ইসলামের দৃষ্টিতে দানশীলতা

প্রকাশঃ মার্চ ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক,প্রতিক্ষণ ডটকম:

wpid-charity1-300x183সূরা ইয়াসিনের ৪৬-৪৭ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন ‘যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলির মধ্য থেকে কোনো নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করো।

তখন কাফিররা মুমিনদের বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব?’ অর্থাৎ ঈমানদাররা কোনো ওজর-আপত্তি না তুলে আল্লাহর নির্দেশমতো ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকেন।

আর যাদের ঈমান নেই, তারা ছলছুতায় ভালো কাজে ব্যয় করার বিষয় এড়িয়ে যেতে চায়।

‘দান করা’ বলতে আল্লাহতায়ালা নিছক দান-খয়রাত, সদকা-ফিতরার কথা বলেননি। ‘দান’ শব্দটার তাৎপর্য এখানে অনেক গভীর ও ব্যাপক। ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ জাকাত। সেটাও এই দানের অন্তর্ভুক্ত। ‘দান’ বলতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের কথা উল্লিখিত হয়েছে। ‘তোমরা জিহাদ করো জান দিয়ে ও মাল দিয়ে’ এ ধরনের ঐশী নির্দেশের সাথে আল্লাহর পথে ধনসম্পদ ও অর্থবিত্ত সাধ্যমতো এবং ইসলামের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয়ের বিষয় সম্পৃক্ত।

আজকের সমাজে জাকাতের সুফল আমরা লাভ করতে পারছি না। কারণ এটা সঠিক চেতনায় ও পরিমাণে, যথাযথ লক্ষ্যে ও পন্থায় আদায় কিংবা ব্যয়, কোনোটাই হচ্ছে না। আল্লাহর রাস্তায় ‘দান’ বলতে যা বোঝায়, তার মধ্যে ঐচ্ছিক ও বাধ্যতামূলক উভয় ধরনের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত। নিছক পুণ্যের প্রত্যাশায় দান-খয়রাত করা হলেই মুসলমানের দায়িত্ব প্রতিপালিত হয় না। সৎকাজে ব্যয় করতে হবে দায়িত্ব হিসেবে এবং মহান আল্লাহর নির্দেশের কথা মনে রেখে। জাকাতের মতো ফরজ ইবাদত পালন ছাড়াও, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে দুস্থ-দরিদ্র মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে, সে জন্যও আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে।

আল কুরআনে অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ বলা হয়েছে। ভালো কাজে ব্যয় করা মানে যে অপচয় নয়, সদ্ব্যবহার; তা সবার জানা। আল্লাহ অপব্যয়ের মতো কার্পণ্যও পছন্দ করেন না। যিনি নিয়মিত জাকাত দেন, দান-খয়রাত করেন, ফিতরা-সদকা প্রদান করেন, তিনি কৃপণ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

মনে রাখতে হবে, শুধু ভালো কাজে ব্যয় করলেই হবে না। সতর্ক থাকা চাই যাতে আয়ের উৎসটাও ভালো বা হালাল হয় সন্দেহাতীতভাবে। অন্যায়ভাবে আয়ের ধারা বহাল রেখে কথিত ভালো কাজে তা ব্যয় করা হলেও গ্রহণযোগ্য নয়। সোজা কথা, আল্লাহর অনুমোদিত পন্থায় উপার্জিত অর্থ সম্পদই তাঁর পথে ব্যয় করা উচিত।

সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত মহৎ উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত ব্যতিরেকে কেউ প্রকৃত দীনদার বা ধর্মপরায়ণতা অর্জন করতে পারেন না। দান করার ব্যাপারে আল কুরআন এত বেশি তাগিদ দিয়েছে যে, এই বিষয়টিকে ঈমানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বললে অত্যুক্তি হয় না। সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলছেন, কোনোমতেই তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারো না, যে পর্যন্ত না তোমরা (মুক্তহস্তে) তা থেকে দান করো যা তোমরা ভালোবাসো। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করে থাকো, আসলেই আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত (আয়াত ৯২)।

একইভাবে আরো অনেক আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, দানশীলতা আত্মাকে পরিশুদ্ধ, অর্থাৎ অন্তঃকরণকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে। অতএব, আল্লাহর প্রতি তোমাদের দায়িত্ব পালন করে যাও যথাসাধ্য সর্বোত্তম উপায়ে এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো, আর মান্য করো, আর ব্যয় করো; এটা তোমাদের আত্মার জন্য উত্তম। আর যে নিজের লোভ-লালসার কবল থেকে নিরাপদ থাকে, তারা সফলকাম (সূরা তাগাবুন, আয়াত ১৬)।

আমরা যখন দান-খয়রাত করে থাকি, তখন ধনসম্পদ লাভের আকাক্ষা থাকে অবদমিত এবং সেই সাথে পরকালের পুরস্কারকে আমরা দিই অগ্রাধিকার। পার্থিব সম্পদ ও সম্পত্তির জন্য আসক্তির মাত্রা যত কমে, আমরা ততই বৈষয়িক উপায়-উপকরণের চেয়ে সৎকাজের ওপর জোর দিই বেশি।

এই স্বল্পস্থায়ী পৃথিবী আর পরকালীন শাশ্বত জীবনের মাঝে সুন্দর ভারসাম্য অর্জনের ক্ষেত্রে এটা আমাদের সাহায্য করে। ‘যে এটাকে পবিত্র করেছে, সে হয়েছে সফলকাম’ (সূরা আল শামস, আয়াত ৯)। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর পথে ব্যয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলছেন, ‘দেখো, তোমরা হচ্ছো তারাই, যাদের আহবান জানানো হয় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৩৮)।

প্রতিক্ষণ/এডি/রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G