিস্মৃতি বা দুঃসংবাদ এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইতিহাসে যে কয়েকটি হত্যাকান্ড ও ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এর উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ঘটেছে শাটল ট্রেনকে কেন্দ্র করে। ২০০৬ সালে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে ট্রেনের চাকার নিচে প্রাণ হারান বাংলা বিভাগের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।
এছাড়া ২০০৮ সালে ষোলশহর রেলস্টেশনে শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন একাউন্টিং বিভাগের এক ছাত্র। পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক হত্যাকাণ্ডে নিহত হন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম, মার্কেটিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হারুনুর রশীদ কায়সার, একাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান।
একসময় শাটল ট্রেন হয়ে পড়েছিল এক আতংকের নাম। রাতে ট্রেনে করে যাতায়াত করতে নিরাপত্তাহীনতায় থাকত শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চবি কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগিতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করে।
ভাবতেই অবাক লাগে একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বিশ্বের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন নেই । এই ট্রেনের জন্য আমরা গর্ব করি। কিন্তু আমাদের গর্বের শাটল আজ রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার সহজ উপায় হল ট্রেন বন্ধ করে দেয়া যার সাথে সাথে স্থবির হয়ে যায় ২২ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীর স্বপ্নের পথচলা। সেশন জটে জর্জরিত হাজারো ছাত্রজীবন।
যেখানে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। কত অনাদরে, অবহেলায় দিন কাটছে; তবুও এই শাটলের কেউ খবর রাখেনা। যে শাটলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত, সে শাটলের ভাল মন্দ খোঁজ কেউ রাখেনা, সবাই শুধু শাটলকে ব্যবহারে ব্যস্ত।
কিছুদিন আগে জিআই (গ্যালভানাইজড আয়রন) তার দিয়ে বগি জোড়া লাগিয়ে চালানো হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেন। এক বগির সাথে অন্য বগির সংযোগ হুকটি ঢিলা হয়ে যাওয়ায় জিআই তার দিয়ে জোড়া দেয়া হয়েছিল। এর ফলে যেকোন সময় জিআই তার খুলে গিয়ে ঘটতে পারত ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
বুকভরা দুঃখ নিয়ে বলতে হয়, গত কিছুদিন ধরে শাটল পার করছে ক্রান্তিকালের সবচেয়ে দুঃসময়। শাটলট্রেনের বগি ৯টি থেকে কমিয়ে ৫ টি করা হয়েছে। লজ্জার বিষয় ট্রেনে যোগ করা হয়েছে মালবাহী বগি। তীব্র গরমের মধ্যে স্টুডেন্টরা প্রচন্ড কষ্ট করে যাতায়াত করছে।
সাংস্কৃতিক বগিগুলো প্রচন্ড ভীড়ের কারণে অনেকটাই নিরব হয়ে পড়ছে, মনে হচ্ছে গান গাওয়ার চেয়ে সিট ধরাটাই এখন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সবকিছু থেকেও কেন যেন অসহায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শাটলের দুর্ভোগ কমিয়ে আবারো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হাজার হাজার মেধাবীদের চোখ প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন চাইলেই পারবে; সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মীদেরও এই একই কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সুখ দুঃখের সাথী এই শাটল ট্রেন ।
একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে সিট ধরার এক প্রতিযোগিতার নাম এই শাটল। প্রেমিক যুগলের কাছে এক ঘন্টা যেন চরম চাওয়ার, পরম পাওয়া। মান অভিমান আর রোমাঞ্চিত হওয়ার এক অনন্য নাম শাটল।
প্রতিক্ষণ/এডি/নুর