স্মৃতির কুঠিবাড়ী

প্রকাশঃ মার্চ ১২, ২০১৫ সময়ঃ ১:০৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

createthumb.ashxপিতার আদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কলকাতায় সেরেস্তায় বসে জমিদারি শিখতে হলো। একেবারে কেরানি থেকে শুরু করে নায়েবের কাজ পর্যন্ত। শিক্ষা শেষে তিনি পূর্ববঙ্গে পাড়ি দেন।

এখানে তাঁদের তিনটি পরগনা—নদিয়া জেলার বিরাহিমপুর, যার কাছারি শিলাইদহ; পাবনা জেলার শাহজাদপুর আর রাজশাহী জেলার কালিগ্রাম, যার কাছারি হলো পতিসর।

নাগর নদের তীরে অবস্থিত পতিসর নওগাঁ জেলার আত্রাই থানায় অবস্থিত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীপথে পতিসর আসতেন। নাগর নদে বজরায় বসে তাঁর সাহিত্যচর্চা চলত।

আর পতিসরে কুঠিবাড়ীতে চলত খাজনা আদায়। খাজনা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর ভাগনে বীরেন্দ্রনাথ। পতিসরে কবি প্রথম আসেন ১৯১১ সালে। এখানে কবির বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা হলো খেয়া, চৈতালী, চিত্রা, আকাশ প্রদীপ, বিদায় অভিশাপ, গোরা, ক্ষণিকা ইত্যাদি। তিনি এখানকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট দেখে তা দূর করার চেষ্টা করেছেন।

১৯৩৭ সালে তিনি পতিসর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সব সম্পদ প্রজাদের মধ্যে দান করে দেন। তবে সেই পতিসরকে ছুঁয়ে বয়ে গেছে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নাগর নদী। নাগর নদীকে উদ্দেশ্য করেই কবি লিখেন –

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে ,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।

কবি স্মৃতিকে ধারন করে আজও প্রবাহমান নাগর নদী। শুধু নেই নদী পাড়ে অবস্থিত রক্ষাকালি মন্দিরের সেই তালগাছটি। যেখানে প্রতিবছর বসতো জমিদারির পূন্যাহ অনুষ্ঠান। প্রবীণরা বলেছেন -১৯৬২সালে প্রবল ঝড়ে তালগাছটি ভেঙ্গে পড়ে। স্মৃতি হিসাবে এখনও ঐ ভিটায় অনেকগুলি তালগাছ চোখে পড়ে। তালগাছটিকে উদ্দেশ্য করেই কবি লিখেন,

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।

পতিনরের মূল ফটকের ওপর দুটি সিংহের ভাস্কর্য, অতীতের পাহাদার যেন। আমাদের দেখে এখানকার তত্ত্বাবধায়ক আবদুল লতিফ দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে যান। বোঝাই গেল, কালেভদ্রে এখানে দর্শনার্থীরা আসে। কিন্তু তাতে কী, কুঠিবাড়ী একেবারে ঝকঝকে তকতকে। ভেতরে ঢুকেই রবিঠাকুরের আবক্ষ মূর্তি। এর ভাস্কর কণক কুমার পাঠান। লতিফ আমাদের দেখার জন্য রবিঠাকুরের শোবার ঘরসহ দুটি ঘর খুলে দেন। ঘরগুলো কবির ব্যবহার্য বিভিন্ন তৈজসপত্র, নানা রকম সামগ্রী, তাঁর হস্তলিপি আর বিভিন্ন ছবিতে ভরা।

একটি বাথটাব দেখে খুবই আশ্চর্য হয়ে ভাবি, সে আমলে বাথটাব! তা ছাড়া এখানে আছে একটি নোঙর, বিশাল আয়না, আরাম কেদারা, ওয়্যারড্রব, ঘড়ি, গ্লোব, সিন্দুক, খাজনা আদায়ের টেবিল, খাট, আলমারি, দরজার পাল্লা, জানালা ইত্যাদি। পাশেই কবির ছেলের নামে প্রতিষ্ঠিত রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন। আর রয়েছে একটি সরকারি ডাকবাংলো। সুন্দর কাজ করা গেট।

পতিসরের পথ
ঢাকা থেকে নাটোর পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ। নাটোর থেকে পতিসর যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। হাতে সময় নিয়ে যাবেন, যাতে নাটোর আর পতিসর একসঙ্গে ঘুরে আসা যায়। নাটোরে থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। চাইলে পতিসর ডাকবাংলোয় থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। চাইলে এখান থেকে খুলনা মেইল বা তিতুমীর এক্সপ্রেসে চড়ে নাটোরেও ফিরে আসতে পারেন। যেভাবেই যান, হাতে সময় নিয়ে যাবেন, কারণ পতিসর ও নাটোর শহরে দেখার আছে অনেক কিছু।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G