অাদা চাষীদের পচন রোগ প্রতিরোধে করনীয়

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫ সময়ঃ ৩:২৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:০৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

downloadআদা বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব প্রয়োজনীয় মসলা ফসল হিসেবে পরিচিত। উত্তর বঙ্গে এই মসলা ফসলটির চাষের বিস্তৃতি সবচাইতে বেশী। অল্প ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা ভাল হয়। পরিমাণে কম লাগলেও ইহা ছাড়া তরিতরকারী ইত্যাদি কল্পনা করা যায় না। এতে অনেক ঔষধি গুন বিদ্যমান। কিন্তু রোগ বালাই আদা উৎপাদনের একটি প্রধান অন্তরায়।, পাতা ঝলসানো, পাতায় দাগ, ব্যাক্টিরিয়া জনিত কন্দ পঁচা ও ঢলে পড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। তবে রাইজোম রট আদার বেশী ক্ষতি করে। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। কৃষি ভাইদের জন্য তাই আজ থাকছে আদার কয়েকটি মারাত্মক রোগের লক্ষন, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু পরামর্শ।

ক। রোগের নাম: কন্দ পঁচা (Rhyzome rot)

রোগের কারণ: পিথিয়াম এফানিডারমেটাম (Pythium aphanidermatum) নামক ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ও রাইজোম ফাইও আদা পঁচার সাথে জড়িত।

রোগের বিস্তার: আক্রান্ত রাইজোম, মাটি, পানি ও ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণ:

১. গাছের গোড়ায় কন্দতে প্রথমে পানি ভেজা দাগ দেখা যায়।

২. পরে ঐ স্থানে পরম পঁচন দেখা যায়।

৩. ক্রমান্বয়ে কন্দের বেশী বেশী অংশ পঁচে যায়।

৪. আক্রান্ত গাছের শিকড়ও পঁচতে শুরু করে এবং গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।

৫. আক্রান্ত কন্দ থেকে এক ধরণের গন্ধ বের হয়। এই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে রাইজোম ফাই নামক পোকা আদায় আক্রমণ করে।

৬. গাছের উপরের অংশে পাতা হলুদ হয়ে যায়। পাতায় কোন দাগ থাকে না।

৭. হলুদ ভাবটা পাতার কিনারা দিয়ে নীচে নামতে থাকে, কিন্তু ভিতরটা তখনও সবুজ থেকে যায়।

৮. পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায়।

৯. রাইজোম পঁচে যাওয়ার ফলে ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

রোগের প্রতিকার:

১. আক্রান্ত গাছ মাটি সহ উঠিয়ে গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে।

২. আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৩. রোগবিহীন কন্দ সংগ্রহ করে বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

৪. আক্রান্ত জমিতে শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।

৫. মাঠে যথাযথ পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. স্টেবল বিচিং পাউডার প্রতি হেক্টরে ২০ কেজি হারে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

৭. রিডোমিল গোল্ড বা ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ঐ দ্রবনের মধ্যে বীজ আদা আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করে উঠিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে।

৮. অর্ধকাঁচা মুরগীর বিষ্ঠা (৫ টন/হেঃ) আদা বপনের ২১ দিন পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

৯. রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই রিডোমিল গোল্ড (০.২%) অথবা সিক্যুয়র (০.১%) ১০-১২ দিন পর পর গাছের গোড়ার মাটিতে ¯েপ্র করতে হবে।

 

খ। রোগের নাম: আদা হলুদ হওয়া (Yellows of Ginger)

রোগের কারণ: ফিউজারিয়াম অক্সিমপরাসম এফ.এসপি. জিনজিবেরি (Fusarium oxysporum f. sp zingiberi) এবং ফিউজারিয়াম সোলানী (Fusarium solani) নামক ছত্রাক।

রোগের বিস্তার: আক্রান্ত রাইজোম, মাটি, পানি ও ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণ:

১. আদার নিচের পাতার কিনারায় হলুদাভ হয়ে সম্পূর্ণ পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।

২. আক্রান্ত গাছ উইল্ট হয়ে শুকিয়ে যায় কিন্তু গাছ হেলে পড়ে না।

৩. আদার কন্দে ভাস্কুলার সিস্টেমে ক্রিমি ডিসকারেশন দেখা যায় এবং কন্দ পচতে থাকে।

রোগের প্রতিকার:

১. আক্রান্ত গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণ রুপে তুলে ধ্বংস করতে হবে।

২. বীজ আদার জন্য শুধু সুস্থ ও নিরোগ গাছ নির্বাচন।

৩. আক্রান্ত জমিতে আদা চাষ না করে অন্য ফসলের চাষ করা।

৪. জমি স্যাঁত স্যাতে ভাব রাখা যাবে না।

৫. প্রোভেক্স বা ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ঐ দ্রবনের মধ্যে বীজ আদা আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করে উঠিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে।

৬. আদা লাগানোর ঠিক পূর্ব মূহুর্তে জমিতে স্টেবল ব্লিচিং পাউডার হেক্টর প্রতি ২০.০ কেজি ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

৭. রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হাবে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর গাছের গোড়ার মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

গ। রোগের নাম: পাতা ঝলসানো (Leaf blight )

রোগের কারণ: কোলেটোট্রিকাম জিঞ্জিবারিস (Colletotrichum zingiberis) নামক ছত্রাক।

রোগের বিস্তার: আক্রান্ত পাতা, বায়ু ইত্যদি।

রোগের লক্ষণ:
১. প্রথমে পাতার উপর ছোট, গোল, হালকা হলুদ বর্ণের দাগ পড়ে।

২. পরবর্তীতে অনেক গুলি দাগ একত্রিত হয়ে পাতার সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ঝলসে যায়।

৩. ঝলসানো পাতার উপর বিন্দু বিন্দু কালো দাগ দেখা যায় যেগুলি ছত্রাকের অ্যাসারভূলাস।

৪. ডগা আক্রান্ত হয়ে পাতার মাঝখানটা ভেঙ্গে ঝুলে পড়তে দেখা যায়।

৫. ফলে গাছের ও রাইজোমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

৬. আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. জমির ময়লা আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।

২. রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করতে হবে।

৩. রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

৪. শস্য পর্যাায় অনুসরণ করতে হবে।

৫. আদার কন্দ সংরক্ষণের পূর্বে প্রতি লিটার পানির সহিত ১ গ্রাম ব্যভিস্টিন মিশিয়ে ৬০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং ৪৮ ঘন্টা পর সংরক্ষণ করতে হবে। আদার কন্দ লাগানের পূর্বে ও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

৬. রোগের আক্রমণ দেখা দিলে টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার উভয় পৃষ্ঠায় ¯স্প্রে করতে হবে।

উপরোক্ত রোগ সমূহের যথাযত প্রতিকার করা সম্ভব হলে আদা চাষে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G